২২ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৫৫:৫৯ অপরাহ্ন


সাদাসিধে জীবন যাপনই ছিলো নবীজির পছন্দের
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১০-২০২৪
সাদাসিধে জীবন যাপনই ছিলো নবীজির পছন্দের


রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন ছিল দারিদ্র্য ও সাদাসিধে জীবন যাপনের অনন্য উদাহরণ। দুনিয়াবি সম্পদ ও ভোগ-বিলাসকে উপেক্ষা করে তিনি পরকালীন সফলতার জন্য জীবন অতিবাহিত করেছেন।

তার প্রতিটি পদক্ষেপ, দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যক্রমে দারিদ্র্যের মধ্যে ধৈর্যধারণ ও আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক সহজ-সরল জীবনধারা পছন্দ করতেন। তিনি তার পরিবারসহ চরম অভাবের মধ্যেও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে একনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি যেমন নিজের জন্য দারিদ্র্যকে পছন্দ করতেন, তেমনই অন্য দরিদ্রদেরকেও ভালোবাসার ও তাদের সেবা করার পরামর্শ দিতেন।

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৈনন্দিন জীবন

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো পুরো পেট ভরে খাবার খেতে পারতেন না। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের সদস্যরা কখনোই এক নাগাড়ে তিন দিন গমের রুটি পেট পুরে খেতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, 
 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের এমনও সময় এসেছে, যখন তার পরিবার মাসের পর মাস ঘরের চুলায় আগুন জ্বালাতে পারত না, শুধুমাত্র খেজুর ও পানিই ছিল তাদের ভরসা। তবুও তারা কখনো আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারাননি। 

 

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) উল্লেখ করেছেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পূর্বেও পরিতৃপ্ত হতে পারেননি, এমনকি জবের রুটিও তার কাছে সহজলভ্য ছিল না। (বুখারি, মুসলিম)

সাদাসিধে জীবনযাপন


রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাসিধে জীবনযাপন পছন্দ করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে কোনো দিনও এক সা’ গম বা অন্য কোনো খাদ্যদানা অবশিষ্ট থাকত না। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘরে চামড়ার তৈরি বিছানা ছিল, যার মধ্যে খেজুরগাছের ছাল ভরা থাকত। 

 
হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) একবার নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খেজুরপাতার চাটাইয়ের ওপর শুয়ে থাকতে দেখে বলেন,
 

হে আল্লাহর রাসুল! পারসিক ও রোমকদের কত বিলাসিতার মধ্যে দেখছি, অথচ আপনি আল্লাহর প্রিয় রাসুল।’ রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বলেন, তাদের জন্য দুনিয়ার নিয়ামত দেয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের জন্য আখিরাত। (বুখারি, মুসলিম)

 

 

দরিদ্রদের প্রতি ভালোবাসা


রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরিদ্রদের ভালোবাসতেন। তাদের প্রতি সদয় আচরণ করতেন। তিনি দোয়া করতেন, 

 

হে আল্লাহ! আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখুন, দরিদ্র অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং কিয়ামতের দিন দরিদ্রদের দলভুক্ত করে উঠিয়ে দিন। হজরত আয়েশা (রা.) যখন জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তিনি এমন প্রার্থনা করছেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, দরিদ্ররা ধনীদের চেয়ে চল্লিশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি) তিনি আরও বলেন, দরিদ্র প্রার্থনাকারীকে ফিরিয়ে দিও না, যদি কিছু না থাকে, একটি খেজুরের টুকরা হলেও দিয়ে দিও। (তিরমিজি)

 

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের অন্যতম উদাহরণ হলো, তিনি নিজেই অভাবগ্রস্ত ছিলেন। একবার, আবু ত্বলহা (রা.) নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষুধার্ত কণ্ঠ শুনে তার জন্য যবের রুটি তৈরি করলেন। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গীদের নিয়ে আবু ত্বলহার ঘরে গেলেন, যেখানে কয়েকটি রুটির টুকরা সত্তর বা আশিজনকে খাওয়ানো হলো। এটি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের একটি মুজিজা, যা তার দারিদ্র্যের মাঝেও আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা এবং মানুষের জন্য তার উদারতার প্রকাশ ঘটায়। (মুসলিম)

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন দারিদ্র্য, ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাসের অনন্য উদাহরণ। তার জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে মুসলিম উম্মাহকে দারিদ্র্যের মধ্যে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দারিদ্র্যের মাঝেও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের আদর্শ অনুসরণ করাই হবে আমাদের সাফল্যের পথ। 
 
তিনি দুনিয়া ও আখেরাতের সবচেয়ে ধনী ছিলেন, তারপরও তিনি দারিদ্রতার জীবন যাপনই পছন্দ করতেন। তার ধন সম্পদ সবকিছু আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে ফেলতেন। তিনি শুধু আল্লাহর উপরই ভরসা করতেন। তাই আমাদেরও নবীর আদর্শ মত জীবন যাপন করতে হবে। যাদের সচ্ছল