যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্নাতক পড়ার সুযোগ পেয়েছিল নদিয়ার বগুলার ছেলেটা। পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে ছিল খুশির হাওয়া। ৬ অগস্ট ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে রেখে আসেন বাবা-মা। কিন্তু ৯ অগস্টের মধ্যে সব শেষ ! হোস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় নদিয়ার ছেলেটার। মাত্র তিনদিনে হোস্টেলে তার সঙ্গে কী ঘটেছে, সেইসব তথ্যই উঠে আসছে তদন্তে।
ছেলের মৃত্যুতে, খুনের অভিযোগ তুলেছে মৃত পড়ুয়ার পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের অভিযোগ, র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে ওই পড়ুয়া। পুলিশ ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের জেরা করে উঠে আসছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য। কীভাবে ওই ছাত্রকে হস্টেলে হেনস্থা করা হয়েছিল, সেই খবরই মিলছে একে একে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের লুকিয়ে ছবি তুলতে বাধ্য করা হয়েছিল মৃত পড়ুয়াকে। শুধু তাই নয়, হস্টেলের জানলার ধারে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ‘অশ্রাব্য গালিগালাজ’ করতেও বাধ্য করা হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি।
হস্টেলের অন্যান্য আবাসিকদের একাধিকবার জেরা করা হয়। সেই জেরায় উঠে আসা সূত্র দিয়েই তদন্তের মালা বুনছেন তদন্তকারী অফিসাররা। তদন্তে জানা গেছে, মৃত্যুর আগে ওই পড়ুয়া নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের স্বীকার হয়েছিল। আর এই অত্যাচারের পিছনে ছিলেন হস্টেলের ‘দাদা’রা।
ঘটনার পরপরই মৃত পড়ুয়াকে নানান বিব্রতমূলক পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছিল, দাবি পুলিশের। জানা গেছে, ‘গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা’, প্রশ্ন করা হয় মৃত পড়ুয়াকে। ‘না’, উত্তর আসায় তার যৌন পরিচয় নিয়ে ব্যঙ্গ শুরু হয়। প্রমাণ দিতে বলা হয় যে, সে সমকামী নয়। মৃত্যুর আগে তাকে বারবার চিৎকার করে বলতে বাধ্য করা হয় যে, ‘আমি সমকামী নই’।
শুধু মৃত পড়ুয়ার সঙ্গে নয়, র্যাগিংয়ের শিকার হতে হয়েছে নতুন বর্ষের অনেক পড়ুয়াকেই। ঘর ও শৌচালয় পরিষ্কার থেকে শুরু করে সিনিয়রদের খাবার বেড়ে দেওয়া, মশারি টাঙিয়ে দেওয়ার মতো কাজও করানো হত। পুলিশ সূত্রে খবর, ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় এখনও অনেক রহস্য রয়েছে। সেই রহস্যের জটই খুলতে চাইছে পুলিশ।