রাজশাহীর অবশিষ্ট পুকুরগুলোতে ‘সংরক্ষিত পুকুর’র সাইনবোর্ড বসানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এই ঘোষণা কার্যকর করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
রাজশাহীতে মহানগরীর পুকুর সংরক্ষণ নিয়ে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভা এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর হোটেল ওয়ারিশানের কনফারেন্স রুমে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ‘অস্তিত্ব সংকটে রাজশাহী মহানগরীর পুকুর/জলাশয়: পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
আলোচনা সভায় রাজশাহী জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিবৃন্দ ছিলেন। তারা মহানগরীর সংরক্ষিত পুকুরে দ্রুতই সাইনবোর্ড বসানোর ঘোষণা দেন।
সভায় বক্তব্য দেন নদী গবেষক ও লেখক মাহবুব সিদ্দিকী, রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার, পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পক বনি আহসান, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পক রাহেনুল ইসলাম।
সভায় পরিবেশ আন্দোলন কর্মী, সংগঠক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বেসরকারি পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় তারাও বিভিন্ন মতামত উপস্থাপন করেন।
আলোচনা সভার শুরুতেই রাজশাহী মহানগরীর পুকুর নিয়ে গবেষণা ও পরিসংখ্যান মূলক বক্তব্য ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলার রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল।
তিনি জানান, রাজশাহী শহর এক সময় পুকুরের মহানগরী ছিল। তার ৯৭ শতাংশ পুকুরই ভরাট হয়ে গেছে। ২০০২ সালে মহানগর এলাকায় পুকুর ছিল ৭২৮টি, ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩৮০টিতে, ২০১৫ সালে ১৬৮টিতে এসে দাঁড়ায়। ২০১৫ সালের পর ‘জীবিত’ পুকুর কতটি আছে তা নিয়ে আর কোনো পরিসংখ্যান হয়নি। আশঙ্কা করা যায় এই সংখ্যা ১শ’র নিচে নেমে গেছে। পুকুর না থাকায় রাজশাহীতে গরমের দিনে তীব্র গরম, আর শীতকালে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতিও হচ্ছে।
তিনি জানান, সিএস দাগ/খতিয়ান অনুযায়ী পুকুরগুলোর সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। ব্যক্তিমালিকানার পুকুরগুলো অধিগ্রহণ করতে হবে। সংস্কারের নামে পুকুরগুলো ভরাট করা যাবে না। ভরাট বা দখল হওয়া পুকুর পুনরুদ্ধার করতে হবে বলে তিনি সুপারিশ করেন।
সভায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পক বনি আহসান বলেন, তারা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর অধিগ্রহণের বিষয়ে একটি ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। তার মধ্য থেকে অনেকগুলো পুকুর ভরাট হয়েছে। এখন যেগুলো অবশিষ্ট আছে, সেগুলোতে শিগগিরই সাইনবোর্ড লাগানো হবে। যেখানে লেখা থাকতে পারে এটা সিটি করপোরেশন, আরডিএ বা জেলা প্রশাসনের পুকুর, এটা ভরাট করা যাবে না। কেউ ভরাট করলে তা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনের প্রতি আহ্বান জানান, নগর পরিকল্পক কর্মকর্তা।
নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, জলাশয় রক্ষায় যে আইনগুলো আছে, তা জলাশয় রক্ষায় অনুকূলে নয়। এখন সংস্কারের সময়, এখনই এটা সংস্কার করতে হবে। সরকারি বা খাসপুকুরগুলো ভরাট করে উন্নয়ন করতে হবে, তা সংশ্লিষ্টদের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। এছাড়া পুকুর/জলাশয় রক্ষায় পাড়ায়-পাড়ায় কমিটি গঠন করতে হবে, যাতে আর একটি পুকুরেও হাত না পড়ে বলেও উল্লেখ করেন।