১৮ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ১১:২৪:৪২ অপরাহ্ন


অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নবীজি যা বলেছেন
ধর্ম ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৪
অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নবীজি যা বলেছেন অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নবীজি যা বলেছেন


সিন্ডিকেট করে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ানো ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়াকে। যেখানে সিন্ডিকেট, মজুতদারি, কালোবাজারিসহ অসংখ্য অপরাধমূলক কাজ ভূমিকা রাখে।

অধিক মুনাফার লোভে পড়ে পণ্য মজুত করে রাখা, বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা, লোক ঠকানো, প্রতারণা, পণ্যের দাম বাড়াতে দালালি ও কালোবাজারি করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। কারণ এসব কাজ মানুষকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনা থেকে বঞ্চিত করে, যা স্পষ্ট জুলুম ও সীমা লঙ্ঘন। 

এ বিষয়ে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (সংকট তৈরি করতে) খাদ্যশস্য গুদামজাত করে, সে গুনাহগার।’ (মুসলিম: ১৬০৫)   

তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাদ্যপণ্য মজুত রাখে, সে আল্লাহর দেওয়া নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে যায়।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ২০৩৯৬) 

পরকালে কঠিন শাস্তির পাশাপাশি দুনিয়াতেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীরা শাস্তির মুখে পড়তে হবে। রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দিয়ে শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ ২২৩৮) 

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে একবার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেল। লোকেরা বললো, ইয়া রসুলাল্লাহ, আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। 

রসুলুল্লাহ (স.) বললেন, মূলত আল্লাহ তাআলাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, রিজিক সংকীর্ণকারী, প্রশস্তকারী ও রিজিকদাতা। আমি আমার রবের সঙ্গে এভাবে সাক্ষাতের আশা রাখি যে, তোমাদের কারো যেন আমার বিরুদ্ধে রক্ত বা সম্পদ, কোনো বিষয়ে কোনোরূপ দাবি না থাকে। (তিরমিজি : ২৪৫)। 

হজরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মূল্য বৃদ্ধির অসদুদ্দেশ্যে মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপ করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে তাকে আগুনের পাহাড়ে উঠিয়ে শাস্তি দেবেন। (তাবরানি: ২১০)। 

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো শহরবাসী কোনো গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রি করবে না। মানুষকে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দাও, যেন আল্লাহতায়ালা তাদের একের মাধ্যমে অন্যের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। (তিরমিজি : ২৬১৮)। 

সব ধরনের মজুত নিষিদ্ধ নয়। যেমন অধিক পরিমাণে ফসল সংরক্ষণের জন্য মজুত করা জায়েজ। যেমন আলু, পেঁয়াজ, ধান ইত্যাদি মজুত করে রাখা হয়। কেননা এসবের উদ্দেশ্য বাজার নিয়ন্ত্রণ নয় বরং ফসল নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা এবং সারা বছর সরবরাহ বজায় রাখা।

 ব্যবসায় লাভের চিন্তা অবশ্যই থাকবে, তা ইসলামে নিষিদ্ধও নয়। তবে তা হতে হবে সৎভাবে, ন্যায্য উপায়ে, মানুষের কল্যাণচিন্তা মাথায় রেখে। কাউকে জিম্মি করে বা অজ্ঞতার সুযোগে বেশি লাভ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। 

কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি লাভ করার অপচেষ্টা একটি সামাজিক অপরাধ। সামাজিকভাবেই একে প্রতিরোধ করতে হবে। রাষ্ট্র বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন করতে পারে। প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করতে পারে, যেমনটা আমরা দেখতে পাই খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে।