প্রেমিক-প্রেমিকা পালিয়ে বিয়ে করবে, তাই বান্ধবীকে খুন করে নৃশংসভাবে মুখ পুড়িয়ে দিল তারা! ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গ্রেটার নয়ডায়। ২২ বছরের তরুণীর রহস্যমৃত্যুর তদন্তে নেমে শিউরে উঠেছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত মাসে হেমা চৌধরি নামে মথুরার এক তরুণীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় ডায়েরি করেন তাঁর পরিবার। হেমাকে খোঁজার তদন্তে পুলিশ জানতে পারে তাঁর বন্ধু অজয় ঠাকুরের কথা। অজয়ের আর প্রেমিকা পায়েল ভাটি দিন কয়েক আগে আত্মহত্যা করেছেন বলেও জানতে পারে পুলিশ। অজয়ের প্রেমিকা আত্মঘাতী, বান্ধবী নিখোঁজ– এই দুইয়ের মধ্যে কোনও যোগসূত্র থাকলেও থাকতে পারে কি! এই পথেই এগোয় তদন্ত। তদন্তের শেষে যা সামনে এসেছে, তা জানার পরে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে গেছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, দাদরি এলাকার বদপুরা গ্রামের বাসিন্দা পায়েল ভাটির সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয় নয়ডার অজয় ঠাকুরের। অল্প দিনের মধ্যেই প্রেমে পড়ে তারা, বিয়ে করবে বলে ঠিক করে। কিন্তু পায়েলের পরিবার এই বিয়ে মেনে নেবে না। তাই বাড়ি থেকে পালাবে বলে ঠিক করে তারা। আশঙ্কা করে, পায়েলের পরিবার পিছু নিতে পারে তাদের এবং পায়েলকে তারা ছেড়ে দেবে না কিছুতেই। তাই পায়েল ছক কষে, এমন কিছু করতে হবে, যাতে সে পালিয়ে যাওয়ার পরে তার খোঁজই না করে পরিবার। এটা একমাত্র তখনই সম্ভব, যদি সে মারা যায়।
এই ষড়যন্ত্র সফল করতেই মারাত্মক পরিকল্পনা করে পায়েল। সঙ্গে নেয় অজয়কেও। তারা অজয়ের বান্ধবী হেমাকে বেছে নেয়, পায়েল সাজিয়ে খুন করার জন্য। হেমার সঙ্গে পায়েলের চেহারারও খুব মিল ছিল, এই সুযোগটাই কাজে লাগায় যুগল।
পুলিশ জানিয়েছে, ১২ নভেম্বর হেমাকে অপহরণ করে নিয়ে বদপুরার গ্রামে পায়েলের বাড়িতে যায় অজয়। সেখানেই অজয় আর পায়েল মিলে প্রথমে হেমাকে গলা টিপে খুন করে। তার পরে তারা হেমার দেহে পরিয়ে দেয় পায়েলের পোশাক। এর পরে হেমার হাতের কব্জির শিরাও কেটে ফেলে তারা, যাতে দেখে মনে হয়, আত্মহত্যা করেছে সে। সব শেষে হেমার মুখে গরম তেল ঢেলে পুড়িয়ে দেয় তারা, যাতে তার মুখ দেখে চিনতে না পারে কেউ। এর পরে পায়েলের বয়ানে একটি সুইসাইড নোটও লেখে তারা।
গোটা চিত্রনাট্য এমনভাবে সাজানো হয়, যাতে দেখে মনে হয় পায়েলই আত্মহত্যা করেছে। হয়ও তাই। পায়েলের পরিবারের সদস্যরা দেহ উদ্ধার করে। সুইসাইড নোট দেখে সকলেই ধারণা করেন, আত্মঘাতী হয়েছে পায়েল। পুলিশের রিপোর্টেও তাই ছিল। নিয়ম মেনে সৎকার হয়ে যায় দেহ।
এদিকে হেমার পরিবার বিশরখ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করলে, তদন্ত করতে করতে আসল সত্য উন্মোচন করে পুলিশ। জানা যায়, পায়েল মারা যায়নি। প্রেমিক অজয়ের সঙ্গে সুখে সংসার করতে চলেছে সে। কিন্তু সেই ‘সুখের’ মাসুল দিতে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে খুন করেছে হেমা চৌধরিকে। পায়েল ও অজয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা জেরার মুখে স্বীকার করেছে খুনের কথা।