ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেছেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে তিন ফসলি, দো—ফসলি জমি অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি এক ফসলি জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা হলেও সরকারের অনুমতি নিতে হবে। অথচো এমন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ মানছেন না কেউ। রাজশাহীর পবায় হাজার হাজার একর তিন ও দুই ফসলি জমি বিলিন করে সেখানে পুকুর খনন করা হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ গাঙ্গোপাড়ার বালু মহাল ইজারা নিয়েছেন মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজের মালিক মুখলেসুর রহমান মুকুল। তার লোকজন গোদাগাড়ী উপজেলার বালুমহাল চালু করতে প্রায় ২০ বিঘা কৃষি জমির কাচা ধান কেটে সাবাড় করেছেন। কিন্তু ইজারায় ৭ ও ১০ নং শর্তে বলা আছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তার ক্ষতি করে বালু মজুত করা যাবে না। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করেই কার্যক্রম চলাচ্ছেন তিনি। সেখানে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন প্রকল্পের কৃষি জমিতে পানি সরবরাহের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায়ে সেচ প্রকল্প রয়েছে। সরকারী অর্থ ব্যায়ে প্রকল্পটিও এখন অকেজো হতে চলেছে। এছাড়াও শর্তভঙ্গ করে ১২০টাকার টোল ৫০০ টাকা আদায় করছে ইজারাদারের নিয়োগকৃত কর্মচারী।
এ ব্যপারে সচেতন মহাল বলছেন, দেশে সকল অনিয়মের বিষয়েই আইন আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের উদাসিনতা আর এভাবশালীদের হস্তক্ষেপ থাকায় আইন উপেক্ষা করেই চলছে অনিয়ম। তারা আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তারা প্রভাবশালীদের তদবিরের কারনে ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকছেন।
জানতে চাইলে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন সহকারী প্রকোশলী মোঃ আব্দুল লতিফ বলেন, ধান কাটার বিষয়টি আমি অবগত। তবে এই বিষয়টি আমাদের অফিস সংশ্লিষ্ট নহে। আপনারা কৃষি অধিদপ্তর বা ইউএনও কে জানান। তবে সেখানে আমাদের পাইপ লাইন ছিলো। আমরা সেই পাইপ লাইন ইতিমধ্যেই সরিয়ে নিয়েছি। তবে ক্ষয় ক্ষতির বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, ২০ বিঘার জমিতে কাঁচা ধান কেটে ফেলা হয়েছে। হয়তো আর ১০—১২ দিন অপেক্ষা করলে ধান গুলো পেকে যেত। বিষয়টি শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ না দেয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। কৃষি মন্ত্রির নির্দেশের বিষয়টি অবগত করা হলে, তিনি বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিব বলেই ফোন কেটে দেন।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী সহকারী (ভূমি) মোঃ জাহিদ হাসান বলেন, চুক্তি অনুচ্ছেদে যে ভাবে উল্লেখ করা আছে। সে ভাবেই কাজ করতে হবে। আইনের বাইরে কোন কিছু করার সুযোগ নাই।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, কোন আইনের ভাইলেশন হয়, কোন শর্তের ভাইলেশন হয়। তাহলে আমরা সঠিক ব্যবস্থা নিব।
জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম আহমেদ বলেন, অবৈধভাবে কাউকেই বালু উত্তোলন অথবা মজুত করতে দেয়া হবে না। এক কথাই বলতে চাই, আইনের উর্দ্ধে কেউ নয়। আইন যিনিই ভঙ্গ করবেন। তার বিরুদ্ধেই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, গতমাসের (২৯ এপ্রিল) রংপুর নগরীর সার্কিট হাউসে গার্ড অব অনার শেষে সাংবাদিকদের ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, দেশে কৃষি জমি নষ্ট করা যাবে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে তিন ফসলি, দো—ফসলি জমি অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না। কৃষি জমি নষ্ট না করে জনসংখ্যা অনুপাতে খাদ্যের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে এক ফসলি জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা হলেও সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এ জন্য দেশের মানুষ ও জমির মালিকদের সচেতন হতে হবে। মন্ত্রী বলেন, এক শতক জমি নষ্ট করা যাবে না। যদি মানুষ জমি নষ্ট না করে জমিতে চাষ করে, তাহলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। অথচো এমন নির্দেশ মানছেন না কেউ।