২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১১:১১:২৬ পূর্বাহ্ন


মানুষ প্রেমে পড়ে ৯০ সেকেন্ডে
ফারহানা জেরিন:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
মানুষ প্রেমে পড়ে ৯০ সেকেন্ডে ফাইল ফটো


কেউ বলে এটি একটি অনুভূতি মাত্র, কেউ বলে এটি একটি ম্যাজিক্যাল ইমোশন। আবার কারও কারও মতে এটি কেবলই মস্তিষ্কের হরমোনের খেলা। ভালোবাসার সত্যিকারের সংজ্ঞা আসলে কী?

সুন্দর, মোহময়, আনন্দদায়ক একইসঙ্গে হৃদয়বিদারক কিংবা বিধ্বংসী হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয় ভালোবাসাকে। কিন্তু তারপরেও মানুষ কেন ভালোবাসে? ভালোবাসার অনুভূতি আসলে কেমন? কীভাবে এর শুরু? আর এর উৎপত্তিস্থলই বা কোথায়? ভালোবাসা কি কেবলই মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নাকি এর পেছনে রয়েছে যৌক্তিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?

বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো তার সিম্পোজিয়ামে বলেছেন, ভালোবাসা মানুষকে পূর্ণতা দেয়। অর্থাৎ এটি হলো প্রেমের সেই শুদ্ধতম পর্যায় যেখানে কামনা বাসনার কোনো স্থান নেই। অন্যদিকে, বার্ট্রান্ড রাসেল প্রেম-ভালোবাসার মধ্যে যৌনতাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আসলেই কি তাই? মানুষ কি তার একাকিত্ব কিংবা কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে ভালোবাসে নাকি যৌনতার ছদ্মনাম ভালোবাসা?

বিজ্ঞানীদের মতে, যখন কাউকে ভালো লাগে তখন মস্তিষ্কে একধরনের রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ হয়। ফলে ব্যক্তির মনে একটি সুখানুভূতির সৃষ্টি হয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, একজন ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ৯০ সেকেন্ড থেকে ৪ মিনিট সময় নেয়। মজার ব্যাপার হলো, মানুষের মস্তিষ্ক প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির কিছু বিষয় বিবেচনা করে। এ ক্ষেত্রে ৫৫ শতাংশ মানুষ অঙ্গভঙ্গি বা বাহ্যিক রূপ দেখে প্রেমে পড়ে, ৩৮ শতাংশ কণ্ঠস্বর ও কথা বলার ভঙ্গি এবং মাত্র ৭ শতাংশ তাদের মূল বক্তব্য শুনে প্রেমে পড়ে।

প্রেমের তিনটি স্তর

যুক্তরাষ্ট্রের রটগার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেলেন ফিসার জানান, প্রেমের তিনটি স্তর রয়েছে। এই তিনটি স্তরের প্রতিটি স্তরই ভিন্ন ভিন্ন হরমোন ও রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা পরিচালিত হয়। স্তরগুলো হলো- ভালোবাসার ইচ্ছে, আকর্ষণ ও সংযুক্তি।

ভালোবাসার ইচ্ছে

এটি প্রেমের প্রথম স্তর। যখন কাউকে ভালোলাগে তখন তাকে ভালোবাসার ইচ্ছে থেকে ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হয়।

আকর্ষণ

কাউকে দীর্ঘদিন ধরে ভালোলাগার ফলে তার প্রতি একধরনের আকর্ষণবোধ সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীদের মতে এই স্তরের সঙ্গে তিনটি নিউরোট্রান্সমিটার জড়িত। অ্যাড্রেনালিন, ডোপামিন ও সেরোটোনিন। নিউরোট্রান্সমিটার হলো একধরনের অ্যান্ড্রোজেন রাসায়নিক যা আপনার এক নার্ভ সেল থেকে অন্য নার্ভ সেলে বিশেষ সংকেত দেয়।

অ্যাড্রেনালিন

প্রিয় মানুষটিকে দেখলে বা তার সঙ্গে কথা বলার সময় যদি কিছুটা নার্ভাস হয়ে যায় কিংবা ঘাম ঝরে, হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যায় ও গলা শুকিয়ে আসে, তার মানে হচ্ছে এটি প্রেমে পড়ার প্রাথমিক পর্যায়। মূলত শরীরের অ্যাড্রেনালিন গ্রন্থি ও কর্টিসলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ার কারণেই এমন হয়।

ডোপামিন

গবেষকদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সদ্য প্রেমে পড়া ছেলেমেয়ের মস্তিষ্কে উচ্চমানের ডোপামিন নিঃসরিত হয়। এই রাসায়নিক পদার্থটি মূলত প্রিয় ব্যক্তিকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। মজার ব্যাপার হলো, এক ফোঁটা কেকেন মস্তিষ্কে যে পরিমাণ উত্তেজনা সৃষ্টি করে ডোপামিনও এর ব্যতিক্রম নয়। ডোপামিনের নিঃসরণ বেশি হলে শক্তি বাড়ে, ঘুম ও খাওয়ার চাহিদা কমে যায়, সেই সঙ্গে বেড়ে যায় মনোযোগ।

সেরোটোনিন

সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ এই হরমোনটিই নির্ধারণ করে মানুষ কখন ও কীভাবে প্রেমে প্রেমে পড়ে। সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ-তরুণীদের ব্লাড টেস্ট করে দেখা গেছে, তাদের রক্তে ও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির রক্তের সেরোটোনিনের পরিমাণ একই মাত্রায় রয়েছে। এই আসক্তির কারণেই প্রেমে পড়লে মানুষের চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। নতুন যুগলরা স্বাভাবিকভাবে তাদের সম্পর্ককে অন্য যেকোনো সম্পর্কের তুলনায় আলাদা ও গুরুত্বপূর্ণভাবে। এই দৃষ্টিভঙ্গিই তাদের ভালোবাসাকে পরিণতি দিতে সাহায্য করে।

সংযুক্তি

এটি ভালোবাসার শেষ স্তর। দীর্ঘকাল একসঙ্গে থাকার পর দুজনই দুজনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। এ সময়টাতেই মূলত তারা ঘর বাঁধে। বিজ্ঞানীদের মতে এই অনুভূতি দুটি হরমোনের কারণে হয়। অক্সিটোসিন ও ভ্যাসোপ্রেসিন।

অর্থাৎ ভালোবাসা কেবলই মনস্তাত্ত্বিক কিংবা দার্শনিক ব্যাপার নয়, এটি বৈজ্ঞানিক ব্যাপারও বটে!