বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। বিশেষ করে বয়স ৫০ বছর হওয়ার পর থেকে এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই ধরনের রোগকে বলা হয়, অ্যালজেইমার। এই অ্যালজেইমারের কারনে অনেক মানুষ তার অতীতের স্মৃতি পর্যন্ত ভুলে যায়। মানুষের ইমিউনিটি সিস্টেমে কোলাজেনের অভাব হতে শুরু করে। শারীরিক শক্তি এবং স্মৃতিশক্তি যোগান দিতে পারে না। এই সকল খাদ্য এবং পুষ্টির কারনে মতিষ্কের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়ে থাকে। এই সকল কারন ছাড়াও মানষিক কিছু কারন এই রোগ সৃষ্টির পিছনে দায়ি। অনেকেই কোন কাজে সহজেই সফলতা পেয়ে থাকে। অনেকে দেরিতে পেয়ে থাকে। অনেকে কখনও সফলতা পায় না। ঠিক এমনি হল আমাদের মতিষ্কের কাজ। অনেকে একটা বিষয় পড়ে সহজেই মনে রাখতে পারে। লিখতে, বলতে পারে সেই লেখার সারাংশ। অনেকে মুখস্থ করেও বলতে পারে না। এই সকল সমস্যা দূর করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার উপায় নিয়ে এই পোস্ট। কিভাবে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা যায়? বিষয়টা জানতে পোস্টের শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার সহজ কয়েকটি কৌশল: স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য অনেক কাল আগে থেকেই বিজ্ঞান কাজ করে যাচ্ছে। বিজ্ঞানের এই সকল আবিস্কার আমাদের জানিয়ে দিয়েছে কিভাবে স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায় এবং আগাম স্মৃতিশক্তি হ্রাস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রাগ, ক্ষোপ, মানুষিক চাপ ও বিষন্নতা দূর: একটা কথা আছে যার জ্ঞান এবং বুদ্ধি বেশি তাকে রাগানো অনেক কঠিন একটা বিষয়। জ্ঞানের এই স্মৃতিশক্তিকে পরীক্ষা করার জন্য অনেক কৌশল আবিস্কার করেছে বিশ্বের নামী-দামী কোম্পানিগুলো। মানুষের রাগ, ক্ষোপ, মানুষিক চাপ বা বিষন্নতা স্মৃতিশক্তি হ্রাস করে ফেলছে। এটাকে নিয়ন্ত্রন করা অনেক কঠিন বিষয়। যত তাড়াতাড়ি কেউ রাগলে তার জ্ঞান ততটুকু এটাই বোঝা যায়। মানুষিক চাপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে বিষন্নতা। রক্তে কটিসলের লেভেল বেড়ে গেলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। এই লেভেল স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখতে পারলে সহজেই তা দমন করা যায়। এই কটিসল লেভেলের উপর নির্ভর করে আপনার মানুষিক চাপ। তবে এই কটিসলের লেভেল স্বাভাবিক রাখতে বিষন্নতাকে বিদায় জানাতে হবে। তবে আপনের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন: কোলাজেনের অভাবে কারনে অনেকের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। বয়স ৫০ বছরের বেশি হয়ে গেলে শরীরে কোলাজেন উৎপাদন হ্রাস পেয়ে থাকে। তখন বাইরে থেকে কোলাজেনযুক্ত খাবার গ্রহন করা উচিত। কোলাজেন বৃদ্ধি পেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। যে সকল ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি খাবেন তার মধ্যে সুষম খাবারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। মানবদেহে ২৫% জল থাকে। পরিমিত জল পান করতে হবে। প্রচুর শাকসবজি, মাছ, মাংশ, ডিম, দুধ, ঘি, গমের রুটি প্রভূতি খাবার গ্রহন করুন। এতে বয়স বাড়লেও কোলাজেন উৎপাদন করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করবে। ধুমপান ও অ্যালকোহল থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
লিখে রাখুন: যা শিখছেন সেটা নতুন হয়ে থাকলে লিখে রাখুন। এতে আপনার একটা পয়েন্ট ভুলে গেলে ২য় বার দেখলে সেটা স্মৃতিতে স্থায়ী করে নিবে। প্রতিদিন কি করবেন সেটা লিখে রাখুন এবং রাতে ঘুমানোর আগে একবার হলেও সেগুলোর রিভিও ভাবুন নিজে নিজে। এতে করে আগামীকাল কি করতে হবে সেই বিষয়ে একটা খসরা হয়ে যাবে। এই কারনে ব্যক্তিগর ডায়রীতে, ইমেলে অথবা ব্লগে নিজের লেখা লিখে রাখুন। খাতা কলমে অথবা প্রযুক্তিগত কোন ডিভাইসে লিখে রাখলে সেটা মতিষ্কের রক্তে প্রবাহের সাথে অক্সিজেন পরিবহন করে থাকে। ফলে সেই বিষয়টা ভুলা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
প্রতিদিন ব্যায়াম করা: প্রতিদিন ব্যায়াম করলে আপনার স্বরনশক্তি বৃদ্ধি পাবে। দেহের কাঠমো, স্মৃতিশক্তি, গঠন ইত্যাদি নির্ভর করবে শরীরে খাদ্যের যোগানের উপর। প্রতিদিন ব্যায়াম করলে রক্তের সঞ্চালন খুব দ্রুত হয়। কোষে খাদ্যের চাহিদা পূরঙ্করে থাকে। ব্রেনেও রক্তের সঞ্চালন হয় খুব ভালভাবে। ফলে শারীরিক বৃদ্ধিসহ পুষ্টির যথেষ্ঠ চাহিদা পূরন হয়। প্রতিদিন ব্যায়াম করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম: মগজের ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার অন্যতম একটা উপায় হল পরিমিত পরিমান ঘুমানো। অনেকেই সারা রাত জেগে কাজ করে থাকে। প্রতিদিন আমাদের ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। সেই ঘুম হতে হবে একটা নিদিষ্ঠ সময়ে। ঘুমানোর উপযুক্ত সময় ৯-১০ টার মধ্যে। ঘুম থেকে উঠবেন ভোর ৪ থেকে ৫ টার মধ্যে। এটাই উপযুক্ত সময় ঘুমানোর। ভোরের বাতাস এবং আবহাওয়া থাকে সুন্দর ও নির্ভেজাল। বায়ু দূষন থাকে না বললেই চলে। এই সময়ে শরীরের মধ্যে যথেষ্ঠ শক্তি সরবরাহ করে থাকে। শরীর থাকে চাঙ্গা ও প্রানবন্ত।
অবসর সময়ে বেড়ানো: জীবনে সফলতার জন্য কাজের বিকল্প নেই। এই কাজের মাধ্যমেই সফলতা আসে। তবে এই না যে সারাদিন, রাত শুধু কাজ নিয়ে থাকবেন। সব সময় কাজ করলে সেই কাজ শুদ্ধ হওয়ার চেয়ে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কয়েক গুন। অবসর সময় গুলোতে ঘুরতে যান। এতে আপনার ব্রেন যেমন প্রশান্তি পাবে তেমনি কাজ পুরাদমে করতে পারবেন। বিভিন্ন জায়গা ভ্রমন করুন। বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করার মাধ্যমে মতিষ্কের প্রসার ঘটে থাকে। তাই অবসর সময়ে ভ্রমণ করুন।
কিছু সময় গানের সাথে অতিবাহিত করা: বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে প্রমান করেছে যে, যে সুর তার ভাল লাগে সেই ধরনের গান শুনুলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। তাই কিছু সময়ের জন্য গানে সময় অতিবাহিত করা। এই সময়ে মতিষ্কে আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। এই আন্দোলনের ফলে মতিষ্কের মধ্যে ভাল লাগার সৃষ্টি হয়। ফলে মতিষ্কে স্বরনশক্তি বৃদ্ধি পায়।
ঘুম ভাঙ্গার পর যা করবেন: স্বরনশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য মেডিটেশন করা খুব দরকারি। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার উচিত কিছু সময় মেডিটেশন করা। মতিষ্কে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও মনযোগ বৃদ্ধি করার অন্যতম উপায় সকালে কিছু সময় মেডিটেশন করা। এভাবে একদম প্রতিদিন করতে হবে। গতকাল যে করেছেন সেই সম্পর্কে কিছু ধারনা এবং আজকে যা করবেন সেই নিয়ে গবেষনা করবেন। নিজে নিজে এই কাজটা করবেন। গতকাল এবং আজকের পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করবেন। এইভাবে কাজ করলে স্বরনশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
অন্যকে জ্ঞান দান করা: যে বিষয় নিজে জানেন, সেই বিষয়ে অন্যকে জ্ঞান দান করতে পারেন। এতে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। যে বিষয়ে নিয়ে আপনার পড়াশুনা সেই বিষয় বারবার কাউকে শিখানো হলে সেই বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই নিজে যতটুকু জানেন ততটুকু অন্য কাউকে শিখানোর চেস্টা করুন।
কফি পান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: কফিকে বলা হয় psychoactive ড্রাগ। যা মানুষের শরীরে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে থাকে।কফি পান করার আগে চিকিৎসকের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করে নিবেন। একটা গবেষনা থেকে জানা যায় যে, ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার আগে কফি পান করে থাকে। যারা কফি পান করেছে তাদের এবং যারা পান করে নাই তাদের নিয়ে গবেষনা করা হয়েছিল। যে সকল ছাত্র-ছাত্রী কফি পান করেছে তাদের স্মৃতিশক্তি বেশি থাকে। তবে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন থাকলে ডাক্টারের সাথে পরামর্শ করে পান করবেন।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার এই সকল ব্যাখ্যা বিজ্ঞান ভিত্তিক। এই সকলের ধারনার মধ্যে সবার সব কাজ করবে না। উপরের কোনটি আপনার জন্য কাজ করবে এই বিষয়ে আপনেই ভাল জানেন। তবে যেটা আপনার জন্য ভাল সেই বিষয় গ্রহন করবেন। এই বিষয়ে পরবর্তি পোস্টের জন্য অপেক্ষা করুন। আপনার কোন মতামত থাকলে কমেন্টস বলতে পারেন।