প্রতিবছরই আল্লাহর নামে গরু কোরবানি দেন সময় টিভির সিনিয়র স্টাফ মাঈনুল ইসলাম। কিন্তু গত বছর কোরবানির হাট থেকে গরু কিনেও শেষ পর্যন্ত আর তা কোরবানি দিতে পারেননি। কারণ কোরবানির মাত্র একদিন আগেই মৃত্যু হয় সেই গরুটির।
হঠাৎ কেন গরুটির মৃত্যু ঘটল জানতে চাইলে মাঈনুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর দেশি গরু কিনলেও গত বছর সংকর প্রজাতির একটি গরু কিনেছিলেন তিনি। গরুটিকে কৃত্রিম উপায়ে (ইনজেশনের মাধ্যমে) মোটাতাজা করা হয়েছিল। বেশি মাংস পাওয়া যাবে ভেবে গরু কিনেন। আর তাতেই ঘটে এমন বিপত্তি।
মূলত তিন ধরনের গরু কোরবানির হাটে উঠে। দেশি গরু, বিদেশি গরু আর দেশি বিদেশির মিশেলে সংকর প্রজাতির গরু। মূলত বিদেশি আর সংকর প্রজাতির গরুগুলোকেই অসাধু খামারিরা নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, স্টেরয়েড হরমোন প্রয়োগ করা গরুর মাংস শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল তো করেই সেই সঙ্গে স্বাগত জানায় নানান জটিল রোগকেও। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা মাংস খাওয়ার সবচেয়ে ভয়াবহতা হলো বন্ধ্যাত্ব, উচ্চ রক্তচাপ, মুটিয়ে যাওয়া, হৃদ্রোগ ধরা পড়ে ইত্যাদি।
উন্নত দেশের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ পশু মোটাতাজাকরণের জন্য স্টেরয়েড, ইনজেকশন, হরমোন ট্যাবলেট নিষিদ্ধ করেছে। এসব নিষিদ্ধ ওষুধ যে শুধু মানুষের স্বাস্থ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে এমনটা কিন্তু নয়। পশু চিকিৎসকরা বলছেন, এমন ওষুধ প্রয়োগে বিপর্যয় নেমে আসে প্রাণিটির ওপরও।
কারণ দ্রুত মোটা তাজা করার চক্করে নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগের ২০-২৫ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে পশুটিরও মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই এমন পশু কখনই কোরবানি দেয়া উচিত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এমন পশু কেনা থেকে বিরত থাকুন। তাই আজ আপনাদের জানাব ভালো গরু চেনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
১। কোনো গরু সুস্থ, অসুস্থ নাকি কৃত্রিম উপায়ে মোটা তাজা করা তা দ্রুত চিনে নিতে পারবেন গরুর চামড়া দেখেই। কারণ চামড়া দিয়েই সহজে বোঝা যায়, একটি গরু কতটা রোগমুক্ত। সুস্থ গরুর চামড়ায় সব সময় একটা গ্লেসি ভাব এবং মাংসের সঙ্গে চামড়া টাইট হয়ে আটকে থাকবে।
২। স্বাভাবিক উপায়ে পালিত সুস্থ গরু কখনই ঘন ঘন দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস নেয় না। সুস্থ গরু দেখতে বেশ প্রাণবন্ত এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দ্রুতই হাঁটাচলা করতে পারে, যা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা গরু করতে পারে না।
৩। সুস্থ গরুর শরীরের মাংসে হাত দিয়ে চাপ দিলে ফোলাভাব থাকবে না। এসব গরুর ক্ষেত্রে নাকের ওপরের অংশ ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকে।
৪। সুস্থ গরুর সামনে খাবার দিলেই জিভ দিয়ে খাবার টেনে খেয়ে নিবে। সুস্থ গরুর চেনার আরও একটি উপায় হলো এসব গরুর পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়।
৫। ভালো গরু খুঁজে পেতে মিডিয়াম সাইজের গরু কেনাতেই প্রাধান্য দিন। কারণ সাধারণত বড় সাইজের গরুগুলোকে ইনজেকশন বা হরমোন ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। তাই কোরবানির জন্য বড় গরু কেনা থেকে বিরত থাকুন।
এসব লক্ষণ খুঁজে পেতে দিনের আলো থাকতে থাকতেই গরু কিনে নিতে চেষ্টা করুন। কেননা রাতের বেলায় এসব লক্ষণ সহজে পরখ করা সম্ভব হয় না। তাই এই ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস মেনে গরু কিনুন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এড়িয়ে চলুন।