২৮ জুন ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:২৯:১১ পূর্বাহ্ন


অবিশ্বাসীদের শাস্তি অবধারিত
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৬-২০২৪
অবিশ্বাসীদের শাস্তি অবধারিত ফাইল ফটো


সুরা মাআরিজ‌ কোরআনের ৭০তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৪৪, রুকু সংখ্যা ২। সুরা মাআরিজ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। মক্কার কাফেররা কেয়ামত, আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে বিদ্রূপ ও উপহাস করতো এবং নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই মর্মে চ্যালেঞ্জ করতো যে, তুমি সত্যবাদী হলে আল্লাহর আজাব নিয়ে এসো। সুরা মাআরিজে তাদের এ চ্যালেঞ্জের জবাব দেওয়া হয়েছে।

সুরা মাআরিজের আলোচ্যবিষয় কাফেরদের অবিশ্বাস, পরিণতি, আখেরাত, কেয়ামত, জাহান্নামের শাস্তি, মানুষের বিভিন্ন মন্দ স্বভাব, মুমিনদের উত্তম বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি।

সুরা মাআরিজের ১-১৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

(১)

سَأَلَ سَائِلٌ بِعَذَابٍ وَاقِعٍ

সাআলা সাইলুম বিআজাবিওঁ ওয়াকি’।

এক ব্যক্তি চাইল সংঘটিত হোক শাস্তি, যা অবধারিত

(২)

لِلْكَافِرِينَ لَيْسَ لَهُ دَافِعٌ

লিলকাফিরীনা লাইসা লাহূ দাফি’।

কাফিরদের জন্যে, এটা রোধ করতে পারে এমন কেউ নেই।

(৩)

مِنَ اللهِ ذِي الْمَعَارِجِ

মিনাল্লাহি যিল মাআরিজ।

এটা আসবে আল্লাহর নিকট হতে, যিনি সমুচ্চ মর্যাদার অধিকারী।

(৪)

تَعْرُجُ الْمَلائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ

তা‘রুজুল মালাইকাতু ওয়ার রূহু ইলাইহি ফী ইয়াওমিন কানা মিকদারুহূ খামসীনা আলফা সানাহ।

ফেরেশতা ও রূহ আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বৎসর।

(৫)

فَاصْبِرْ صَبْراً جَمِيلاً

ফাসবির সাবরান জামীলা।

সুতরাং তুমি ধৈর্য ধারণ কর, পরম ধৈর্য।

(৬)

إِنَّهُمْ يَرَوْنَهُ بَعِيداً

ইন্নাহুম ইয়ারাওনাহূ বা‘ঈদা।

তারা এই আজাবকে দূরের বিষয় মনে করে,

(৭)

وَنَرَاهُ قَرِيباً

ওয়া নারাহু কারীবা।

আর আমি একে আসন্ন দেখছি।

(৮)

يَوْمَ تَكُونُ السَّمَاءُ كَالْمُهْلِ

ইয়াওমা তাকূনুস সামাউ কালমুহল, ।

সেদিন আকাশ হবে গলিত রূপার মত,

(৯)

وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ

ওয়া তাকূনুল জিবালু কাল-ইহন।

পর্বতসমূহ হবে রঙিন পশমের মত,

(১০)

وَلا يَسْأَلُ حَمِيمٌ حَمِيماً

ওয়ালা ইয়াসআলু হামীমুন হামীমা।

এবং কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু অন্য বন্ধুকে জিজ্ঞেসও করবে না।

(১১)

يُبَصَّرُونَهُمْ يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يَفْتَدِي مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ بِبَنِيهِ

ইউবাসসারূনাহুম ইয়াওয়াদ্দুল মুজরিমু লাও ইয়াফতাদী মিন আজাবি ইয়াওমিইযিম বিবানীহ।

যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে। সেদিন গোনাহগার ব্যক্তি শাস্তির বদলে দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্ততিকে,

(১২)

وَصَاحِبَتِهِ وَأَخِيهِ

ওয়া সাহিবাতিহী ওয়া আখীহ।

এবং তার স্ত্রী ও ভাইকে

(১৩)

وَفَصِيلَتِهِ الَّتِي تُؤْوِيهِ

ওয়া ফাসীলাতিহিল্লাতী তু’বীহ।

তার গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত।

(১৪)

وَمَنْ فِي الْأَرْضِ جَمِيعاً ثُمَّ يُنْجِيهِ

ওয়া মান ফিল আরদি জামীআন সুম্মা ইউনজীহ।

এবং পৃথিবীর সকলকে, যাতে এই মুক্তিপণ তাকে মুক্তি দেয়।

(১৫)

كَلَّا إِنَّهَا لَظَى

কাল্লা ইন্নাহা লাজা।

কখনোই নয়। নিশ্চয় এটা লেলিহান অগ্নি।

(১৬)

نَزَّاعَةً لِلشَّوَى

নাঝঝাআতাল লিশশাওয়া।

যা চামড়া খসিয়ে দেবে।

(১৭)

تَدْعُو مَنْ أَدْبَرَ وَتَوَلَّى

তাদউ মান আদবারা ওয়া তাওয়াল্লা।

সে সেই ব্যক্তিকে ডাকবে যে সত্যের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল ও বিমুখ হয়েছিল।

(১৮)

وَجَمَعَ فَأَوْعَى

ওয়া জামাআ ফাআওআ।

সম্পদ পুঞ্জীভূত করেছিল, অতঃপর আগলে রেখেছিল।

এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:

১. আল্লাহর কাছে শাস্তি প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ। মুমিনদের কর্তব্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা।

২. আল্লাহর আনুগত্যের পথে বিপদ-আপদ এলে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে, হা-হুতাশ না করে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

৩. কেয়ামতের দিন অবিশ্বাসী ও অপরাধীরা পরিস্থিতির ভয়াবহতায় দিশেহারা হয়ে যাবে। নিজেদের অন্তরঙ্গ বন্ধু বান্ধবদের চোখের সামনে দেখেও তাদের সাথে কথা বলবে না। নিজের স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়দের মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে হলেও নিজে বাঁচতে চাইবে।

৪. সম্পদের হক আদায় না করে অর্থাৎ জাকাত না দিয়ে, আবশ্যিক দায়িত্বগুলো পালন না করে সম্পদ জমা অবিশ্বাসী কাফেরদের বৈশিষ্ট, গুনাহের কাজ ও জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।