০৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ০৬:৩৭:০১ অপরাহ্ন


জেগে উঠতে পারে ব্রিটেনের বিধ্বংসী পরমাণু অস্ত্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৭-২০২৪
জেগে উঠতে পারে ব্রিটেনের বিধ্বংসী পরমাণু অস্ত্র জেগে উঠতে পারে ব্রিটেনের বিধ্বংসী পরমাণু অস্ত্র


আপাতত ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে সাজো সাজো রব চলছে। চারশো পার করে ক্ষমতায় এসেছেন ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী, লেবার দলের নেতা কিয়ের স্টার্মার। এমনিতে দশ নম্বর লেখা কালো দরজার ওপারে প্রথমবার কোনও প্রধানমন্ত্রী ঢুকলে কর্মীরা সকলে সার দিয়ে দাঁড়ান। করতালি দিয়ে নয়া প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়। সেটাই রীতি। নয়া প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে আলাপ সারবেন। কিছু কাগজপত্রে প্রাথমিক সইসাবুদ হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের চাবিকাঠি। 

হলিউডের দুর্ধর্ষ স্পাই থ্রিলার ছবিতে এরকম দৃশ্য দেখে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু ওগুলো কি আদৌ সত্যি? নাকি সবটাই বানানো? ব্রিটিশ রাজনীতির কর্তারা কিন্তু বলছেন, সবটা কিন্তু বানানো নয়। ব্রিটেনের সমস্ত পরমাণু অস্ত্রই আদতে রয়েছে জলের তলায়! মজুত রয়েছে 'ভ্যানগার্ড' শ্রেণির চারটি ডুবোজাহাজে। যা চালায় ব্রিটেনের রাজকীয় নৌবাহিনী বা রয়্যাল নেভি। সূত্রের খবর, গ্লাসগোর কাছে ফাসলেনে নৌবাহিনীর 'ক্লাইড' ঘাঁটিতে এই চারটি ডুবোজাহাজকে রাখা হয়েছে। এদের পোশাকি নাম: ভ্যানগার্ড, ভিক্টোরিয়াস, ভিজিল্যান্ট ও ভেঞ্জেনস। প্রত্যেকটি ডুবোজাহাজে সর্বোচ্চ ষোলোটি করে মহাশক্তিধর পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র বোঝাই করা। 

এই চারটি ডূবোজাহাজের পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রকে 'সক্রিয়' করতেই দরকার লাগে একটি বিশেষ কোড। যাকে ব্রিটিশ রাজনীতির ভাষায় বলে, 'লেটার অফ লাস্ট রিসর্ট'। প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পরেই প্রতিরক্ষা-সচিব তাঁকে ওই পরমাণু অস্ত্রের বিধ্বংসী রূপ সম্পর্কে সচেতন করেন। তারপর অনুরোধ করেন, একইরকমের শেষ চারটি চিঠি লিখে দেওয়ার। প্রতিটি চিঠি পাঠানো হয় চারটি ডুবোজাহাজের শীর্ষ কর্তার কাছে। কিন্তু কী লেখা হয়, সেটা কেউ জানতে পারেন না। যদি কোনও শত্রুপক্ষের পরমাণু হামলায় ব্রিটিশ সরকারের পতন ঘটে, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীপরিষদের মৃত্যু হয়, তখনই একমাত্র এই কোড দেখতে পারেন ডুবোজাহাজের সেনাকর্তারা। যাতে দেওয়া থাকে পরবর্তী পদক্ষেপের নির্দেশ। যা মেনে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে বিধ্বংসী এই ক্ষেপণাস্ত্রের ভাণ্ডার। সেটিই হবে ব্রিটিশ রাজার শেষ সরকারি পদক্ষেপ। 

প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব শেষ হওয়ার পরে এই কোড না দেখেই নষ্ট করে দেওয়া হয়। নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে এসে নতুন কোড লিখে দেন। 

ব্রিটিশ প্রশাসনিক সূত্রে খবর, লন্ডনে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে চলছে কিনা, তা জানার জন্য প্রত্যেক 'ভ্যানগার্ড' সাবমেরিনের সেনাকর্তারা নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খুঁটিয়ে দেখেন। যার মধ্যে অন্যতম হল, বিবিসি রেডিও-৪ ঠিকমত সম্প্রচার হচ্ছে কিনা দেখা।

বিবিসি রেডিও-৪'এর অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হল 'টুডে'। বলা হয়, এটাই নাকি বিবিসির সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদ অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। ১৯৫৮ সাল থেকে চলা প্রত্যেকদিন সকাল ছ'টা থেকে ন'টা অবধি এই খবরের অনুষ্ঠানেই সারাদিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার 'আপডেট', রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, দিনের বাছাই খবর জানায় বিবিসি। ব্রিটিশ রাজনীতির রথীমহারথীরা অনেকেই সকালের চায়ের কাপ হাতে এই প্রোগ্রাম শুনে দিন শুরু করেন। ব্রিটেনের হাউস অফ লর্ডসের এক শীর্ষ সদস্য জানিয়েছেন, যদি একটানা তিনদিন 'টুডে' শোনা না যায়, ধরে নেওয়া হবে, ব্রিটেনের পতন ঘটেছে। তখনই সক্রিয় হয়ে উঠবে ডুবোজাহাজের কুখ্যাত পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র।

একটানা তিন দিন 'টুডে' শোনা না যাওয়ার ঘটনা হয়ত অকল্পনীয়। কিন্তু এরকম ঘটনা একবার সত্যিই ঘটেছিল। ২০০৪ সালে লোডশেডিং-এর জন্য বিবিসি রেডিও-৪ মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ায় হঠাৎই 'পরমাণু সতর্কতা' জারি হয়েছিল ডুবোজাহাজে।

যদিও, প্রায় প্রত্যেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীই একবাক্যে মেনেছেন, শুধুমাত্র শত্রুকে নিরস্ত করা ছাড়া পরমাণু অস্ত্রের কোনও আক্রমণাত্মক ব্যবহার তাঁরা কখনও করবেন না। করতেও দেবেন না।