২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০২:০৯:৩০ অপরাহ্ন


'ইনি ঘুমান না'
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৭-২০২৩
'ইনি ঘুমান না' থাইনক। ছবি: সংগৃহীত


সর্বশেষ ঘুমিয়েছিলেন ১৯৬২ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়। তারপর থেকে তাঁর চোখে আর ঘুম নেই। আজকের এই প্রতিবেদন এমনই এক লোকের কাহিনী; নাম তাঁর থাইনক। তাঁর জন্ম দক্ষিণ ভিয়েতনামে, তাঁর বয়স ৮০ বছরের উপরে। ঘটনাটি জানার পর অনেক সাংবাদিক তাঁর সাক্ষাত্‍কার নিয়েছিলেন, যার কারণে তিনি মোটামুটি একজন সেলিব্রিটি হয়ে যান।

এলাকার সবাই তাঁকে 'তিনি ঘুমান না' বলেই জানেন।

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, তিনি শেষবারের মতো কবে ঘুমিয়েছিলেন তাঁর নিজেরও সঠিক মনে নেই। না ঘুমানোর কারণ তিনি নিজেও জানেন না। লোকাল হসপিটালের ডাক্তারও নাকি তার এমন রোগের কারণ বের করতে পারেননি। তিনি বর্তমানে একদম ফিট আছেন স্বাস্থ্যের দিক থেকে। সারাদিন চাষাবাদের কাজ করেন, রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে, তখন তিনি বানান রাইস ওয়াইন, যা তার খুব প্রিয় পানীয়। প্রতিদিন তিনি প্রচুর পরিমাণে রাইস ওয়াইন পান আর ধূমপান করেন। কাজ করার সময় তিনিও ক্লান্ত হন, তাই রাতের একটা সময়ে তিনি ঘুমের জন্য বিছানায় শুয়ে থাকেন, এভাবে তিনি প্রতিদিনই ঘুমানোর চেষ্টা করেন।

ঘুমের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, তিনি ঘুমাতে চান কিন্তু ঘুমাতে পারেন না। এটা এখন তার এবং তার পরিবারের কাছে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। এভাবে দিনের পর দিন মোটামুটি না ঘুমিয়ে কেটে যাচ্ছে তার জীবন, এমনটাই দাবী তাঁর এবং তাঁর পরিবারের।

কিন্তু না ঘুমিয়ে এতদিন কী বেঁচে থাকা সম্ভব? চলুন দেখি মেডিক্যাল সাইন্স কি বলছে - শরীরের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুম অপরিহার্য। অনেক সময় সিলেবাস শেষ না হওয়ার কারণে পরীক্ষার আগের সারারাত জেগে পড়তে হয় আমাদের অনেকেরই। কিন্তু এভাবে কয়দিন, কয়রাত টানা জেগে থাকা সম্ভব! গ্ৰিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে বেশি সময় জেগে থাকার রেকর্ড রেন্ডি গার্ভনার নামক ব্যক্তির। ১৯৬৪ সালে ১৭ বছর বয়সে তিনি টানা ২৬৪ ঘন্টা বা ১১ দিন জেগে ছিলেন। তবে, ঘটনাটি অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছিল। যিনি তার স্বাস্থ্যের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তাঁর মতে পরীক্ষাটির শেষের দিকে রেন্ডি গার্ভনারের মধ্যে জ্ঞান ও আচার-আচরণ ভিত্তিক মারাত্মক কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন - মনোযোগহীনতা, শর্ট র্টাম মেমোরি, প্যারানইয়া, হ্যালুসিয়েশন ইত্যাদি।

ধরেন এই এমন পরীক্ষার পরে আরও অনেকেই করেছেন যার অফিসিয়ালি রেকর্ড করা হয় নি। কিন্তু তার ফলাফল আর বর জোর কতই হবে; এই ১১ দিনের আশেপাশেই। আচ্ছা যান ধরে নিলাম ১ মাস, তাই বলে কি ৬১ বছর! এক ধরণের বিরল জেনেটিক রোগ আছে যার নাম Fatal Familial Insomnia। এ রোগে অনিদ্রার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং এক সময় ওজন কমে যায়। হ্যালুসিয়েশন হয়, স্মৃতিভ্রম হয় এবং শেষ পরিণতি হয় মৃত্যু। ভয়ের কোনও কারণ নেই এটি একটি বিরল রোগ। পৃথিবীতে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি ডকুমেন্টেড কেসই আছে এই রোগের। এই রোগেরও লক্ষণ দেখা দেওয়ার শুরু থেকে শেষ পরিণতি পর্যন্ত সময় গড়ে মোটামুটি ৭ মাস থেকে ৩ বছর।

থাইনকের এই না ঘুমানোর ঘটনাটি এখনও পর্যন্ত মেডিক্যালে এস্টাবলিস না। তবে, অনেক সা‌ংবাদিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য তার সাথে কিছু দিন থেকেছেন এবং তাদের মধ্যে তারা নাকি তাকে ঘুমাতে দেখেননি। কিছু গবেষক বিশ্বাস করেন যে, তাঁর ঘুমের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অনেক কম, কিন্তু তাই বলে তিনি একেবারে ঘুমান না, তেমনটা সম্ভব না।

প্রকৃতিতে এমন অনেক ঘটনাই আছে যার ব্যাখ্যা অনেক সময় খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু থাইনকের এই ঘটনাটি সেসব ব্যাখ্যাকৃত ঘটনাগুলোর একটি কি না সে ব্যাপারে আজও পুরোপুরি জানা যায়নি।