১৮ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ১১:২৫:২৩ অপরাহ্ন


দুনিয়ার নারীদের সর্দার হজরত ফাতিমা (রা.)
ধর্ম ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৪
দুনিয়ার নারীদের সর্দার হজরত ফাতিমা (রা.) দুনিয়ার নারীদের সর্দার হজরত ফাতিমা (রা.)


নবীজির সবচেয়ে প্রিয় কন্যা ছিলেন হজরত ফাতিমা (রা.)। তিনি রসুলুল্লাহ (স.)-এর ১৮টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। যখন ওহি নাজিল হতে শুরু হয়, ফাতিমা (রা.)-এর বয়স তখন পাঁচ বছর। তিনি পবিত্র ঘরে ইসলামি পরিবেশে বড় হয়েছিলেন।

ফাতেমা (রা.) ছিলেন খাদিজা (রা.)-এর মেয়ে। মদিনায় হিজরতের পর হিজরি দ্বিতীয় সনে আলী (রা.)-এর সঙ্গে ফাতিমার বিয়ে হয়। সে সময় আলী (রা.)-এর সম্পদের মধ্যে ছিল শুধু একটি বর্ম। সেটি বিক্রি করে তিনি ফাতিমা (রা.)-এর মোহরানা আদায় করেছিলেন। আরবের প্রথা অনুযায়ী বিয়েতে কনের পক্ষ থেকে রসুল (স.) ও বর আলী (রা.) খুতবা দেন। আলী (রা.)-এর চাচা হামজা (রা.) দুটি বড় উট জবাই করে ওয়ালিমা করেছিলেন।

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর রসুল (স.) একটি গ্লাসের পানিতে কোরআনের কিছু আয়াত তিলাওয়াত করে তাতে ফুঁ দেন। সেই পানির কিছুটা তিনি বর-কনেকে পান করতে বলে বাকিটুকু দিয়ে অজু করেন। তারপর সে পানি তাদের দুজনের মাথায় ছিটিয়ে দিয়ে দোয়া করে বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাদের দুজনের মধ্যে বরকত দাও। হে আল্লাহ, তুমি তাদের দুজনকে কল্যাণ দাও।’

আলী (রা.)-এর আর্থিক অবস্থা সচ্ছল ছিল না। বাসা ছিল খুবই সাধারণ মানের। কোনো বিলাসিতা তো ছিলই না, সাহায্য করারও কেউ ছিল না। ফাতিমা (রা.) একাই সব কাজ করতেন। আলী (রা.) যতটুকু পারতেন, তাকে কাজে সাহায্য করতেন। তিনি সব সময় ফাতিমা (রা.)-এর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকতেন। কারণ, মক্কার জীবনে নানা প্রতিকূল অবস্থায় তিনি অপুষ্টির শিকার হয়েছিলেন। এতে তাঁর স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় ফাতিমা (রা.) রসুল (স.)-এর কাছে একজন দাস চেয়েছিলেন। 

রসুলুল্লাহ (স.) তখন বলেন, ‘তুমি যা চেয়েছ, তার চেয়ে ভালো কিছু কি আমি তোমাকে বলে দেব? জিবরাইল আমাকে শিখিয়ে দিয়েছেন, প্রতি নামাজের পর তুমি ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ আর ১০ বার আল্লাহু আকবার পড়বে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়বে।’ (বুখারি ও মুসলিম) 

এ পরিবার হিজরি তৃতীয় সনে আনন্দ-খুশিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। জন্ম নেন তাদের প্রথম সন্তান হাসান ইবনে আলী (রা.)। শিশু হাসানের বয়স যখন এক বছর, তখন ফাতিমা (রা.)-এর আরেক ছেলে হয়। এ শিশুর নাম রাখা হয় হুসাইন। 

অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের আনন্দঘন মুহূর্তে ১০ হাজার মুসলমানের মধ্যে ফাতিমা (রা.)-ও ছিলেন। মক্কায় পৌঁছে ফাতিমা (রা.)-এর স্মৃতিতে ভেসে উঠেছিল তার মায়ের কথা; মক্কার অধিবাসীরা তার বাবার সঙ্গে যে নির্মম আচরণ করেছিল, সেই ঘটনাগুলো; মনে পড়েছিল নিজের শৈশব-কৈশোরের নানা কথা। দুই মাস মক্কায় অবস্থান করে তারা মদিনায় ফিরে যান। 

হিজরি ১১ সনে সফর মাসে রসুল (স.) অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফাতিমা (রা.) রাত জেগে অসুস্থ বাবার সেবা করতেন। অসুস্থ অবস্থায় একদিন রসুল (স.) তার কানে কানে কিছু একটা বললে ফাতিমা (রা.) কেঁদে ফেলেন। কিছুক্ষণ পর কানে কানে আরেকটি কথা বলেন। সেই কথা শুনে ফাতিমা (রা.)-এর মুখে খুশির আভা ফুটে ওঠে। রসুল (স.)-এর ইন্তেকালের পর ফাতিমা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘সেদিন আপনার হাসি-কান্নার কারণ কী ছিল?’

 ফাতিমা (রা.) বলেন, “প্রথমবার রসুল (স.) বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাই আমি কেঁদেছিলাম।’ আর দ্বিতীয়বার তিনি বলেছিলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তুমিই প্রথম আমার সঙ্গে মিলিত হবে। আর তুমি হবে দুনিয়ার নারীদের সর্দার।’ এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম।”

একবার রসুল (স.) নামাজে সিজদা দিচ্ছেন। উকবা উটের পচাগলা নাড়িভুঁড়ি এনে তার পিঠের ওপর ফেলে দিল। দূর থেকে কুরাইশ নেতারা এ দৃশ্য দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিল। রসুল (স.) কিন্তু সিজদা থেকে উঠলেন না। খবরটি হজরত ফাতিমা (রা.) বিনতে রসুলুল্লাহ (স.)-এর কানে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছুটে যান তার বাবার কাছে। দারুণ মমতায় নিজ হাতে তার বাবার পিঠ থেকে ময়লা সরিয়ে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে দেন। 

রসুল (স.) বলেছেন, ‘পৃথিবীর নারীদের মধ্যে তোমাদের অনুসরণের জন্য মারিয়াম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট।’ (তিরমিজি)। রসুল (স.) ফাতিমা (রা.)-কে এত ভালোবাসতেন যে তিনি বলেছেন, ‘ফাতিমা আমার দেহের একটি অংশ। কেউ তাকে অসন্তুষ্ট করলে আমাকেই অসন্তুষ্ট করবে।’ রসুল (স.)-এর ইন্তেকালের ছয় মাস পর হিজরি ১১ সনের রমজান মাসে ফাতিমা (রা.) ইন্তেকাল করেন।