০২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ১২:৩০:৫৩ অপরাহ্ন


ডান্ডাবেড়ি-হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে ১০ আইনজীবীর আইনি নোটিশ
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০১-২০২৩
ডান্ডাবেড়ি-হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে ১০ আইনজীবীর আইনি নোটিশ ডান্ডাবেড়ি-হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধে ১০ আইনজীবীর আইনি নোটিশ


গ্রেফতার করা আসামিদের বেআইনিভাবে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া পরানো বন্ধ এবং এ সম্পর্কে একটি নীতিমালার জন্য আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী।

রোববার (২২ জানুয়ারি) বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন।

নোটিশ পাঠানো অন্য আইনজীবীরা হলেন: মীর এ কে এম নুরুন্নবী, মো. জোবায়দুর রহমান, মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম এবং শাহীনুর রহমান।

আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, আইজিপি এবং কারা মহাপরিদর্শক বরাবরে এ আইনি নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় গত ২০ ডিসেম্বরে ছবিসহ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে দেখা যায় গাজীপুরে একজন আসামি ডান্ডাবেড়ি পরিহিত অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। তার পরপরই গত ১৭ জানুয়ারি ছবিসহ আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানেও দেখা যায়, শরীয়তপুরে আরেকজন আসামি একইভাবে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়াচ্ছেন। এ সময়ের মধ্যেই একজন আইনজীবীসহ কয়েকজনকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে ঢাকার আদালতে আনা হয়। এর কিছুদিন পূর্বে আরেকজন আইনজীবীকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে  আদালতে আনা হয়।

তিনি বলেন, এসব ঘটনা পত্র-পত্রিকা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কাছাকাছি সময়ে সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, তানভীর হাসান তানু, প্রবীর শিকদার, শিল্পী জে কে মজলিস এবং কয়েকজন শিশুসহ অনেক আসামিকে হাতকড়া পরানোর ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

আসাদ উদ্দিন বলেন, বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনের প্রবিধান ৩৩০-এ হাতকড়া সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র পলায়ন রোধ করতে যতটুকু প্রয়োজন তার বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো শক্তিশালী বন্দি সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হয় বা কুখ্যাত হিসাবে পূর্ব পরিচিত হয় বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকে বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দি সংখ্যা অনেক বেশি হয় সেক্ষত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ প্রবিধানের কোথাও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই।

নোটিশে তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে জেলকোড এবং কারা আইনে 'কারা অপরাধে'র বর্ণনার পাশাপাশি শাস্তি হিসাবে অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে হাতকড়া এবং ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ কারাভ্যন্তরে কয়েদিরা সংশ্লিষ্ট 'কারা অপরাধ' করলে তার শাস্তি হিসাবে এর ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া যেসব কয়েদি পলায়ন করে বা পলায়নে উদ্যত হয় বা ষড়যন্ত্র করে, তাদেরকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে। এর বাইরে এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের সময় ক্ষেত্র বিশেষে এর ব্যবহার করা যেতে পারে।

মূলত ডান্ডাবেড়ির ব্যবহার কেবলমাত্র জেলকোড এবং কারা আইনের আওতাধীন। আর বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কেবলমাত্র হাতকড়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কোনোভাবেই ডান্ডাবেড়ি নয়।

আসাদ জানান, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেবলমাত্র আইনানুযায়ী ব্যতিত ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির ক্ষতি করা নিষিদ্ধ। অনুচ্ছেদ ৩৫(৫) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না বা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেয়া যাবে না বা তার সঙ্গে অনুরুপ ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু আইনের এসব বিধানের বাইরে গিয়ে ডাণ্ডাবেড়ি এবং হাতকড়ার অপব্যবহার করা হচ্ছে, যা নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এরই মধ্যে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। সিটিজেন ফর ডেমোক্রেসি বনাম স্টেট অব আসাম মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, পুলিশ বা কারা কর্তৃপক্ষ কোনো আসামিকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরাতে পারবে না। কোনো মারাত্মক এবং পলায়নোর আশঙ্কা আছে এমন আসামিকে এগুলো পরানো অত্যন্ত প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কোনো আসামিকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি পরানো যাবে না। ওয়ারেন্ট ব্যতীত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হলে এবং হাতকড়া পরানো আবশ্যক মনে হলে পুলিশ তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট নিয়ে আসা পর্যন্ত হাতকড়া পরাতে পারবেন। পরবর্তী সময়ের জন্য অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিতে হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে এমন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা/নীতিমালা না থাকায় ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার হচ্ছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাই দেশের সচেতন নাগরিক এবং উচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসাবে এ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ (পনের) কর্মদিবসের মধ্যে ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার বন্ধ এবং এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় নোটিশদাতাগণ উচ্চ আদালতের সম্মুখীন হবেন বলে এ মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।