দিল্লিতে পরকিয়ার জেরে অঞ্জন নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে, দেহ ২২ টুকরো করে সেই টুকরোগুলি ফ্রিজে রাখে নিহতের স্ত্রী ও ছেলে। পরে দেহের টুকরো গুলি কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ফেলে দেয় স্ত্রী-সন্তান।
এর আগে, ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করে তাঁর লিভ ইন সঙ্গী আফতাব পুনাওয়ালা তার পরে তার দেহ ৩৫ টুকরো করে কাটে। সে সব টুকরো ১৮ দিন ধরে নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে ফেলে দেয় সে। সবক’টি টুকরো খুঁজতে গিয়ে গোটা দিল্লি জুড়ে চিরুনি তল্লাশি চালায় পুলিশ। সমস্ত থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়, কোথাও কোনও দেহাংশ পাওয়া গেলেই খবর দিতে। আর তাতেই খবর মেলে, গত জুনে পাণ্ডব নগর দেহাংশের খোঁজ মিলেছিল। কিন্তু পচেগলে যাওয়ায়, তা কার, তখন জানা যায়নি।
পুলিশ ওই দেহাংশ পরীক্ষায় পাঠায়, তা শ্রদ্ধার কিনা জানতে। কিন্তু শ্রদ্ধার নমুনার সঙ্গে তা মেলেনি। অন্য কারও দেহ বলে জানা যায়। এরপর নতুন ভাবে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। জানা যায়, দিল্লির পাণ্ডব নগর এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া অঞ্জন দাসের সঙ্গে মিলছে ওই দেহাংশ।
এর পরেই অঞ্জনের স্ত্রী পুনম এবং ছেলে দীপককে জেরা করে পুলিশ। প্রথমে এ বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে অস্বীকার করলেও, একসময় জেরার মুখে ভেঙে পড়ে তারা। জানায়, অঞ্জন দাস বিবাহবহির্ভূত এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সে কথা জানতে পেরেই তাঁকে খুনের সিদ্ধান্ত নে মা-ছেলে!
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয় অঞ্জনকে। তার পরে তাঁকে খুন করে দেহ টুকরো করে মা-ছেলে মিলে। এর পরে ঠিক শ্রদ্ধারই মতো সেই দেহ রাখা হয় ফ্রিজে। পরে তা ফেলে আসা হয় বিভিন্ন জায়গায়।
সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে এই ঘটনা। দেখা গেছে, গভীর রাতে ব্যাগ হাতে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে অঞ্জনের ছেলে দীপক, পিছনে তার মা পুনম। দিনের বেলায় বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখছে মা-ছেলে। এমনটাও ধরা পড়েছে ফুটেজে। তদন্তে সেইসব জায়গা থেকেই অঞ্জনের আরও দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের ধারনা অঞ্জনকে ২২ টুকরো করা হয়েছিল ।
পুলিশ জানাচ্ছে, একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড সামনে আসছে, যেগুলিতে শ্রদ্ধা-কাণ্ডের ছায়া স্পষ্ট। বলা যায়, শ্রদ্ধার খুনি আফতাব যেন নৃশংস অপরাধীদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে! প্রশ্ন উঠছে, এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডই কি ট্রেন্ড হয়ে গেল!
এদিকে, সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের এমনই একটি ঘটনা সামনে এসেছে । সন্দেহের বশে স্ত্রীকে মেরে টুকরো টুকরো করেছে স্বামী। আবার উত্তরপ্রদেশে প্রেমিকা অন্যত্র বিয়ে করে নেওয়ায় তাকে হত্যা করে ৬ টুকরো করে প্রাক্তন প্রেমিক।
এর মধ্যেই দিল্লির এই দ্বিতীয় ঘটনা সামনে এল। একের পর এক এই একই ধরনের ঘটনায় সকলের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এমন নৃশংস হয়ে উঠছে মানুষ? ধারনা করা হচ্ছে, প্রচণ্ড আক্রোশ, রাগ, প্রতিশোধস্পৃহা পৈশাচিক মনোবৃত্তির জন্ম দিচ্ছে। হিতাহিত জ্ঞান ভুলে মানুষ সেইসব কাজ করছে যা একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে ভাবনাচিন্তায় আনাই সম্ভব নয়।
শ্রদ্ধাকে নিয়ে এত তোলপাড়ই কি নৃশংসতার এক নয়া ‘স্টাইল’ জন্ম দিল, ভেবে পাচ্ছেন না মানুষ।