২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০১:০২:০০ পূর্বাহ্ন


নতুন মায়ের যত্ন
ফারহানা জেরিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৫-২০২৩
নতুন মায়ের যত্ন ফাইল ফটো


সিজার বা সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তানের জন্মদান পরিচিত ঘটনা। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তানের জন্ম দিলে মায়ের শরীর যত তাড়াতাড়ি আগের অবস্থায় ফিরে যায়, অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে তা হয় না। এই অস্ত্রোপচারের পরে খুব সাবধানে, নিয়ম মেনে চলতে বলা হয় সেই মাকে, যাতে শারীরিক ভাবে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সহজ হয় তাঁর পক্ষে। চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, সি-সেকশন হওয়ার পরের ছ’সপ্তাহে নারীর দেহে নানাবিধ পরিবর্তন দ্রুত হারে ঘটতে থাকে, যা তাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। জরায়ু, গর্ভাশয় ইত্যাদির পরিবর্তন ছাড়াও হরমোনের ক্ষরণের তারতম্যও এই সময়ে লক্ষণীয়। আর একটি ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরি এ সময়ে। তা হল সংক্রমণের আশঙ্কা। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়ানোর ওষুধও দিয়ে দেওয়া হয় অস্ত্রোপচারের পরে। ভারী কিছু তোলা, ভারী কাজকর্ম করায় নিষেধাজ্ঞা থাকে, যা মেনে না চললে পরবর্তী কালে হার্নিয়ার মতো সমস্যা ডেকে আনতে পারে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় বলে সেই মহিলা সাময়িক ভাবে রক্তাল্পতায় ভুগতে পারেন, যা পুষ্টিকর খাবার-দাবারের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সহজ। এ ছাড়া সব মহিলাকেই সময় থাকতে জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রতিষেধক নিয়ে রাখার ব্যাপারে সচেতন করা প্রয়োজন।

যাঁরা সাধারণত বেশি বয়সে সন্তানের জন্ম দেন, ওজন বেশি থাকে, সিস্ট বা সেই ধরনের কোনও জটিলতা থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রেই সি-সেকশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। সি-সেকশনের পরে কোমরে ব্যথার সমস্যা বেশির ভাগ মহিলার ক্ষেত্রেই পীড়াদায়ক হয়ে ওঠে। আরও একটি বিষয়ে খুব সাবধানে থাকতে হয়। তা হল স্টিচের জায়গাটি যেন কোনও প্রকারেই সংক্রামিত না হয়ে পড়ে। ওই জায়গাটি সব সময়ে শুকনো রাখতে হবে এবং চিকিৎসক বলার পরেই তা উন্মুক্ত করবেন।

যত্ন ও সাবধানতা: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ারের নির্দেশানুসারে, মা হয়েছেন এমন সব মহিলাকেই নিজের ও সন্তানের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। সংক্রমণ, রক্তক্ষরণের মতো উপসর্গ দেখলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। গাইনিকোলজিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য উৎসাহিত করতে হবে সব মায়েদের। বাচ্চার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তো বটেই, তা ছাড়া মায়ের শরীরে অতিরিক্ত মেদবৃদ্ধি রোধ, ব্রেস্ট ও ওভারিয়ান ক্যানসারের সম্ভাবনা হ্রাস, ডায়াবিটিসের সম্ভাবনা কমানোর মতো উপকারিতাও রয়েছে এর। অস্ত্রোপচারের পরে চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে ধীরে ধীরে হাঁটার অভ্যেস শুরু করতে হবে। এতে ক্ষত নিরাময় দ্রুত হয়।’’ ডা. চট্টোপাধ্যায় আরও জানালেন, সি-সেকশনের ২১ দিনের মধ্যে গর্ভনিরোধক উপায় অবলম্বন করার দরকার হয় না। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট সময় বিরতি দিয়ে তার পরেই শারীরিক মেলামেশা শুরু করা উচিত। যাঁরা বুকের দুধ খাইয়ে সন্তানকে বড় করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মাসিক ঋতুস্রাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেক দেরিতে ফিরে আসে। তুলনায় ফরমুলা-মিল্কের উপরে নির্ভরশীল বাচ্চার মায়েরা সি-সেকশনের কিছু সময় পরেই ঋতুচক্র ফিরে পেতে পারেন। বুকের দুধ জমে গিয়ে ব্রেস্ট এনগর্জমেন্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঠিক পদ্ধতিতে এবং নিয়মিত ভাবে শিশুকে বুকের দুধ পান করালে বা তুলে রাখলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। সেঁক ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে এনগর্জড ব্রেস্ট সারানো না গেলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।

সুস্থ মা, সবল সন্তান: একটা সময়ের পরে শারীরচর্চার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া দরকার সি-সেকশন হওয়া মহিলাদের। প্রথম প্রথম অনেকে বেল্ট ব্যবহার করেন। কিন্তু শুধু বেল্টের ব্যবহারে অভ্যন্তরীণ কোনও পরিবর্তন হয় না। সন্তানের জন্মের ছয় কিংবা আট মাসের পর থেকে ঝুলে পড়া তলপেট পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে আনতে শারীরচর্চা বা যোগাভ্যাস শুরু করা দরকার। কোমরের ব্যথা সারিয়ে তোলার উপায়ও রয়েছে। সময়সাপেক্ষ হলেও তা অসাধ্য নয়। এর জন্য প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ধরনের লোয়ার ব্যাক এক্সারসাইজ় নিয়মিত করতে হবে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরেই একজন মা সাময়িক ভাবে অবসাদে ভুগতে পারেন। হরমোনের দ্রুত পরিবর্তনের কারণে মুড সুইং, প্রায়ই মেজাজ হারানো, এমনকি আত্মহত্যার চিন্তাও একজন মাকে গ্রাস করে ফেলতে পারে এ সময়ে। এ সময়ে পরিবারের বাকিদের সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একজন মায়ের শরীর ও মন যত ভাল থাকবে, তার সন্তানও ততই সুস্থ-সবল ভাবে বেড়ে উঠবে। তাই যথেষ্ট বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া ও নির্দিষ্ট বিরতির পরে শারীরচর্চা শুরু করা একান্ত প্রয়োজন।