২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৩৭:৪৯ অপরাহ্ন


ছয় কিমি ব্যবধানে দাম দ্বিগুণ
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২৪
ছয় কিমি ব্যবধানে দাম দ্বিগুণ


নওগাঁর কীর্তিপুর বাজারে প্রতিটি লাউয়ের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা। একই সবজি ৬-৭ কিলোমিটার দূরে পৌর বড় বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৯০ টাকার মরিচ হয়ে যাচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ফুলকপির দামের ব্যবধানও ২০ থেকে ২৫ টাকা। বেগুন, পটোল, শিম, করলাসহ অন্যান্য সবজিও হাত বদলের পর দ্বিগুণ ও তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ– হাত বদল ও মুনাফালোভীদের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে দামে এত ব্যবধান বলে মনে করছেন তারা।
গত শুক্রবার নওগাঁর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, নানা অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। যদিও গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কমতির দিকে। তবে এখনও ভোক্তাদের সবজি কিনতে নাভিশ্বাস উঠছে। আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
শহরে থাকলেও মাসুদ রানার গ্রামের বাড়িতে সবজির আবাদ হয়। তিনি বলেন, অনেক শ্রম ও কষ্টের পর যে দামে গ্রাম থেকে সবজি বিক্রি হয়, শহরের বাজারে তার দাম দ্বিগুণেরও বেশি। এটি সম্পূর্ণ নজরদারির ব্যর্থতা। ফলে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
যদিও বিক্রেতারা বলছেন, এখনও সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। তবে সামনের দিনগুলোয় শীতকালীন সবজি সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটির দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। সামনে আরও কমবে। চাষি থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত কেজিপ্রতি দাম বৃদ্ধির পেছনে যাতায়াত ভাড়াসহ অন্য খরচ থাকে।
শুক্রবার ক্ষেতের বেগুন ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন কীর্তিপুর গ্রামের কৃষক সুলতান। তবে খুচরায় ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। তাঁর ভাষ্য, কার্যকর নজরদারি থাকলে কৃষক ভালো দাম পাবেন। ক্রেতারাও ঠকবেন না। আর পৌর বাজারের বিক্রেতা আমিনুল বলেন, সবজির দাম চার-পাঁচ দিন ধরে কমছে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে শীতকালীন সবজি এলে আরও কমবে। সরকারের নজরদারিরও প্রয়োজন আছে। অন্যথায় মুনাফালোভীরা সুযোগ নেয়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে কাকরোল, মুলা, ঝিঙে, চিচিংগা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা। এ ছাড়া বেগুন ১০০, ঢ্যাঁড়স ও করলা ১২০ টাকা কেজি। আর লাউ প্রতিটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায়। প্রতি কেজি পেঁয়াজ জাত ভেদে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, আদা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ২৪০ টাকার রসুনের দাম ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৭০।
কয়েক সপ্তাহ আগে কেজিতে ২০-৩০ টাকা বৃদ্ধির পর সে দামেই এখনও বিক্রি হচ্ছে মুরগি। মাছ, গরু-খাসির মাংস ও ডিমে আগের দামই আছে। সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। অপরিবর্তিত ডাল ও তেলের দাম।
বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, বাজারের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসাধু সিন্ডিকেট কাজ করছে। কিন্তু সরকার এ সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। এ কারণে দাম বেশি। হিরা বেগম বলেন, বাজারে এখনও ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। কয়েক বছর আগে ৩০০ টাকায় ব্যাগ ভর্তি হলেও এখন দ্বিগুণ টাকায়ও হচ্ছে না। প্রতিটি পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। নিয়মিত বাজার তদারকি করে যেন দামটা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা হয়।
কয়েক দফায় অতিবর্ষণের ফলে কিছু সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তবে সেটি খুব বেশি নয় জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন, শীতকালীন সবজি এলে দাম কমবে। আর সদর উপজেলা এবং বদলগাছীর কয়েকজন কৃষকের মতে, ইজারাদারদের অতিরিক্ত খাজনা আদায় ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো এবং বাজারজাতের পরিধি বাড়ালে কৃষক নায্যমূল্য পাবেন।
বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গঠিত জেলা টাস্কফোর্স কমিটি সদস্য ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রুবেল হোসেন বলেন, পাইকারি বাজার ও আড়ত নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ক্রয় রসিদ সংরক্ষণ ও বিক্রয় মূল্য টাঙানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তদারকিও চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।