রাজধানীর বনানীতে নয় বছরের এক শিশু পাশবিক কায়দায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল
এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে বনানী থানায় মামলা করা হয়েছে। তবে মামলার চারদিন পরও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি অভিযুক্তকে শনাক্ত করাও যায়নি। পুলিশ বলছে, আসামিকে চিহ্নিত করতে ওই এলাকার রাস্তাঘাটের সব সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৪ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির বাবা। মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ওই এলাকার সব সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিশুটি স্পষ্ট করে বলতে পারছে না ঘটনাটি কখন। কখনো বলছে রাতে, কখনো বলছে দিনের বেলায়। আসলে আমরা সবদিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্তে এগোচ্ছি।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগে কথা হচ্ছিল শয্যাশায়ী শিশুটির পাশে থাকা তার মায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, তারা থাকেন বনানী এলাকার একটি বস্তিতে। শিশুটির বাবা রিকশাচালক আর মা গৃহিণী। নয় বছরের মেয়েশিশুটি কিছুই করে না। ছয় মাস বয়সী তাদের আরেকটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
তিনি বলেন, ১২ অক্টোবর রাতে তাদের মেয়ে বাসা থেকে ঘুরতে বের হয়। ওই রাতে আর বাসায় ফেরেনি সে। এজন্য বাবা মা দুজনই তাকে সারারাত খোঁজাখুঁজি করেন। পরদিন বেলা ১১টার দিকে শিশুটি একাই ঘরে ফেরে। কোথায় গিয়েছিল জানতে চাইলেও তখন কিছুই বলেনি শিশুটি। পরে শিশুটিকে গোসল করাতে নিয়ে গেলে মা তার শরীরে রক্ত দেখেন। সেসময় মেয়েশিশুটিকে জিজ্ঞেস করলে সে সবকিছু বলতে থাকে মাকে।
শিশুটির বর্ণনার বরাত দিয়ে তার মা বলেন, আরেকটি মেয়ে শিশুর সঙ্গে যখন ও ঘুরছিলো, তখন এক ব্যক্তি একটি ব্যাগ পাহারা দিতে বলে তাদের দুজনকে। সেজন্য ২০ টাকাও দেয় তাদের। পরে ওই লোক ভুক্তভোগী শিশুটিকে বলে, ব্যাগসহ তাকে এগিয়ে দিতে। সেজন্য ২০০ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এক পর্যায়ে কৌশলে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে মেয়েটিকে নিয়ে যায়।
তবে সেটি কোন এলাকা তা বলতে পারেনি শিশুটি। শিশুটির মা জানান, সেখানে একটি ভাঙারির কারখানার পাশ দিয়ে লোকটি একটি বাড়ির তৃতীয় তলায় নিয়ে যায় মেয়েটিকে। সেখানে আটকে রেখে রাতে তাকে ধর্ষণ করে। সকালে ওই লোক যখন ঘুমিয়েছিল, তখন শিশুটি চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে দরজার সিটকিনি খুলে বেরিয়ে আসে। তবে তার কিছুক্ষণ পর ওই লোকও তাকে খুঁজতে খুঁজতে রাস্তায় চলে আসে এবং মেয়েটিকে খুঁজেও পায়। এরপর একটি বাসে উঠিয়ে দেয় শিশুটিকে।
শিশুটির মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার এইটুকু মেয়ে, এত বড় ক্ষতি করলো। আমি তারে (অভিযুক্ত) পাইলে নিজের হাতে বিচার করতাম।
ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের দায়িত্বরত এক নারী চিকিৎসক বলেন, ‘শিশুটির যৌনাঙ্গ ও মলদ্বার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেজন্য পেট দিয়ে মল বের হওয়ার রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কয়েকটি অস্ত্রোপচার করার পর ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ ঠিক করে মলদ্বার আগের জায়গায় করে দেওয়া হবে। তবে শিশুটি ট্রমার (মানসিক আঘাত) মধ্যে রয়েছে। ’