বর্তমানে অনেক নারীই ৩০ বছরের পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। এরপরই গর্ভধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। আর তখনই অনেকে পড়েন বিপাকে। অনেক চেষ্টা করেও তখন গর্ভধারণ করতে পারেন না। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত হলো, ৩০ বছরের পর থেকেই নারীর উর্বরতা কমতে শুরু করে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী, ১২-৫০ বছর বয়স পর্যন্তই থাকে নারী উর্বরতা। অর্থাৎ এই বয়সের মধ্যে মা হওয়া সম্ভব। তবে ৩০ এর পর থেকে বিশেষ করে ৩৫ বছর বা তারও বেশি বয়সে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে নারীকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
এক্ষেত্রে হবু মা ও গর্ভস্থ শিশু দু’জনেরই নানা শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে। এ বিষয়ে স্ত্রী ও ধাত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমবার মা হওয়ার আদর্শ বয়স ২৫-৩০ বছর ৬ মাসের মধ্যে। এরপর থেকে যারা যারা প্রথম বার মা হতে চলেছেন তাদের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩০ এর পর মা হলে নিউরাল টিউব ডিফেক্ট নামে এক ধরণের জন্মগত ত্রুটির কারণে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কোনোভাবেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না।
এ বিষয়ে ভারতের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাসুদেব মুখোপাধ্যায়ের জানান, প্রতিবছর লাখ লাখ শিশু নানা ধরনের শারীরিক অপূর্ণতা নিয়ে জন্মায়। এর বিভিন্ন কারণের মধ্যে একটি হলো বেশি বয়সে মা হওয়া। তাই ৩০ বছর পর যারা মা হতে চান তাদের কিছু আগাম সতর্কতা মানা জরুরি। জেনে নিন কী কী?
>> মা হওয়ার পরিকল্পনা করতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রস্তুতিপর্ব থেকেই নিয়ম করে ফলিক অ্যাসিড ওষুধ খাওয়া জরুরি।
>> সম্প্রতি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোশিয়েশনের ‘সারক্যুলেশন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গেছে, সন্তান ধারণের আগে হবু মায়ের হৃদযন্ত্র পরীক্ষা করোনো জরুরি।
অন্যদিকে গর্ভদারণের পর ১৮-২০ সপ্তাহ বয়সে ফিটাল আলট্রা সাউন্ডের সাহায্যে ভ্রুণের হৃৎপিণ্ডের পরিষ্কার ছবি পাওয়া যায়।
>> বেশি বয়সে মা হওয়া নারীরা হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সির গ্রুপে পড়েন। তাই গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই ফিটাল মেডিসিন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরি।
>> গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বাড়তি সাবধানতা নেওয়া উচিত। প্রয়োজনীয় ওষুধ যেমন- ফলিক অ্যাসিড ও অন্য ওষুধ খেতে ভুললে চলবে না। এ সময় মানতে হবে কোভিড বিধিও।
>> হবু মায়ের সুগার বা থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে এইচবিএ১সি টেষ্ট ও গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা প্রয়োজন।
>> থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে অনেক সময় ভ্রূণ স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে না। টিথ্রি, টিফোর, টিএসএইচ টেস্ট করিয়ে স্বভাবিক ফল পেলেও অনেক সময়ে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যের কারণেই গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
এক্ষেত্রে অ্যান্টি টিজি অ্যান্টিবডি ও টিপিও পরীক্ষা করানো দরকার। এর সাহায্যে থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য জেনে নিয়ে ওষুধ খাওয়া দরকার।
>> এছাড়া হবু মায়ের রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যা বা ব্লাড ক্লটিং ডিসর্ডার থাকলে, সেক্ষেত্রে মিসক্যারেজের ঝুঁকি বাড়ে।
তাই ৩০ বছরের পর যারা প্রথম সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব পরীক্ষা করিয়ে তবেই গর্ভধারণের চেষ্টা করুন।