রোমাঞ্চের জন্ম টেস্ট কিভাবে দিতে পারে তা দেখালো অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের নারী ক্রিকেটারদের মধ্যে অনুষ্ঠিত নারী অ্যাশেজের একমাত্র টেস্ট।
ক্যানবেরার মানুকা ওভালে নারী অ্যাসেজের একমাত্র টেস্ট যে রকম চূড়ান্ত উত্তেজক রূপ দেখা দিয়েছিল, তাতেই ফের প্রতিষ্ঠিত হয় টেস্ট ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব। জয় থেকে মাত্র ১২ রান দূরে থেমে যেতে হয় ব্রিটিশদের, অথচ অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১টি মাত্র উইকেট। ফলাফল, টেস্ট ড্র।
টেস্টের প্রথম তিনদিনে এগিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ৪০ রানে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় দিনের শেষে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটের বিনিময়ে করেছিল ১২ রান। ম্যাচের চতুর্থ তথা শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে ২১৬ রান তুলে তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে দেয়।
ফলে ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫৭ রানের। জয়ের জন্য ব্রিটিশদের হাতে ছিল ৪৮ ওভার। সুতরাং, ওয়ান ডে'র গতিতে রান তুললে ইংল্যান্ডের জয় তুলে নেওয়া অসম্ভব ছিল না। তবে টেস্টের শেষ দিনে এমন টার্গেট তাড়া করা মোটেও সহজ নয়। রীতিমত দুঃসাহসী কাজ।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বেথ মুনি ৬৩, এলিস পেরি ৪১, মেগ ল্যানিং ১২, তাহলিয়া ম্যাকগ্রা ৩৪, অ্যাশলে গার্ডনার ৩৮ ও জেস জোনাসেন অপরাজিত ১৪ রান করেন। ক্যাথেরিন ব্রান্ট ২৪ রানে ৩ উইকেট নেন। চার্লি ডিন ২৪ রানে ২ উইকেট দখল করেন। ১টি করে উইকেট নেন ন্যাট সিভার ও সোফি একলেস্টোন।
ইংল্যান্ড অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে রান তাড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৪৩ ওভারে তারা ৫ উইকেটের বিনিময়ে ২৩২ রান তুলে ফেলে। সুতরাং, শেষ ৫ ওভারে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ২৫ রান। হাতে ছিল ৫ উইকেট। জয়ের লক্ষ্যটা তখন ইংল্যান্ডের কাছে ছোটই দেখাচ্ছিল।
তবে নাটকের শুরু ঠিক এরপরই। পরবর্তী ৩ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলে নেয় ৪টি উইকেট। ফলে ৯ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় ইংল্যান্ড। শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য ১৩ রান দরকার ছিল ব্রিটিশদের। তবে তাদের হাতে অবশিষ্ট ছিল মাত্র ১ উইকেট। জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া তখন চেপে ধরে ইংল্যান্ডকে। বাধ্য হয়েই জয়ের দোরগোড়ায় এসেও থেমে যেতে হয় ইংল্যান্ডকে। শেষ দু'ওভারে ম্যাচ বাঁচাতে লড়তে হয়েছে তাদের।
শেষমেশ ৪৮ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৫ রানে থেমে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। ওভার প্রতি গড়ে ৫.১০ রান সংগ্রহ করেও ম্যাচ জিততে পারেনি। মাত্র ১২ রানের জন্য জয় হাতছাড়া হয় তাদের। রুদ্ধশ্বাস ক্যানবেরা টেস্ট ড্র ঘোষিত হয়।
টেস্টের শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়া তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে যোগ করে ২০৪ রান। ইংল্যান্ড শেষ ইনিংসে তোলে ২৪৫। সুতরাং, শেষ দিনে মোট ৪৪৯ রান ওঠে। নারী ক্রিকেটই নয় শুধু, পুরুষ ক্রিকেটেও এমন নজির খুব একটা চোখে পড়ে না।
শেষ ইনিংসে ইংল্যান্ডের হয়ে উইনফিল্ড-হিল ৩৩, ট্যামি বিউমন্ট ৩৬, হিদার নাইট ৪৮, ন্যাট সিভার ৫৮ ও সোফিয়া ডাঙ্কলি ৪৫ রান করেন। অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড ৬৯ রানে ৩ উইকেট দখল করেন। ৩৯ রানে ২ উইকেট নেন অ্যালানা কিং। ১টি করে উইকেট দখল করেন এলিস পেরি, ডার্সি ব্রাউন ও তালিয়া ম্যাকগ্রা। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ১৬৮ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮ রান করে ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন নাইট।
রাজশাহীর সময় /এএইচ