চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা আহসান হাবিব। তাকে ‘আমপাগল’ নামেই চেনেন এখানকার মানুষ। এমনকি সাধারণ আম চাষিদের দাবি আদায়ের জন্যও কাজ করেন তিনি। তবে এবার তিনি নিজেই প্রতারিত হয়েছেন। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সরকারি সংরক্ষণাগারে আম রেখে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৪ জুন শিবগঞ্জ পৌর এলাকার একাডেমি মোড়ে অবস্থিত আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণের জন্য প্রায় ৩ টন আম রেখেছিলেন আহসান হাবিব। কিন্তু সংরক্ষণতো দূরের কথা, কয়েকদিন পরেই পচতে থাকে আম। তাৎক্ষণিক ক্রেতা না পেয়ে অল্প দামে বিক্রি করতে হয় আমগুলো। এছাড়া প্রায় ৩০ শতাংশের বেশি আম পচে নষ্ট হয়ে গেছে তার।
আমচাষি আহসান হাবীব বলেন, আমার বাগানের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদপ্রাপ্ত খিরসাপাত ও ল্যাংড়া প্রায় ৩ টন আম ছিল। একদিন একাডেমি মোড়ের সরকারি সংরক্ষণাগারের যে দায়িত্বে ছিলেন তিনি জানালেন তাদের এখানে কাঁচা আম ৯০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়। পরে বের করে কাঁচাই বিক্রি করা যায়। আমি চিন্তা করলাম এখনতো সবার গাছেই আম রয়েছে, তাই আমগুলো ঈদের পর বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।
এজন্য আমি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করি। তাদের পরামর্শে প্রায় ৩ টন ল্যাংড়া ও খিরসাপাত আম সেই সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণের জন্য রাখি। কিন্তু ২৫ জুন গিয়ে দেখি আমার আমগুলোতে পচন ধরেছে। এমন চিত্র দেখে আমি দিশেহারা হয়ে ক্রেতা খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু এই আম কেউ কিনতে চাচ্ছিল না। পরে আমার পরিচিত এক আড়তদারের হাতে পায়ে ধরে আমগুলো দিয়েছি। তবে কত করে দাম দেবেন তা এখনও জানাননি। এমনকি টাকাও দেননি। এতে আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এই আমচাষি আরও বলেন, আমগুলো যখন গাছ থেকে নামাই তখনই ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করা যেতো। কিন্তু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সরকারি সংরক্ষণাগারে রেখে আমি লোকসানে পড়লাম। আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের আমে এখন ৫০ হাজার টাকা পাবো কিনা সন্দেহে আছি। আমি এর ক্ষতিপূরণ চাই।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, আহসান হাবিবের আমগুলো বেশি পরিপক্ক ছিল আমরা বুঝতে পারিনি। মূলত এজন্যই আমগুলো ফেটে গেছে। তবে পচে যাওয়ার ঘটনা আমি জানি না। এখন আমাদের ফজলি জাতের আম রাখা আছে সেগুলোতো পাকছে না।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এস এম হাসানুজ্জামান বলেন, এ বিষয়টি আমি অবগত না। আর শিবগঞ্জের সংরক্ষণাগারটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। সেখানে আম রাখার আগে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম আমাকে জানাতে পারতেন। আপনি নিউজ করছেন নাকি। এসব নিউজ করার দরকার নেই। আমরা সেই আমচাষিকে অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতা করবো। এখন এমন নিউজ হলে অন্য চাষিরা ভয় পেয়ে যাবে। আমরা ওই ক্ষতিগ্রস্ত চাষির পাশে দাঁড়াবো।