প্রকল্পের মেয়াদ দু’দফা বাড়ানোর পরও শেষ হয়নি রাজশাহীর বানেশ্বর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণকাজ। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় চার বছরেও কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কটির চারঘাট ও বাঘা বাজারের দেড় কিলোমিটার অংশে কাজ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েকটি জেলার মানুষ। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, ৫৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর থেকে চারঘাট-বাঘা-নাটোরের লালপুর হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার সড়কের কাজ চলছে। ১৮ ফুট থেকে সড়কটি ৩৪ ফুট চওড়া করা হচ্ছে। বাজার এলাকায় ঢালাই সড়ক ও পানি নিষ্কাশনের নালা থাকবে। প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পরে এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর করা হয়। পরে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সাতজন ঠিকাদার সাতটি প্যাকেজে কাজটি করছেন।
রাজশাহীর সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরাসরি যোগাযোগের সড়কটির কাজ শেষ হলে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোয় যাতায়াতে দূরত্ব ও সময় কমবে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় চারঘাট বাজারের ৬০০ মিটার ও বাঘার ১ হাজার মিটারের কাজ শুরু হয়নি। ফলে এবড়োখেবড়ো সড়কে যানবাহন উল্টে ঘটছে দুর্ঘটনা। ক্ষতি হচ্ছে যন্ত্রাংশের। বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনের। এ অবস্থায় ভূমি মালিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সড়কের কাজ শেষ করার দাবি এলাকার মানুষের।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভূমি মালিকদের অভিযোগ, ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বৈষম্য হয়েছে। বাজারমূল্য অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হয়নি। কিছু অংশে সড়কের দু’পাশে অধিগ্রহণের কথা থাকলেও করা হচ্ছে একপাশে। এতে বিষয়টি সমাধানে দীর্ঘসূত্রতার আশঙ্কা তাদের। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কয়েক জেলার কৃষি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে খাতে। এ জন্য প্রশাসনের গাফিলতিকে দুষছেন তারা।
বাঘার প্রাণকেন্দ্রে জমি অধিগ্রহণে সর্বোচ্চ দাম ৩ লাখ টাকা শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে বাজার এলাকার জমি মালিক আখতার রহমান বলেন, বর্তমান বাজারমূল্যে এ জমির দাম কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা শতক। সড়কের দু’পাশে অধিগ্রহণের কথা থাকলেও প্রভাবশালীদের দাপটে হচ্ছে একপাশে। এতে বাজার এলাকার কিছু মালিক ন্যায্যমূল্য না পেয়ে পথে বসে গেছেন।
চারঘাট বাজার এলাকার শামসুল হকের ভাষ্য, বাঘার চেয়ে চারঘাট রাজশাহী শহরের কাছাকাছি এবং বাজারের পাশে পুলিশ একাডেমি ও ক্যাডেট কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তা সত্ত্বেও জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ হাজার টাকা শতাংশ। ধানি জমি ও মৌজা রেটের যে কারণ দেখানো হচ্ছে, তা যুক্তিযুক্ত না। তারা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছেন।
যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি মৌজা রেট অনুযায়ী জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত সরকারকে ফাঁকি দিতে গিয়ে ভূমি মালিকরা নিজেরাই ফাঁকিতে পড়েছেন। কারণ, বাজার সংশ্লিষ্ট জমি অধিক দামে কেনাবেচা হলেও সরকারি রেজিস্ট্রি করার ক্ষেত্রে দাম কম দেখানো হয়। তাতে সরকারি ফি কমে। এটি করতে গিয়ে বাজার সংশ্লিষ্ট জমির মৌজা রেট কমেছে। এ ছাড়া মার্কেট থাকলেও চারঘাট বাজারের অধিকাংশ জমি ধানি জমির শ্রেণিভুক্ত।
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সড়কটির কাজ শুরু না হওয়ায় বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা রজব আলী বলছিলেন, বাবা স্ট্রোক করায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাঘা ও চারঘাট বাজারের দেড় কিলোমিটার যেন পুলসিরাতের রাস্তায় পরিণত হয়েছে। শুধু চারঘাট বাজারের ৫০০ মিটার অ্যাম্বুলেন্সে পার হতে দেড় ঘণ্টা লেগেছে। চার-পাঁচ বছর ধরে এ অবস্থা চলছে।
বিভিন্ন পণ্য মিনি ট্রাকে রাজশাহী শহরে নিয়ে বিক্রি করেন নাটোরের লালপুর এলাকার আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, সড়কের কারণে ব্যবসার করুণ অবস্থা। ট্রাকের ভাড়াও বেশি, সঠিক সময়ে পণ্য নিয়ে শহরে পৌঁছানো যায় না। সড়কের অন্য অংশের কাজ হলেও তা নষ্টের পথে। অথচ দুই বাজারে কাজ শুরুই হয়নি। জমির মালিকরা মামলা করলে কবে কাজ শুরু হবে, বলা মুশকিল।
ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা) মিথিলা দাস বলেন, জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এটা তারা চান না। এ জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, জমির শ্রেণি ও মৌজা রেটে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আট ধারা নোটিশও পাঠিয়েছেন। নিয়ম মেনে খুব দ্রুত অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল বলেন, ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৬০০ মিটারের কাজ শুরু করা যায়নি। মানুষের চলাচলে কষ্টও হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দুটি দাগ ছাড়া বাকি সব জমি বুঝে পেয়েছেন। দ্রুত জমিগুলো ফাঁকা করে সড়কের কাজ শুরু হবে।