রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন ছিল দারিদ্র্য ও সাদাসিধে জীবন যাপনের অনন্য উদাহরণ। দুনিয়াবি সম্পদ ও ভোগ-বিলাসকে উপেক্ষা করে তিনি পরকালীন সফলতার জন্য জীবন অতিবাহিত করেছেন।
তার প্রতিটি পদক্ষেপ, দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যক্রমে দারিদ্র্যের মধ্যে ধৈর্যধারণ ও আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক সহজ-সরল জীবনধারা পছন্দ করতেন। তিনি তার পরিবারসহ চরম অভাবের মধ্যেও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে একনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি যেমন নিজের জন্য দারিদ্র্যকে পছন্দ করতেন, তেমনই অন্য দরিদ্রদেরকেও ভালোবাসার ও তাদের সেবা করার পরামর্শ দিতেন।
রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৈনন্দিন জীবন
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের এমনও সময় এসেছে, যখন তার পরিবার মাসের পর মাস ঘরের চুলায় আগুন জ্বালাতে পারত না, শুধুমাত্র খেজুর ও পানিই ছিল তাদের ভরসা। তবুও তারা কখনো আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারাননি।
সাদাসিধে জীবনযাপন
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাসিধে জীবনযাপন পছন্দ করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে কোনো দিনও এক সা’ গম বা অন্য কোনো খাদ্যদানা অবশিষ্ট থাকত না। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে চামড়ার তৈরি বিছানা ছিল, যার মধ্যে খেজুরগাছের ছাল ভরা থাকত।
হে আল্লাহর রাসুল! পারসিক ও রোমকদের কত বিলাসিতার মধ্যে দেখছি, অথচ আপনি আল্লাহর প্রিয় রাসুল।’ রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বলেন, তাদের জন্য দুনিয়ার নিয়ামত দেয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের জন্য আখিরাত। (বুখারি, মুসলিম)
দরিদ্রদের প্রতি ভালোবাসা
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরিদ্রদের ভালোবাসতেন। তাদের প্রতি সদয় আচরণ করতেন। তিনি দোয়া করতেন,
হে আল্লাহ! আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখুন, দরিদ্র অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং কিয়ামতের দিন দরিদ্রদের দলভুক্ত করে উঠিয়ে দিন। হজরত আয়েশা (রা.) যখন জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তিনি এমন প্রার্থনা করছেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দরিদ্ররা ধনীদের চেয়ে চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি) তিনি আরও বলেন, দরিদ্র প্রার্থনাকারীকে ফিরিয়ে দিও না, যদি কিছু না থাকে, একটি খেজুরের টুকরা হলেও দিয়ে দিও। (তিরমিজি)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন দারিদ্র্য, ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাসের অনন্য উদাহরণ। তার জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে মুসলিম উম্মাহকে দারিদ্র্যের মধ্যে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দারিদ্র্যের মাঝেও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের আদর্শ অনুসরণ করাই হবে আমাদের সাফল্যের পথ।