২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:২৬:২৯ অপরাহ্ন


রাজশাহী নগরীর পাড়া-মহল্লায় মাদকের ছড়াছড়ি !
নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১১-২০২৪
রাজশাহী নগরীর পাড়া-মহল্লায় মাদকের ছড়াছড়ি ! রাজশাহী নগরীর পাড়া-মহল্লায় মাদকের ছড়াছড়ি !


গত ৫ আগস্ট ছাত্র/জনতার অভ্যুত্থানের পরে পুলিশের সংকট কাজে লাগিয়ে আবারও সারা রাজশাহীজুড়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক কারবারীরা। দেশের মাদকপ্রবণ এলাকার মধ্যে অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট রাজশাহী।

রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার প্রতিটি মাদক স্পটে হাতবাড়ালেই মিলছে ফেনসিডিল,মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজা, হেরোইন, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট। তবে দামি হলেও ব্যপক চাহিদা রয়েছে হেরোইন ও ফেনসিডিলের। অল্প পরিশ্রমে বেশি অর্থ কামানোর সুযোগ থাকায় অনেকেই মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।

যেসব এলাকায় মাদকের ব্যবসা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো, রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানা অঞ্চলে মধ্যে রয়েছে জাহাজঘাট, সাতবাড়িয়া, ডাসমারী স্কুল মোড় এলাকার জাকা, পালা। মালেকের মোড়ের মালেকের ছেলে, সুরাপানের মোড় ও চর-শ্যামপুর, মিজানের মোড় এলাকায় বড় মাপের মাদক-কারবারি থাকলেও রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। মতিহার থানার তালিকায় ২৭০ জন মাদক কারবারি দেখা যায় ২০২২ সালে বর্তমানে আরও নতুন নতুন মাদক-কারবারি বেড়েছে।

কাটাখালি থানা অঞ্চলে বড় বড় মাদক কারবারি রয়েছে যারা রিতি মতো ট্রাক, যাত্রীবাহি বাস, মাইক্রো, প্রাইভেটকার যোগে মাদকের বড়বড় চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করে থাকে। এছাড়া শ্যামপুর, বেলঘরিয়া, নওদাপাড়া, চৌমহিনি, টাংগন এসব এলাকায় ২৪ ঘন্টাই হাত বাড়ালে মেলে মাদক। রাজশাহী শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সি ব্যক্তি, তরুণ ও যুবকেরা দ্রুতগামী মোটরসাইকেল হাকিয়ে গিয়ে সেবন করছে মাদক।

অপরদিকে, মাদকের রাজধানী গোদাগাড়ী হতে কেটি কেজি হেরোইনের চালান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গোদাগাড়ী থানা অঞ্চলে অনেক বড় বড় মাদক কারবারি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যত্তম মাদক মাফিয়া, শীষ মোহাম্মদ ও তার ভাই হায়দার রাজশাহীতে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে। রাজশাহীতে থেকেই গোদাগাড়ীর মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে। সম্প্রতী হায়দারের গোদাগাড়ীর বিলাসবহুল বাড়ির বসত ঘরে কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের হেরোইন উদ্ধার হয়েছিলো। জানা গেছে, কিছুদিন পলাতক থাকার পর তারা এখন জামিনে মুক্ত আছে। এছাড়া চারঘাট থানা অঞ্চলে পুরোটাই ভাসছে মাদকে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা এসব মাদকদ্রব্য বিভিন্ন কৌশলে ট্রাক অথবা বাসে পৌঁছে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে। এরপর ভাগ ভাগ হয়ে বিভিন্ন খুচরা মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। মাদক সহজলভ্য হওয়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যরাও মাথা চাড়া দিয়েছে। তারা কথিত বড় ভাইদের আদেশে যেকোন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশই যুবক ও ধনী পরিবারের সন্তান।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, এসব মাদক ব্যবসায়ীরা নগরের বিভিন্ন থানার অসাধু কিছু পুলিশ সদস্যদের ছত্রছায়ায় ব্যবসা করে আসছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে এসব কারবার চালাচ্ছে। ইতিপূর্বেও এসব পুলিশ সদস্যদের একাধিক অভিযোগ উঠছে। কিছু পুলিশ সদস্যদের বদলি হলেও অনেকের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যদিও আরএমপির উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। কোন মাদক ব্যবসায়ী বা কোন পুলিশ সদস্য এর সাথে জড়িয়ে পড়ে তাহলে কোনভাবে ছাড় দেয়া হবে না।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, যারা পুলিশ কন্সটেবল থেকে এএসআই ও পরে পদোন্নতি পেয়ে এসআই হয়েছেন তারাই বেশি অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাবের মতো বড়ো বড় চালান ধরার চেষ্টা করতে পুলিশের প্রতি আহবান জানান তারা।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাবিনা বলেন, আমাদের নতুন পুলিশ কমিশনার স্যার আরএমপি’তে যোগদান করেই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। কোন মাদক ব্যবসায়ীকেই ছাড় দেয়া হবেনা। মাদক উদ্ধারে আরএমপির পুলিশের অভিযান চলছে। পর্যায়ক্রমে সকল মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে মাদক নিমূলে কোন ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।