জোহানেসবার্গে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে কম রান করে জয়ের রেকর্ড দক্ষিণ আফ্রিকার। ওয়ান্ডারার্স পার্কে ১৪৯ রান করেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল তারা। বাংলাদেশের সমর্থকরা হয়তো তেমন কিছুর দুরাশা করছিলেন প্রথম ইনিংস শেষে। কিন্তু রোববার (২০ মার্চ) তামিম ইকবালের দল পারল না হ্যান্সি ক্রোনিয়ের দল হয়ে উঠতে। তাই বাংলাদেশের স্বল্প পুঁজি দক্ষিণ আফ্রিকা পেরিয়ে গেল সহজেই। তাতে সিরিজ নিশ্চিত করার ম্যাচে উল্টো বড় হারের স্বাদ পেল টাইগাররা। জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় ৭ উইকেটে।
নিজেদের পয়া ভেন্যুতে আজ দক্ষিণ আফ্রিকা নামে গোলাপি জার্সিতে। মাঠ ও জার্সি বদলে যেন বদলে গেল প্রোটিয়া দলও। ওয়ান্ডারার্স পার্কের বাউন্সি উইকেট কাজে লাগিয়ে এদিন জ্বলে উঠলেন রাবাদা-এনগিডিরা। তাতে বাংলাদেশের শুরুটা হলো দুঃস্বপ্নের মতো। বার্থডে বয় তামিম ইকবালকে দিয়ে শুরু হওয়া বিপর্যয়ে মাত্র ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে ৩০০ পার করা বাংলাদেশ তখন ১০০ রানের নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কায়। তবে আফিফ-রিয়াদের ৬০ রানের জুটিতে বাংলাদেশ সে শঙ্কা কাটায়।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি আফিফ হোসাইনের ব্যাটিং। সম্ভাবনাময় এই ব্যাটারকে বাংলাদেশ দল ব্যবহার করছে শেষ দিকে ঝড় তোলার কাজে। তাতে যে আফিফের ব্যাটিং প্রতিভার অপচয় হচ্ছে তার প্রমাণ আজকের ব্যাটিং। বাউন্সি উইকেটে স্বচ্ছন্দ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে আজ উদ্ধার করেছেন লজ্জার হাত থেকে। রিয়াদ ও মিরাজের সঙ্গে দুটি জুটিতে আফিফ বাংলাদেশকে পার করে দেন ১৫০ রানের হার্ডলস। শেষ পর্যন্ত ১০৭ বলে ৭২ রান করেন আফিফ। তার ইনিংসটিতে ছিল ৮টি চারের মার।
আফিফ ছাড়াও আজ বলার মত রান করেছেন গত ম্যাচে ১৯ রানের ক্যামিও খেলা মিরাজ ও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৪৯ বলে ১ চার ও ২ ছয়ে ৩৮ রান করেন মিরাজ। মালানের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২৫ রান করেন রিয়াদ।
আফিফ-মিরাজের ব্যাটে বাংলাদেশের ইনিংস ২০০ পার হওয়া সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু প্রথম স্পেলে ৮ ওভার বল করা রাবাদা তার শেষ ওভারে বাংলাদেশের শেষ আশাটুকুও গুড়িয়ে দেন। এক ওভারেই আফিফ-মিরাজকে আউট করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন। এ নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দুবার পাঁচ উইকেট পেলেন প্রোটিয়া পেসার। দুবারই বাংলাদেশের বিপক্ষে।
আফিফ -মিরাজ ফিরলে বাংলাদেশের রানের গতি থেমে যায় একবারে। শেষ চার ওভারে আরও এক উইকেট হারানো বাংলাদেশ যোগ করতে পারে আর মাত্র ১৩ রান। তাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ১৯৪ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে রাবাদা নেন ৫ উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন এনগিডি, পারনেল, ডুসেন ও তাব্রেইজ শামসি।
জবাব দিতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দারুণ সূচনা এনে দেন আগের ম্যাচে দলের বাহিরে থাকা ডি কক। ইয়ানেমান মালানের সঙ্গে জুটিতে ১২ ওভার ২ বলেই ৮৬ রান তুলে বাংলাদেশকে লড়াই থেকে ছিটকে দেন। ২৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। অন্যদিকে মালান খেলছিলেন দেখেশুনে।
বাংলাদেশকে প্রথম 'ব্রেকথ্রু' এনে দেন আগের ম্যাচে ৪ উইকেট পাওয়া মেহেদী মিরাজ। ৪০ বলে ২৬ রান করা মালানকে বোল্ড আউট করে মাঠছাড়া করেন তিনি।
মালানের পর ডি ককও আর বেশিক্ষণ টিকেননি। হাফ সেঞ্চুরির পর আরও ১৫ বল খেলে ১২ রান যোগ করেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন ডি কক। তাকে ফেরান আগের ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ সাকিব আল হাসান। ৯ চার ও ২ ছয়ে ৬২ রান করে বাউন্ডারিতে ধরা পরেন তিনি। তার ক্যাচটি যেভাবে ধরলেন আফিফ, তা বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জন্য বিরল দৃশ্য। বাউন্ডারি লাইনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ মুঠোবন্দী করতে গিয়ে আফিফ পার হয়ে যাচ্ছিলেন বাউন্ডারি লাইন। তাই বল উপরে ছুঁড়ে দিয়ে ফের মাঠে ঢুকে ধরেন নিজের ছুঁড়ে দেওয়া বল।
দ্রুত দুই উইকেট তুলে নেওয়ার পর সমর্থকদের মনে হয়তো আশা করেছিল মিরাকল ঘটিয়ে কিছু একটা করে বসবে বাংলাদেশ। কিন্তু সে আশায় জল ঢেলে দেন অধিনায়ক বাভুমা ও কাইল ভেরেইন্নে। দুজনের জুটিতে ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে থাকে বাংলাদেশ। দুজনে মিলে ১৭ ওভারে যোগ করেন ৮২ রান। অধিনায়ক বাভুমাকে ফিরিয়ে সে জুটি যখন ভাঙলেন আফিফ, তখন দক্ষিণ আফ্রিকা জয় থেকে মাত্র ১৮ রান দূরে।
বাভুমা ৩৭ রান করে ফিরলেও, হাফ সেঞ্চুরি করেন দলে ফেরা কাইল ভেরেইন্নে। জয়ের জন্য বাকি পথটুকু পাড়ি দিতে বেশি বেগ পেতে হয় নি আর। ডুসেনকে নিয়ে ৭৬ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর ফেলেন ভেরেইন্নে।
আগের ম্যাচে দারুণ বল করা তাসকিন আহমেদের উপর দিয়ে আজ ঝড় বইয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটাররা।প্রোটিয়াদের ইনিংসের ৫টি ছক্কার ৪টিই মারা হয়েছে তাসকিনের বলে। ৪ ওভার বল করে তাসকিন দিয়েছেন ৪১ রান। এমন ম্যাচেও দুর্দান্ত বল করেছেন সাকিব আল হাসান। ২টি মেডেন ওভারসহ ১০ ওভারে মাত্র ৩৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ডি ককের উইকেটটি।
এছাড়াও একটি করে উইকেট নিয়েছেন মিরাজ ও আফিফ।
স্কোরকার্ড:
বাংলাদেশ ১৯৪/৯ (৫০ ওভার)
আফিফ ৭২, মিরাজ ৩৮, রিয়াদ ২৫;
রাবাদা ৫/৩৯;
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৫/৩ (৩৭.২ ওভার)
ডি কক ৬১, ভেরেইন ৫৮*, বাভুমা ৩৭;
সাকিব ১/৩৩, আফিফ ১৫/১, মিরাজ ১/৫৬।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী।
রাজশাহীর সময়/এএইচ