২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৩:০৬:৪০ পূর্বাহ্ন


শেষ মুহূর্তের গোলে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
ক্রীড়া ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০২-২০২৪
শেষ মুহূর্তের গোলে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ ছবি: সংগৃহীত


একের পর এক সুযোগ মিসের মহড়ায় আক্ষেপের গল্প লিখতে চলেছিল বাংলাদেশ। ৮৭ মিনিটে দারুণ সুযোগ নষ্ট করায় আক্ষেপটা বেশি হওয়ার কথা সাগরিকার। তবে অধিনায়ক আফিদার কল্যাণে যোগ করা সময়ে জ্বলে উঠে সব হতাশা দূর করেছেন তিনি।

সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তাতে টানা দুই জয়ে আসরের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। 

গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ১০-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। জোড়া হ্যাটট্রিক করা শিবানি দেবী ও পূজারা তাই আতঙ্ক ছিলেন আফিদাদের জন্যেও। তবে মাঠের লড়াইয়ে সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যদের চোখে-মুখে ধরা পড়েনি কোনো ভয়। বরং তাদের শরীরী ভাষায় ছিল আগ্রাসন। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলেছে ভারতের মেয়েরাও। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে একে অপরের অর্ধে হানা দিয়েছিল। কিন্তু দুদলের রক্ষণ নৈপুণ্যতায় জালে জড়ায়নি কোনো বল। 

প্রথমার্ধে লড়াইটা সমানে সমান হলেও, দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তবে ভারতের রক্ষণ দেয়ালে বাধা পড়েছে আফিদাদের বেশিরভাগ আক্রমণ। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে গেলেও প্রতিপক্ষের রক্ষণদেয়ালে বাধা পড়ে প্রবেশ করা যাচ্ছিল না বক্সে। যা কয়েকবার প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছিল, সেটাও থ্রো-ইন ও কর্নারের কল্যাণে।

অনেকগুলো চেষ্টা বৃথায় যাওয়ার পর ৭২তম মিনিটের কর্নার থেকে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। স্বপ্না রানীর দারুণ ক্রস প্রায় গোলবারেই ঢুকেপড়ছিল। কোনোরকম ঠেকিয়ে দেন ভারতের গোলরক্ষক অনিকা দেবী। তবে তিনি পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি। অল্পের জন্য সে বলের নাগাল পাননি আফিদা। অরক্ষিত থাকা আফিদা বলের নাগাল পেলেই গোল পেয়ে যেত বাংলাদেশ। 

এর ৯ মিনিট পর উল্টো গোল হজম করতে বসেছিল টিটুর শিষ্যরা। কিন্তু শিবানিদের আক্রমণ বক্সে গিয়ে জটলার মধ্যে হারিয়ে যায়। ৮৩তম মিনিটে আরও একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ডানপ্রান্ত থেকে স্বপ্নার ফ্রিক কিক গোলবারের সামনে পেয়ে হেডও নেন সুরমা জান্নাত। তবে ভাগ্য সহায় ছিল না টিটুর শিষ্যদের। সে বল একবার লাফিয়ে চলে যায় অনিকার গ্লাভসে। এর চার মিনিট পর বাংলাদেশকে হতাশার সাগরে ডোবান ফরোয়ার্ড সাগরিকা। ভারত গোলরক্ষকের ভুল পাস বক্সের বাইরে পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সে বল দখলে নিয়ে বিনা বাধায় তিনি ঢুকে পড়েন বক্সে। কিন্তু পারেননি কাঙ্ক্ষিত শটটি নিতে। তার নিচু শট এগিয়ে এসে ঠেকিয়ে দেন ভারত অনিকা। তাতে সুযোগ মিসের মহড়ায় আক্ষেপের গল্প লিখেই মাঠ ছাড়তে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। 

নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষেও গোলশূন্য থাকায় ম্যাচ এগোচ্ছিল ড্রয়ের পথে। কিন্তু যোগ করা সময়ে আলোর দিশারি হয়ে হাজির হন অধিনায়ক আফিদা। নিজেদের অর্ধ থেকে তার দূরপাল্লার শট অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় প্রতিপক্ষের বক্স থেকে কিছুটা দূরে পেয়ে যান সাগরিকা। দ্রুত বল নিয়ে ছুটে ঢুকে পড়েন বক্সে। এবার আর অনিকার কাছে পরাস্ত হননি সাগরিকা। নিঁখুত শটে ঠিকানা খুঁজে নিয়ে তিনি আনন্দে ভাসান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী কামাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে থাকা সমর্থকদের। ১-০ গোলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে টিটুর শিষ্যরা। 

গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানের জয়েও জোড়া গোল করে অবদান রেখেছিলেন সাগরিকা। এদিকে টানা দুই জয়ে সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। 

দিনের আরেক ম্যাচে ভুটানকে ১-০ গোলে হারিয়ে আশা টিকিয়ে রেখেছে নেপাল। ফাইনালে যেতে হলে অবশ্য শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই তাদের। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় অনিকারা হার এড়ালেই নিশ্চিত করবে ফাইনাল।