০৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ১০:১৩:৪২ অপরাহ্ন


দখল-দূষণে মৃতপ্রায় ঈশ্বরদীর পাঁচ নদী
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৮-২০২৩
দখল-দূষণে মৃতপ্রায় ঈশ্বরদীর পাঁচ নদী ছবি: সংগৃহীত


মৃতপ্রায় ঈশ্বরদীর পাঁচটি নদীর বেশিরভাগ জায়গা বেদখল হয়েছে। তীরবর্তী জমির মালিকরা নিজেদের নামে কাগজপত্র তৈরি করে দখল করেছে এসব নদী। সংকুচিত হতে হতে এসব নদী এখন হারিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীর মতো ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে বহমান কমলা নদী ও সুতা গাঙ এক সময়ে প্রাণবন্ত ছিল। পানিতে টইটম্বুর ছিল চিকনাই, রতনাই ও চন্ন্দ্রাবতী নদী। দখল ও দূষণে এগুলোর সবই এখন মৃতপ্রায়। বর্ষাকালে পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুক জুড়ে চলে চাষাবাদ।

মুলাডুলি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বহমান কমলা নদী এক সময় খরস্রোতা ছিল। সাঁড়া এলাকার ৪ নম্বর ঘাট থেকে পদ্মা নদী উত্পত্তিস্থল হলেও কালের বিবর্তনে সেটি এখন বোঝার উপায় নেই। দখল-দূষণে নাব্য হারিয়ে কমলা নদীর অস্তিত্ব সংকটের মুখে।

সাঁড়া থেকে বাঘইল অচিনতলা হয়ে পাকুড়িয়া পর্যন্ত ‘সুতা গাঙ’ নদী বিস্তৃত ছিল। বাঘইল এলাকায় মরা গাঙ নামেও এ নদী পরিচিত ছিল। দাশুড়িয়ার উত্তর পাশ দিয়ে বহমান ছিল ‘চন্দ্রাবতী’ নদী। সরু নালায় রূপ নিয়েছে এ নদীর কিছু অংশ। এ নদীর বেশিরভাগ জায়গা দখল হয়ে গেছে। বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন অনেকেই। বছর জুড়েই শুকিয়ে যাওয়া নদীতে চলছে চাষাবাদ।

সাহাপুর ও আওতাপাড়া এলাকার মাঝ দিয়ে রতনাই নদীর কিছু অংশ খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষাকালে পানি থাকলেও শুঙ্ক মৌসুমে নদীর বুক জুড়ে চলে চাষাবাদ। পদ্মা নদী থেকে এক সময়ে অরণকোলা-আটঘরিয়া হয়ে চাটমোহর চলনবিলে চিকনাই নদী প্রবাহিত ছিল। অরণকোলা এলাকায় এ নদীর আর কোনো চিহ্ন নেই।

ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে বহমান সব নদীর সঙ্গে এক সময়ে পদ্মার সংযোগ ছিল। খাল ছিল অসংখ্য। বেশিরভাগ খালের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। পদ্মা নদী থেকে রূপপুর, কামালপুর, দাদাপুর, চরকুড়ুলিয়া হয়ে পাবনা সদর অভিমুখি একটি ক্যানেল দিয়ে বর্ষাকালে পানি প্রবাহিত হয়।

মুলাডুলির জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কমলা নদীর ঐতিহ্য এখন আর নেই। এক সময় এ নদী দিয়ে নৌকা চলাচল করত। সেই নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষাকালে এ নদীর পানি উপচে ফসল নষ্ট হয়। এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে কমলা নদী খনন অত্যন্ত জরুরি।’

মুলাডুলির চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মালিথা বলেন, বর্ষাকালে মুলাডুলি অঞ্চলের খাল ও নালার সব পানি প্রবাহিত হয় কমলা নদীতে। নদী এখন ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষাকালে পানি উপচে দুই পাড়ের ফসলি জমি ও বাড়িঘর তলিয়ে যায়।

গবেষক ও লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে বেশ কয়েকটি ছোট নদী বহমান ছিল। এসব নদীর মধ্যে শুধু কমলা নদীর অস্তিত্ব কিছুটা আছে। অন্যসব নদীর জায়গা দখল হয়ে গেছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘জমি দখল হয়ে নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীখনন বা ড্রেজিং না করার কারণে ভরাট হয়ে নাব্য হারিয়ে ফেলছে। কোথাও কোথাও নদীর জমি স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের নামে কাগজপত্র করে নিয়েছেন। নদী দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ-অভিযান চালানো হয়। তবে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না থাকা ও লোকবলের সংকটের কারণে সব সময় উচ্ছেদ-অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’