চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি চিকিত্সাজগতে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন একদল চিকিত্সক। আর তার কারণটাও ছিল বেশ অন্যরকম! ওইদিনই সর্বপ্রথম শূকরের হৃত্পিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল মানুষের দেহে! স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বে প্রথম এমন প্রতিস্থাপনের ঘটনা নজর কেড়েছিল সবার।
কিন্তু, বিরল এই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাত্র দুই মাস পরেই প্রয়াত হলেন ডেভিড বেনেট নামের ওই ব্যক্তি। বুধবার এই মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট অস্ত্রোপচারের ওই হাসপাতালটি। এই প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিকেল সেন্টার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "৫৭ বছরের ডেভিড বেনেট ৮ মার্চ মারা গিয়েছেন। ৭ জানুয়ারি এই বিরল প্রতিস্থাপনটি হয়েছিল তাঁর দেহে। বেশ কয়েক দিন আগেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। যখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে তিনি আর সুস্থ হবেন না, তখন তাঁকে বিশেষ যত্নে রাখা হয়েছিল। তিনি তাঁর শেষ সময়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন,"
যদিও চিকিত্সকদের তরফে তাঁর মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন প্রোগ্রামের পরিচালক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, "আমরা অনেক প্রমাণ পেয়েছি যেখানে জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত শূকরের হৃত্পিণ্ড মানবদেহে ভালোভাবে কাজ করতে পারে।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেশ কয়েক বছর ধরেই চিকিত্সকরা পশুর অঙ্গ মানবদেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা করছিলেন। কারণ এই কাজে সফল হলে তা নিঃসন্দেহে চিকিত্সা বিজ্ঞানে এক বিশাল দরজা খুলে দেবে। তবে, ডেভিডের ক্ষেত্রে তাঁর দেহে মানুষের হৃত্পিণ্ড বসানোর ঝুঁকি ছিল অনেক। তাই, পশুর হৃত্পিণ্ড ছাড়া অন্য বিকল্পও ছিল না তাঁর কাছে। সেই কারণেই শুয়োরের হৃত্পিণ্ড সংস্থাপনের জন্য রাজি হয়ে যান ডেভিড।
তবে, ডেভিডের মৃত্যুর পরে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, জিন-সম্পাদিত শুয়োরের হৃত্পিণ্ড নিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে বেশিই বেঁচেছিলেন ডেভিড। এর আগেও এক শিশুর দেহে বেবুনের হৃত্পিণ্ড প্রতিস্থাপিত করা হয়। সেক্ষেত্রে ওই শিশুটি মাত্র ২১ দিন বেঁচেছিল। তবে, মানুষের ওষুধে শুয়োরের ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। শুয়োরের হার্টের ভালভ মানব দেহে বসানো এবং শুয়োরের চামড়া দিয়ে স্কিন গ্রাফটিং আগেও হয়েছে। তবে, হৃত্পিণ্ড প্রতিস্থাপনের ঘটনা ছিল এই প্রথম।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ডেভিড বেনেটের পুত্র এই অস্ত্রোপচার এবং বাবার যত্নের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ডেভিড ২০২১ সালের অক্টোবরে আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেরিল্যান্ডের হাসপাতালে ভর্তি হন। শয্যাশায়ী অবস্থায় তাঁকে জরুরি লাইফ সাপোর্ট মেশিনে রাখা হয়। পাশাপাশি, ডেভিডের পুত্র জানিয়েছেন, "৭ জানুয়ারি অস্ত্রোপচারের পর বাবা জানতেন এই প্রতিস্থাপন সফল হবে কী না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।"
রাজশাহীর সময় /এএইচ