রান্না তেল ছাড়া হবেই না। ডালের সঙ্গে ভাজাভুজি হোক বা মাছভাজা— তেলে-ঝালেই আছে। এমনকি আলুসেদ্ধ মাখতেও সেই কয়েক ফোঁটা তেলই লাগে। সকালের জলখাবারে গরম ফুলকো লুচি ছাঁকা তেল ছাড়া সম্ভবই নয়। মাছ হোক বা মাংস, অথবা যে কোনও নিরামিষ পদ, সবেতেই তেলের ব্যবহার হয় ভরপুর। মা-ঠাকুরমাদের হেঁশেলে সর্ষের তেল ছাড়া গতি নেই। তা ছাড়া এখন আরও নানা রকম রিফাইন্ড তেলও ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্ন অয়েল, রিফাইন্ড সানফ্লাওয়ার অয়েল, রেপসিড অয়েল-সহ বিভিন্ন প্রকার বীজের তেল দিয়ে বেশ রসিয়েই রান্না হচ্ছে। সমস্যাটা হল, কোন তেলের কী গুণ, কোন তেল উচ্চ তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে গিয়ে খারাপ রাসায়নিক তৈরি করে, সে বিষয়ে জানা নেই বেশির ভাগেরই। তাই কেনার আগে এমন পাঁচ তেল সম্পর্কে জেনে রাখা ভাল যেগুলির ব্যবহার আজকাল খুবই হয়, কিন্তু শরীরের জন্য একেবারেই ভাল নয়।
অনেকে বলেন, হার্টের জন্য অলিভ অয়েল ভাল। আবার দক্ষিণে নারকেল তেল খাওয়ার চল রয়েছে। অলিভ অয়েল ভাল ঠিকই যখন তা কম তাপমাত্রায় কোনও খাবার সঁতে করার জন্য ব্যবহার করা হবে। বাইরের দেশগুলিতে বাড়ির মতো এত ভাজাভুজি খাওয়া হয় না। সেখানে অলিভ তেল কার্যকরী। কিন্তু যদি কেউ অলিভ অয়েলও বেশি গরম করে রান্না করেন, তখন তা ক্ষতিকারক হয়ে উঠবে। তেমনই নানা রকম বীজের তেলের ধূমাঙ্ক সর্ষের তেলের চেয়ে কম। তাই যদি বীজের তেল খেতেই হয়, তা হলে নিয়ম মানতে হবে। না হলে রোজের ব্যবহারে এই তেলগুলিই ক্ষতি করবে শরীরের।
কোন তেলে কী ক্ষতি হতে পারে?
রিফাইন্ড সানফ্লাওয়ার অয়েল
প্রতি বাঙালির বাড়িতেই লুচি-পরোটা ভাজতে এই তেল ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া চাউমিন বা মুখরোচক খাবার, ভাজাভুজিও সাদা তেলেই হয়। রোজের ব্যবহারের এই সাদা তেল যদি উচ্চ তাপমাত্রায় ফোটানো হয় তা হলে এর থেকে অ্যালডিহাইড যৌগ তৈরি হয়, যা পেটে গিয়ে বিষক্রিয়া করে। এই তেলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা মাত্রাতিরিক্ত শরীরে গেলে খারাপ প্রভাব পড়ে। তা ছাড়া তেল শুদ্ধিকরণের প্রতিটি ধাপে নানা রকম রাসায়নিক মেশানো হয়, যা শরীরে প্রদাহজনিত রোগ ও ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
কর্ন অয়েল
কর্ন অয়েল আজকাল হেঁশেলে প্রায়ই আসে। মনে রাখতে হবে, এই তেল তৈরিতে হেক্সেন নামে একটি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা পেটের রোগ এবং হার্টের অসুখের কারণ হতে পারে। এই তেল বেশি খেলে শরীরে মেদ বাড়বে, ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও বাড়বে।
সয়বিন অয়েল
সয়বিন অয়েল তুলনামূলক ভাবে সস্তা। কিন্তু এই তেলে এত বেশি পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা শরীরে প্রদাহ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। সয়বিন অয়েলে নানা রকম পেট্রোলিয়াম যৌগ থাকে যা উচ্চ তাপমাত্রায় ভেঙে গিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি করে। বেশি খেলে হজমপ্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য।
ক্যানোলা অয়েল
রেপসিড তেল নামেই পরিচিতি বেশি। এই তেলে বেশি তাপমাত্রায় রান্না করলে হেক্সেন নামক রাসায়নিক তৈরি হবে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। প্রজনন সংক্রান্ত হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হবে, শরীরে প্রদাহ তৈরি হবে।
কার্পাস বীজের তেল
কার্পাস বীজের তেল বা কটনসিড অয়েলের মধ্যে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। এই ট্রান্স ফ্যাট কিন্তু রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে তোলে। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে দায়ী হল খারাপ কোলেস্টেরল।