বাড়ির বড়রা সবসময়েই বলেন বেশি করে জল খেতে। কিন্তু সে কথা আর ক’জন আর শোনেন? অফিসে সারাদিন বসে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের তো বিপত্তি আরও বেশি। একেই সারা ক্ষণ বসে থেকে পেট-কোমরের মেদ বাড়ে। তার উপরে শরীরচর্চার অভ্যাস নেই, জল কম খাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে শরীরে নানাবিধ রোগ বাসা বাঁধতে থাকে কম বয়স থেকেই। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কিডনির। ক্রনিক কিডনির রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। কিডনিতে পাথরও জমছে। এর কারণই হল রোজের জীবনের কিছু খারাপ অভ্যাস। অজান্তেই সেই ভুলগুলি করে চলেছেন বেশির ভাগই। ফলে কিডনির ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কম বয়স থেকেই।
রোজের কোন তিন অভ্যাসে কিডনির ক্ষতি হয়?
অতিরিক্ত নুন খাওয়া
কিডনি শুধু শরীর থেকে রেচন পদার্থই বার করে না, তার ভূমিকা আরও বেশি। যেমন— রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কিডনি। কিন্তু যদি সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন বিপত্তি ঘটবে। রোজের খাবারে যদি বেশি পরিমাণে নুন খাওয়া শুরু করেন কেউ, তা হলে কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়বে। প্রথমত রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় অতিরিক্ত সোডিয়াম। বলা হয়, কাঁচা নুন খেলে সোডিয়ামের মাত্রা আরও বাড়ে। তাতে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্কটও বাড়ে। এরই পাশাপাশি, স্ট্রোক এবং হার্টেক অসুখের আশঙ্কাও বেড়ে যায় নুন বেশি খেলে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, দিনে দেড় চা চামচের বেশি নুন কারও খাওয়া ঠিক নয়। এই পরিমাণ নুনে থাকে ৩৪০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম। এর চেয়ে বেশি সোডিয়াম শরীরে গেলে কিডনির ক্ষতি হবে।
মুঠো মুঠো ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস
সামান্য ব্যথা-বেদনা হলে চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়াই মুড়ি-মুড়কির মতো ‘পেন কিলার’ কিনে খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। কিন্তু এ ভাবে মর্জি মতো ওষুধ ক্রমাগত খেতে থাকলে শরীরে নানা রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে কিডনির ক্ষতি সবচেয়ে আগে হবে। খোলা বাজারে যা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়, তার মধ্যে প্রধান হল এনসেড বা নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি গোত্রের ওষুধ৷ যেমন ডাইক্লোফেনাক, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন ইত্যাদি৷ ব্যথা কমানোর পাশাপাশি ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহও কমায় বলে এই সব ওষুধে চটজলদি কাজ হয়। চিকিৎসকেরা বলেন, ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসককে দেখানো খুব জরুরি। ডোজ় না জেনেই যদি বেশি মাত্রায় ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়, তা হলে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যাবে।
মিষ্টি দেওয়া পানীয়
বেশি চিনি দেওয়া পানীয় অনেকেরই পছন্দ। নরম পানীয় বা প্যাকেটজাত পানীয় দেখলেই লোভ হয়। বাড়িতে শরবত বানালেও তাতে একগাদা চিনি ঢালেন অনেকেই। মিষ্টি না হলে ফলের রসও ভাল লাগে না। চিনির প্রতি এই আসক্তি সহজে যেতে চায় না। বেশি মিষ্টি দেওয়া পানীয় খেলে কিডনির ক্ষতি বেশি হবে। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী পরামর্শ দিচ্ছেন, বেশি চিনি দেওয়া শরবত খেতে ইচ্ছা হলে বদলে এক গ্লাস জল খেয়ে নিন। প্রথম প্রথম অসুবিধা হবে, তবে পরে অভ্যাস হয়ে যাবে। আবার ধরুন, মিষ্টি মিল্ক শেক খেতে ইচ্ছা হল, বদলে চিনি ছাড়া গ্রিন টি বা ভেষজ চা পান করুন। কালো কফিও ‘সুগার ক্রেভিং’ কমাতে পারবে।