০৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ০৭:০১:৫৬ পূর্বাহ্ন


অকালে জন্মানো শিশুদের বাঁচাতে ‘ক্যাঙারু কেয়ার !
সুমাইয়া তাবাস্সুম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৮-২০২৩
অকালে জন্মানো শিশুদের বাঁচাতে ‘ক্যাঙারু কেয়ার ! অকালে জন্মানো শিশুদের বাঁচাতে ‘ক্যাঙারু কেয়ার !


এ রাজ্যে নবজাতকদের প্রায় এক তৃতীয়াংশের জন্ম হয় নির্ধারিত সময়ের আগে। এই ধরনের শিশুদের ওজনও নির্ধারিত মাত্রা অর্থাৎ আড়াই কেজির কম হয়ে থাকে। ফলে জন্মের পরই এই সব শিশুদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। এই ধরনের ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের বিপদ মুক্ত করতে ‘ক্যাঙারু কেয়ার’ অনুশীলনে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

সম্প্রতি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই ব্যাপারে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞরা ক্যাঙারু কেয়ারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। ছিলেন কলকাতার সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও। ক্যাঙারু যেভাবে সদ্যজাত সন্তানকে কোলে বয়ে বেড়ায়, শিশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের আগে জন্মানো এবং কম ওজনের শিশুদের ক্ষেত্রেও মায়ের শরীরই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। এই ধরনের শিশুকে শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে রাখা এবং বুকের দুধ পান করানো গেলে সে সহজে অসুখবিসুখের মোকাবিলা করতে পারবে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে আগে এবং কম ওজনের শিশু জন্ম নেওয়ার পিছনে মায়েদের কিছু ব্যক্তিগত বিষয় বড় কারণ হিসাবে সামনে এসেছে। তারমধ্যে অন্যতম মায়ের জীবনযাত্রা, কম অথবা বেশি বয়সে গর্ভধারণ, সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসব এবং ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতি ব্যবহার।

সরকারি সূত্রের খবর, এখন নবজাতকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গর্ভাবস্থার পূর্ণ মেয়াদের আগে (প্রিটার্ম) এবং আডা়ই কেজির কম ওজনের হয়। সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের শিশুদের বোঝা অনেক বেশি। কারণ বেসরকারি নার্সিং হোমে আইভিএফ পদ্ধতি অনুসরণ করে গর্ভধারণের পর অনেক মা সরকারি হাসপাতালে প্রসবের জন্য ভর্তি হন। রাজ্য সরকারের ‘মা ও শিশুমৃত্যু হ্রাসের লক্ষ্যে তৈরি টাস্ক ফোর্সের সদস্য ডাঃ এ কে মল্লিকের কথায়, এই ধরনের শিশুদের জন্য মায়েদের বাড়তি যত্নবান হতে হবে।                                                       

তিনি জানান, রাজ্য সরকারের এখন বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমগুলিকেও ‘ক্যাঙারু কেয়ার’ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে চায়। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের প্রায় কুড়ি শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হয়। তাহলে রাজ্যে নবজাতকের মৃত্যুহার আরও অনেকটা কমবে।

ইতিমধ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এবং ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে এই ব্যাপারে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে,২০১১ সালে নব-জন্মের মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজার পিছু ২৪। এখন তা কমে ১৪-তে নেমে এসেছে। রাজ্য সরকার ও ইউনিসেফ যৌথভাবে আরও পরিকল্পনা নিচ্ছে এই সংখ্যা আরও কমাতে।

ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ বন্দনা ভাটিয়া বলেন, শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে তাকে মায়ের শরীরের সঙ্গে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে সে হামাগুড়ি দিয়ে বুকের কাছে স্তন্যপান শুরু করে। এর ফলে ত্বক থেকে ত্বকের যোগাযোগ নিশ্চত হয়। সেটাই শিশুর শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা অনুশীলনে দেখা গিয়েছে, এই ধরনের শিশুদের ইনকিউবেটরে রাখার পরিবর্তে মায়ের শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে রাখলেও চলে। আর তা ক্যাঙ্গারুর থলির মতো মায়ের বুকের ত্বক থেকে ত্বকের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংযোগের মাধ্যমে সম্ভব। এতে মায়ের সঙ্গে শিশুর বন্ধন বৃদ্ধি পায়, শিশু মায়ের উষ্ণতা পায়, খিদে বাড়ে এবং শরীর বিকশিত হয়।