১৮ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ১১:২৪:১১ অপরাহ্ন


সাধনের কপাল খোলে আব্দুল জলিলের আশীর্বাদে
অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৪
সাধনের কপাল খোলে আব্দুল জলিলের আশীর্বাদে সাধনের কপাল খোলে আব্দুল জলিলের আশীর্বাদে


নওগাঁ জেলার রাজনৈতিক আঙ্গিনায় এক সময় ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ২০১৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার রাজনৈতিক যাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তিনি ধীরে ধীরে দলে এবং সরকারি কাজে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন।

কিন্তু এমপি মন্ত্রী হওয়ার পর বদলে যান সাধন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আত্মীয়স্বজন ও অনুগতদের দিয়ে রাজনৈতিক পদের বাণিজ্য করেন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। তার ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জেলার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও তিনি জড়িয়ে পড়েন। ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সরকারি কাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, পুকুর ও জমি দখল, চাঁদাবাজির মতো অপরাধের মাধ্যমে তিনি জেলার অপরাধজগতকে পরিচালনা করেন।

নওগাঁ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসী জানান, সাধনের উত্থান ঘটে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিলের হাত ধরে। ১৯৮৪ সালে সাধন নিজ এলাকা নিয়ামতপুরের হাজিনগর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন নওগাঁ শহরে থাকার মতো তার কোনো বাসাবাড়ি ছিল না। সাধন থাকতেন আব্দুল জলিলের গুদামঘরে। তখন আব্দুল জলিলের নওগাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল ও তার বাসার বাজার-সদাইর কাজ করতেন। আব্দুল জলিলের আশীর্বাদে সাধন প্রথমে হাজিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। পর্যায়ক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও পরে সাংগঠনিক সম্পাদক হন। 

আব্দুল জলিল বেঁচে থাকতেই তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৪ সালে আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর সাধন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। 

নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, সংসদ-সদস্য হওয়ার পর থেকেই সাধন বাবু সবকিছু নিয়ন্ত্রণে একটি পারিবারিক সিন্ডিকেট করে ফেলেন। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেননি। আমাকে জেলা কমিটি থেকে এবং চেম্বারের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেন। অনেকের ওপর অত্যাচার করেন কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি।

নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি খালেকুজ্জামান বলেন, ক্ষমতার প্রভাবে সাধন বাবু নিজের ভাই মনা মজুমদারকে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদারকে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং বড় মেয়ে কাবেরী মজুমদারকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি করেছিলেন। জেলার বিভিন্ন ইউপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্য করেন সাধন বাবু।

রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকজন অটো রাইস মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে সরকার পতনের আগ পর্যন্ত ধান চালের ক্রয়, সংগ্রহ, আমদানি মজুত-সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন সাধন নিজে ও তার ভাই মনা মজুমদার। ভারত থেকে চাল আমদানির বরাদ্দ পেতে ব্যবসায়ীরা মনার কাছে ধরনা দিতেন। এজন্য তাকে দিতে হতো মোটা অঙ্কের কমিশন। ধান চালের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহেও মনা মজুমদার ছিলেন শেষ কথা। গত কয়েক বছরে সাধনের ঘনিষ্ঠ নওগাঁ ও বগুড়ার কয়েকজন মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীকে একচেটিয়া আমদানির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সাধন ঘনিষ্ঠ বগুড়া, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডজনখানেক মিল মালিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন চালের মজুত ও বাজার।