ইমিউনোথেরাপিতে ক্যানসার নির্মূল করার চেষ্টায় অনেকটাই সফল হলেন গবেষকেরা। নতুন এক ওষুধ তৈরি হয়েছে যা ক্যানসার আক্রান্তের উপর প্রয়োগ করলে যন্ত্রণাদায়ক রেডিয়োথেরাপি বা কেমোথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হবে না বলেই দাবি গবেষকদের। ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যানসার রিসার্চ’ (এএসিআর) নতুন একটি ওষুধ তৈরি করেছে যার নাম ডস্টারলিমাব। এই ওষুধটি ক্যানসার সারাতে দিশা দেখাচ্ছে বলেই দাবি। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ এই গবেষণা বিষয়ক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
খাদ্যনালি, মলদ্বার, কোলন, মূত্রনালির ক্যানসারের চিকিৎসায় এই নতুন ওষুধটি কার্যকরী হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ১০৩ জন ক্যানসার রোগীর উপরে ওষুধটি প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন অনকোলজিস্ট আন্দ্রে সারসেক ও চিকিৎসক লুইস ডিয়াজ।
ইমিউনোথেরাপি কী?
ক্যানসার চিকিৎসায় ক্রমেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে ইমিউনোথেরাপি নামের এক চিকিৎসাপদ্ধতির। কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের বাইরে এই চিকিৎসা আশার আলো দেখাচ্ছে বহু ক্যানসার রোগীকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় প্রতি পাঁচ জনে এক জন ক্যানসারে আক্রান্ত। ২০২২ সালের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বিশ্বে প্রায় ২ কোটি মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। আর ক্যানসারের চিকিৎসা মানেই আতঙ্ক। রেডিয়োথেরাপি বা কেমোথেরাপিতে রোগীর যন্ত্রণা বাড়ে। ক্যানসার কোষগুলির পাশাপাশি সুস্থ কোষগুলিরও ক্ষতি হতে থাকে, ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তছনছ হয়ে যায়।
ইমিউনোথেরাপি রোগীর এই যন্ত্রণাই কমাতে সাহায্য করে। এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগীর শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহু গুণে বাড়িয়ে তুলে ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাজ কেবল জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করাই নয়, কোষ ও কলাগুলি যাতে সুবিন্যস্ত, সুগঠিত থাকে তার উপর নজর রাখা। সেটা যেন গোটা শরীরের উপরেই এক ‘নজরদারির ব্যবস্থা’।
ক্যানসার হলে শরীরে কিছু কোষের স্বভাব, মতিগতি বদলে যেতে থাকে। তখন নজরদারির ওই পরিকাঠামো ভেঙে যায়। নিজের শরীরের কোষই বদলে গিয়ে শত্রু হয়ে যায়। তখন বাইরে থেকে ওষুধ, রেডিয়েশন দিয়ে সেই কোষগুলিকে নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তাতে সুস্থ ও সবল কোষগুলিরও ক্ষতি হয়। ইমিউনোথেরাপি এই সব না করে বরং শরীরের প্রতিরোধের কাঠামোটিকেই নতুন করে সাজায়, যাতে প্রতিরোধী কোষগুলি আবার জেগে উঠে লড়াই করতে পারে। এতে পাকাপাকি ভাবে ক্যানসার কোষগুলিকে নির্মূল করা সম্ভব হয়। শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধশক্তিও সতেজ হয়ে ওঠে। তার জন্য কিছু ওষুধ দিতে হয় মাত্র। নতুন ওষুধটিও এই ভাবেই কাজ করে ক্যানসার নির্মূল করতে পারবে বলেই ধারণা গবেষকদের।