ফজলী আম জি আই পন্য হিসেবে রাজশাহী জেলার পক্ষে নিবন্ধনের বিরোধীতা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পক্ষে নিবন্ধনের দাবীতে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রনালয়ের ডিজাইন, পেটেন্ট ও ট্রেডমার্কস বিভাগে একটি আপত্তি দাখিল করা হয় । প্রেক্ষিতে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমর্কস বিভাগ এই আপত্তির যৈক্তিকতা বিবেচনা করেই আগামী ২৪ মে তারিখে উভয় পক্ষের শুনানির দিন ধার্য্য করেছে ।
ইতোপুর্বে ফজলী আমের জি আই স্বীকৃতির দাবীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জে বাগান মালিক , আম ব্যবসায়ী চেম্বার অফ কমার্স ,সাংবাদিক সহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ মানববন্ধন,জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান সহ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে ।
জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আম বলতে চাঁপাইনবাবগঞ্জকেই বুঝায় এবং সেটা প্রায় ১০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে । দেশ বিভাগের প্রায় দেড়শত বছর আগে থেকেই মালদহ তথা গৌড়ের ফজলী আমের সুখ্যাতি রয়েছে । গৌড়ের অংশ হিসেবে সেই সুখ্যাতির পরিপুর্ন অধিকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ । ১৮০০ সালের দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত সংলগ্ন গৌড়ে ফজলবিবি নামে এক বৃদ্ধা বাস করতেন । সে সময় মালদহ জেলা কালেক্টর রাজভেনশ সরকারী কাজে গৌরে আসেন ও ব্ররুদ্ধার বাড়ীর কাছে শিবির স্থাপন করেন । কালেক্টরের আগমন বার্তা শুনে বৃদ্ধা কালেক্টরের জন্য উপঢৌকন হিসেবে তার বাড়ীর আঙ্গিনার আমগাছের আম উপহার দেন । কালেক্টর আম খেয়ে তৃপ্ত হয়ে বৃদ্ধাকে সেই আমের নাম জানতে চান । বৃদ্ধা কথা বুঝতে না পেরে তার নিজের নাম বলেন । সেই থেকে আমটির নামকরন হয় ‘ফজলী’। রাজশাহীতে ফজলী বা অন্য কোন আমের ঐতিহাসিক স্বীকৃতি নেই । স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে যেহেতু চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত হয় সেই সুবাদেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তাদের ইতিহাস ওঐতিহ্য বলে দাবী করে । যেমনটা চাঁপাইনবাবগঙ্গের ভোলাহাট থানা হচ্ছে রেশমের সুতিকাগার এবং সমগ্র দেশের ৬০ শতাংশ রেশম সুতা সেখানে উৎপাদিত হয় । শধু তাই নয় শিবগঞ্জ হরিনগর লাহারপুর এর তাঁতে বোনা রেশম বস্ত্র দেশখ্যাত । কিন্তু রাজশাহী শহরে পাওয়ারলুম বসিয়ে রেশম নগরী করে রেশমের জি আই স্বীকৃতি লাভ করেছে ।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে উৎপাদিত মোট আমের এক চতুর্থাংশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেই উৎপাদিত হয় । এ জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৪ লাখ টন আম উৎপাদিত হয় যার ২৩% বা প্রায় ৮৫ হাজার টন ফজলী আম উৎপাদিত হয় । যেখানে রাজশাহী জেলায় ফজলী আম উৎপাদন হয় মাত্র ২৮ হাজার টন । দেশভাগের পর থেকে সিংহ ভাগ আমের বিপনন হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেই । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মত বিশাল পরিমানের আম বাগান আজও অন্য কোন জেলায় নেই । আমের জন্য লাগসই ভুপ্রকৃতি , আবহাওয়া ও তাপমাত্রা প্রয়োজন তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শতভাগ নিশ্চিত করে বলেই কৃষি বিভাগ গবেষণা বিভাগ বলে।
পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস বিভাগ যে সকল শর্তের প্রেক্ষিতে জি আই পন্যের স্বীকৃতি প্রদান করে {অর্থাৎ ঐতিহাসিক,ভৌগলিক , উৎপাদন , বিপনন }সবই ফজলী আমের ক্ষেত্রে পুরন করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। শুধু তাইনয় বাস্তবে একটি প্রমান দিলে আরও স্পষ্ট হবে । যে কোন ভোক্তার সামনে যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর ফজলী আম রাখা যায় তাহলে ভোক্তা প্রথমেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলী আমই বেছে নেবে । এর চেয়ে বড় প্রমান আর কি হতে পারে । চাঁপাইনবাবগঞ্জ -৩ আসনের সংসদ সদস্য সংসদেই ফজলী আমের স্বীকৃতির দাবী জানিয়েছেন । এছাড়া অন্য দুজন সংসদ সদস্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের পক্ষেই ফজলী আমের স্বীকৃতির কথা জানিয়েছেন।