ফারহানা জেরিন এলমা: আমরা সুস্থ জীবন যাপনের জন্য নানান ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এটা কি জানা আছে কারো যে কিছু পুষ্টিকর খাবারের হতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। এমনকি কখনো কখনো তা মৃত্যুর কারণও হয়ে উঠতে পারে। তাই আমাদের একটু সতর্ক থাকতেই হচ্ছে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে এবং সেটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।
চলুন জেনে নেয়া যাক তেমনই কিছু খাবার সম্পর্কে:
মাশরুম: বিশ্বের অনেক দেশেই এটিকে একটি জনপ্রিয় খাবার হিসেবে ধরা হয়। এর হাজার রকমের জাত রয়েছে। শুধুমাত্র উত্তর আমেরিকাতেই মাশরুমের ১০ হাজারের বেশি প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়। আর বাংলাদেশে চাষ হয় ৮-১০টি জাতের। এর যেমন নানান পুষ্টিগুণ রয়েছে তেমনি এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন উপকারী দিক গুলো হলো টিউমার কোষের বিরুদ্ধে এটি ভূমিকা রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ কমায়, বাত-ব্যথার মতো রোগের জন্য উপকারী বলে বিজ্ঞানীরা গবেষণায় পেয়েছেন।
এটিকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে চাইলে একটু সতর্ক থাকতেই হচ্ছে কারণ ২০ শতাংশই মানুষকে অসুস্থ করে দিতে পারে। আর শতকরা এক ভাগ তাৎক্ষণিকভাবে মানুষকে মেরেও ফেলতে পারে। বিশেষ করে বুনো মাশরুম, যা অনেক সময় শরীরের জন্য বিষাক্ত ও ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হতে পারে।
বিষ ফল:
এর গন্ধ বেশ দারুণ। দেখতেও চমৎকার। এলডার বেরি বা আঙুর দিয়ে সাধারণত সিরাপ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এর দ্বারা নানান খাবার তৈরি করা হয়। যেমন জ্যাম, চাটনি,পাই বা কেকের সিজনিং, লিকারও তৈরি হয় এই ফল দিয়ে। তবে এটিকে ভালো ভাবে রান্না করা না হলে ঘটতে পারে বিপদ। এই ফলের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের বিষ। ফলটি পাকার আগে গ্রহন করলে মৃত্যু অবধারিত।শুধু তাই নয় এল্ডার বেরির পাতা এবং ডালে থাকে সায়ানাইড বিষ। এটি কোন উপায়ে যদি পেটে যায় তবে সে ক্ষেত্রেও মৃত্যু অবধারিত।
কাঁচা মধু:
মধু সম্পর্কে আমাদের মধ্যে একটি প্রচলিত একটি ধারনা হচ্ছে এটি আামাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী এক খাবার । আবার আমরা অনেকেই মৌমাছির চাক ভাঙ্গা থেকে তাজা মধু গ্রহন করতে পছন্দ করি। তবে এ বিষয়টি নিয়ে খাদ্য বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছে ভিন্ন বার্তা, মধুর মধ্যে থাকতে পারে অনেক বিষাক্ত উপাদান। যার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কেননা তাই পাস্তুরায়িত বিহীন কাঁচা মধু শরীরের জন্য হতে পারে অনেক বড় একটি ক্ষতির কারণ। এছাড়া এমন মধু খাওয়ার ফলে ঘোর ঘোর ভাব আসা, দুর্বল লাগা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি করার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী কাঁচা মধু না খেয়ে সেটা প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ার দেন। বিশেষ করে মধুর ভেতর যেন মৌমাছির চাকের বা মৌমাছির কোন অংশ না থাকে নিশ্চিত করতে হবে।
খেসারি ডাল:
বাংলাদেশে মসুর ও মুগডালের পাশাপাশি অনেকের খাদ্য তালিকায় খেসারি ডালও থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডালে বোয়া নামের এক প্রকার অ্যালানাইন অ্যামিনো অ্যাসিড থাকার সম্ভাবনা রয়েছে , যার দ্বারা বিষাক্ত নিউরোটক্সিন তৈরি হয় । এ রোগের লক্ষণ অনেক সময় শরীরে হঠাৎ করে দেখা দেয় 'নিউরো-ল্যাথারিজম' বা স্নায়ুবিক এটা এতটাই মারাত্মক যে পঙ্গুতা তৈরি করতে পারে। বেশিদিন ধরে খেসারির ডাল খাওয়ার ফলে হাঁটায় অসুবিধা এবং অসহ্য যন্ত্রণা হওয়ার পাশাপাশি পা অবশও হতে পারে।
ক্যাস্টর অয়েল:
বিভিন্ন ধরণের চকলেট ও অন্যান্য খাদ্যে ব্যবহার করা হয় রেড়ির তেল । এর বীচিতে রিচিন নামক বিষ থাকে। এই বীজ সংগ্রহকারীদের মধ্যে দেখা দিতে পারে মারাত্মক ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যেখানে এর চারটি বীজ খেলে একটি ঘোরা মারা যায় সেখানে একটি খেলেই একজন মানুষের মৃত্যু হয়। আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা প্রতিদিন কিছুটা হলেও ক্যাস্টর অয়েল খেয়ে থাকেন এবং বাচ্চাদেরকেও খাওয়াতে জোর করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে বলা যায় আমরা ভাগ্যবান,কেননা আমরা যে ক্যাস্টর অয়েল কিনি তা ভালোভাবে প্রস্তুত করা থাকে।
রাজশাহীর সময় / এফ কে