০৫ মে ২০২৪, রবিবার, ১২:০৪:০৭ পূর্বাহ্ন


তিন বছরে নাটোরের দুই চিনিকলে ১৬৪ কোটি লোকসান
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২২
তিন বছরে নাটোরের দুই চিনিকলে ১৬৪ কোটি লোকসান তিন বছরে নাটোরের দুই চিনিকলে ১৬৪ কোটি লোকসান


নাটোর জেলায় ‘নাটোর সুগার মিল’ এবং ‘নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল’ নামে রাষ্ট্রয়ত্ত দুটি চিনিকল লোকসান গুনছে। উৎপাদন ও টাকা ঠিকমতো পরিশোধ না করায় চিনিকল দুটি লোকসানে পড়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার দুটি চিনিকলে চাহিদার চেয়ে প্রতিবছর দ্বিগুণের বেশি আখ উৎপাদন হলেও কলগুলো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পেরে ২০১২ সালের পর থেকে জেলা দুটি চিনিকল টানা লোকসান গুনছে। শুধু কৃষকদের আখ সরবরাহের ওপর নাটোর চিনিকল নির্ভরশীল হলেও উল্টো চিত্র নর্থবেঙ্গল চিনিকলের।

নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের নিজস্ব ৫ হাজার একর জমি থাকলেও মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে না। উল্টো গত তিন বছরে দুটি চিনিকল ১৬৪ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে।

স্থানীয় কৃষিবিভাগ জানায়, নাটোর জেলায় ২০২০-২০২১ সালে ১৮ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৩০ টন এবং  ২০২১-২০২২ সালে ১৬ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৭০ টন আখ উৎপাদন হয়। আর ২০২২-২০২৩ সালে  ১৪ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৯২ টন আখ উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকদের অভিযোগ, আবহাওয়া উপযোগী আখের জাত না আসায় আগের চেয়ে আখের ফলন কমেছে। কয়েক বছর আগে চিনিকল দুটি অক্টোবর থেকে আখ মাড়াই করলেও এখন ডিসেম্বরে মাড়াই শুরু হয়। এর ফলে ফসলবঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। এ ছাড়া চিনিকলগুলো দ্রুত টাকা না দেয়ার ফলে আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আধুনিক জাতের আখের স্বল্পতার পাশাপাশি অন্য আবাদে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা আখ উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

নাটোর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, কৃষকরা চিনিকলের পরিবর্তে গুড় উৎপাদনকারীদের আখ সরবরাহ করায় এই পরিস্থিতি হয়েছে। বর্তমানে তাদের পক্ষ থেকে সার ও কৃষি ঋণ দিয়ে শুধু নাটোর চিনিকলে আখ সরবরাহ করতে চার হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ বাড়ানো হয়েছে। আগামী মৌসুম থেকে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলে আগামী তিন বছরের মধ্যে নাটোর চিনিকল লাভের মুখ দেখবে।

নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল আজম বলেন, তাদের নিজস্ব ৫ হাজার একর জমিতে আবাদ করতে ফার্মগুলো লোকসান গুনতে। সেই লোকসান কমিয়ে আনা হয়েছে।

আনিসুল আজমের দাবি, ১০ বছর আগে প্রতি ১০০ কেজি আখ থেকে সাড়ে ৭ কেজি থেকে ৮ কেজি চিনি উৎপাদন হতো। বর্তমানে প্রতি ১০০ কেজি আখ থেকে ৬ কেজি থেকে সাড়ে ৬ কেজি চিনি উৎপাদন হয়। চিনির উৎপাদন কমে আসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের লুটপাটের কারণে লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। গত ২৫ নভেম্বর নর্থ বেঙ্গল চিনিকল উদ্বোধন করতে এসে শিল্প প্রতিমন্ত্রী এই দাবি করেন। তিনি লুটপাট বন্ধসহ অতিরিক্ত শ্রমিক কর্মচারী প্রত্যাহার এবং মানসম্পন্ন আখ উৎপাদনের নির্দেশ দেন।

দুটি চিনিকল চলতি মাড়াই মৌসুমে দুই লাখ ২০ হাজার টন আখ মাড়াই করে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।