নভেম্বরে বক্সিং দুনিয়া সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল মাইক টাইসন ও জ্যাক পলের অসম বক্সিং লড়াই। যে ম্যাচে ১৯ বছর রিংয়ে ফেরা কিংবদন্তী টাইসনের বেদনাদায়ক হার এখনও হজম করতে পারেননি অনেকে। তবে সেই স্মৃতি পেছনে ফেলে ফের রাজধানীতে জমজমাট বক্সিংয়ে বুঁদ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন দেশের বক্সিংপ্রেমীরা।
গতকাল জনপ্রিয় ক্রিড়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজম্যান্টে উদ্যেগে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে জমকালো বক্সিং আসর ‘এক্সেল কনটেন্ডার সিরিজ’। মিরপুরের অ্যারো টার্ফে জমকালো আসরে একের পর টানটান উত্তেজনাকর ম্যাচ উপহার দিয়েছেন দেশসেরা বক্সাররা। শেষ পর্যন্ত রেফারির রায়ে কারও হৃদয় ভেঙেছে, কেউ হেসেছেন বিজয়ের হাসি।
অ্যরো টার্ফে আসর শুরু হয় বিকেল চারটার পর। তবে এর আগেই সেখানে আসতে শুরু করেছিলেন দশর্করা। প্রথমে সুপার মিডল ক্যাটাগরিতে মুখোমুখি হন রতন হোসাইন ও শাহরিয়ার শান্ত। যেখানে রতন অনায়াসে হারান শান্তকে। পরের ফেদার ওয়েটের বাউটে জয়ী হন রাকিব হোসাইন। সুপার ওয়েল্টার ওয়েট ক্যাটাগরীর তৃতীয় বাউটটি ছিল হাইভোল্টেজ লড়াই। রিংয়ের ‘দ্য বুল’ খ্যাত আল আমিনের প্রতিপক্ষ ছিলেন মোহাম্মদ খালিদজ্জুমান। বাংলাদেশ গেমসের স্বর্ণজয়ী বক্সারের সামনে দাড়াতেই পারেননি খালিদ। চার রাউন্ডের বাউটটিতে একচেটিয়া আধিপত্য দেখানো আল আমিন জিতেছেন তিন রেফারির সম্মিলিত রায়ে।
এরপর সুপার ওয়েল্টার ওয়েটের বাউট জিতেন ইমন তঞ্চঙ্গা। নিজ নিজ বাউটে মোহাম্মদ মুন্না ও মনজুর আলম জিতেছেন অনায়াসেই। এরই মধ্যে অ্যরো টার্ফে বিকেল গড়িয়ে নেমেছে সন্ধ্যা। তবে আসরের মুল আকর্ষণের দুই বাউট তখনও বাকি। ততক্ষণে টিকেট কেটে আসা দশর্কদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ টার্ফের গ্যালারি। বাইরে থেকেও খেলা উপভোগ করছিলেন অনেক বক্সিংপ্রেমী। ইভেন্টের সপ্তম বাউটে মুখোমুখি হন নারী বক্সিংয়ের দুই সেনসেশন সানজিদা জান্নাত ও আফরা খন্দকার। জ্যাব, পাঞ্চ, আপার কাটে ছয় রাউন্ডের বাউটে লড়াই চলে হাড্ডাহাডি। মিনিমাম ওয়েটের অবশ্য শেষ পর্যন্ত অল্প ব্যবধানে বিজয়ী সানজিদা। স্বীকৃত বক্সিংয়ে এ নিয়ে ছয় ম্যাচে চতুর্থ বিজয় তুলে নিয়েছেন তিনি। বাকি দুটি ড্র।
ইভেন্টর শেষ রাউন্ডে রিংয়ে নামেন বক্সিংয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচিত উৎসব আহমেদ। ব্যানথাম ওয়েটে তার প্রতিপক্ষ ছিলেন মোহাম্মদ ইয়াসিন। এমএমএ চ্যাম্পিয়ন হলেও পেশাদার বক্সিংয়ে পর্যন্ত হারের মুখ না দেখা উৎসবকে হারাতে রিংয়ে বিশেষ কিছুই করতে হতো তাকে। শেষ পর্যন্ত সেটি পারেননি ইয়াসিন। রিংয়ে আরও একবার নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে পেশাদার বক্সিংয়ে টানা নিজের নবম জয় তুলে নেন উৎসব। ছয় রাউন্ডের বাউটে মাঝে একটু চাপে পড়লেও দারুণভাবে সামলে জয়ী হয়েই মাঠ ছাড়েন এই ডব্লিউবিসি এশিয়ান সিলভার টাইটেল বিজয়ী।
সফল এই আয়োজন নিয়ে স্বার্থকতার তৃপ্তির ঢেঁকুড়ই তুললেন এক্সেল স্পোর্টস প্রমোশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট এর চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আদনান হারুন। নিজে একজন বক্সার হওয়ায় ভালোই জানেন বাংলাদেশে এই খেলাটির সম্ভাবনার কথা, রাখেন প্রতিবন্ধকতার খবরও। তাইতো এমন আয়োজনের পর বললেন, ‘এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র আমাদের দেশি বক্সারদের উজ্জ্বীবিত করা। আমরা প্রায়ই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলি, তবে সেভাবে নিজেদের তৈরি করতে পারছি না। এমন টুর্নামেন্টের মাধ্যমে এদেশের আরো নতুন নতুন বক্সারকে সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।’