০৪ মে ২০২৪, শনিবার, ১২:৪৯:৪৮ পূর্বাহ্ন


মঙ্গল খেপে গেছে, বনবন করে ঘুরছে, বিভ্রান্তিতে বিজ্ঞানীরা
এম সিয়াম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৮-২০২৩
মঙ্গল খেপে গেছে, বনবন করে ঘুরছে, বিভ্রান্তিতে বিজ্ঞানীরা মঙ্গল খেপে গেছে, বনবন করে ঘুরছে, বিভ্রান্তিতে বিজ্ঞানীরা


মঙ্গল লাল গ্রহ দিব্যি পৃথিবীর সঙ্গে সখ্য পাতিয়ে নিজের অক্ষের চারদিকে ধীরেসুস্থে ঘুরছিল। মঙ্গলে গত কয়েকবছর ধরে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে নাসার মহাকাশযান। মিস কৌতুহল, পারসিভিয়ারেন্স থেকে নাসার ইনসাইট, মঙ্গলের সংসারে সেই কবে থেকেই আড়ি পেতেছে পৃথিবীর মানুষ। এসব অবশ্য মঙ্গল সহ্য করে নিয়েছে। তবে ইদানীংকালে নাকি মঙ্গলের স্বভাবে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন নাসার (NASA) বিজ্ঞানীরা।

বিশেষ করে ইনসাইট মঙ্গলযান তড়িঘড়ি খবর পাঠিয়েছে, মঙ্গল (Mars) নাকি বেজায় খেপে গেছে। বনবন করে ঘুরতে শুরু করেছে। কেন এমন করছে তা অবশ্য ধরতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরি থেকে ইনসাইট ল্যান্ডারকে পরিচালনা করা হয়। পারসিভিয়ারেন্স ও মিস কিউরিওসিটির মতো ইনসাইটও মঙ্গলে (Mars) সংসার পেতেছে বহুদিন হল। মঙ্গলের মাটি, নুড়ি-পাথর কুড়িয়ে আনা, বিস্ময়কর কিছু দেখলে ক্যামেরাবন্দি করা তার কাজ। এই ইনসাইটই প্রথম খবর দিয়েছিল, মঙ্গলে নিরন্তর ধুলোর ঝড় ওঠে। মাঝেমাঝেই কেঁপে ওঠে লাল লাল গ্রহের মাটি। ধুলোর ঝড়ে ঢেকে যায় আকাশ। দুর্যোগ থাকে বেশ কয়েকদিন। অনেক সময় মাসও ঘুরে যায়। মঙ্গলের পরিমণ্ডলের দশ-বিশ কিলোমিটার ধুলোর আস্তরণে ঢেকে যায়। দিনের বেলায় অন্ধকার নেমে আসে। মঙ্গল (Mars) উত্তেজিত হয়ে ওঠে।


নাসার (NASA) এই ইনসাইট মঙ্গলযানের দুটো অ্যান্টেনা আছে যারা মঙ্গলের ঘূর্ণনের গতি খেয়াল রাখে। ইনসাইটের রোটেশন অ্যান্ড ইন্টেরিয়র স্ট্রাকচার এক্সপেরিমেন্ট (RISE) যন্ত্রে ধরা পড়েছে মঙ্গল নাকি আগের থেকে দ্রুত নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরছে। স্পিন রেট বা ঘূর্ণনের গতি বেড়ে গেছে। কেন এমন হয়েছে তা ধরতে পারেনি ইনসাইটের ওই যন্ত্র।

নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী অ্যাট্টিলিও রিভলদিনি বলছেন, মঙ্গলের ঘূর্ণনের গতি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এর গঠন বৈচিত্র্য এবং মঙ্গলের অন্দরমহলের অজানা রহস্য। মঙ্গলের আবহাওয়া খামখেয়ালি। কখনও ধুলোর ঝড়, কখনও মাটি কাঁপিয়ে ভূমিকম্প আবার কখনও বরফ পড়ে মঙ্গলে। গ্রহের পৃষ্ঠদেশ বা সারফেসের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রতিদিনের তাপমাত্রা কখনও বেড়ে ১৫০ ডিগ্রি ছোঁয়। পৃথিবীর দিন-রাতের আয়ু যতটা, মঙ্গলের দিন-রাতের আয়ুও প্রায় ততটাই। পৃথিবী নিজের কক্ষপথে লাট্টুর মতো ঘুরতে যে সময় নেয় (২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট), তার চেয়ে সামান্য কিছুটা বেশি সময় নেয় লাল গ্রহ। ঘণ্টার হিসেবে তাই মঙ্গলের একটি দিন (দিন ও রাত মিলে) আমাদের চেয়ে সামান্য একটু বড়। তার দৈর্ঘ্য ২৪ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট থেকে ২৪ ঘণ্টা ৩৯ মিনিটের মধ্যে। একে বলে ‘সল’।

মঙ্গলে ভূমিকম্প হয়। লাল গ্রহ হল ভূমিকম্প প্রবণ বা যাকে বলা যায় ‘সিসমিক্যালি অ্যাকটিভ।’ পৃথিবীতে ভূমিকম্পের জন্য দায়ী এর বিভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে রেষারেষি। একে অপরের গুঁতোয় একটি প্লেট চলে যায় অন্য প্লেটের নীচে। ফলে যে ফাটল তৈরি হয় তার কারণেই কেঁপে ওঠে মাটি। পৃথিবীর ম্যান্টলে থাকা অসম্ভব গরম পদার্থের তরল স্রোত বা লাভা উপরে উঠে আসে। কিন্তু মঙ্গলে কোনও টেকনোটনিক প্লেট নেই। সেখানে ক্রাস্টের বালিকণার নড়াচড়ার ফলেই তৈরি হয় কম্পন। একে বলে মঙ্গলের ভূমিকম্প বা মার্সকোয়েক। ঘন ঘন এই ভূমিকম্পের ফলেও মঙ্গলের নিজের অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণনের গতিতে বদল আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

 মঙ্গলের একেবারে ভিতরটা (কোর) কোন কোন পদার্থ দিয়ে গড়া, সেগুলি রয়েছে কী কী অবস্থায়, সেটা কতটা পুরু তা এখনও জানা যায়নি। লাল গ্রহের ম্যান্টল কেমন সে নিয়েও কৌতুহলের শেষ নেই।  মঙ্গলের কোরের তাপমাত্রা দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। যে তাপমাত্রায় লোহা বা ইস্পাতের মতো ধাতু বা ধাতব পদার্থ গলে না ঠিকই, কিন্তু তা শিলা, পাথর গলিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্টই।ফলে, পৃথিবীর কোরে যেমন রয়েছে লোহার গনগনে স্রোত, লাল গ্রহের অন্দরটাও তেমনই। তার উপর রয়েছে মঙ্গলের ক্রাস্ট। কোরের সেই গনগনে স্রোতের জন্য ক্রাস্টের ওঠা-নামা হচ্ছে। সেগুলি এদিক, ওদিকে সরে যাচ্ছে। তাদের সংকোচন হচ্ছে। ফলে মঙ্গলের গঠন ও আকৃতিতেও সূক্ষ্ম বদল আসছে। এইসবের জন্যই মঙ্গলের ঘূর্ণনের গতি বদলাচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। মঙ্গল থেকে খবর পাঠিয়েই যাচ্ছে ইনসাইট, আর সেইসব তথ্য থেকেই মঙ্গলের এই হঠাৎ বদলের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।