পাবনা সদর উপজেলার হিমায়েতপুর ইউনিয়নের চরভবানীপুরে চিকিৎসা সেবার নামে নানা অনিয়ম ও বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি পরিবারের বিরুদ্ধে। জানা যায়, ভবানীপুরের হেলিবোর্ড বাজারে পারভেজ মেডিকেল হল নামে একটি ফার্মেসী চালু করে পল্লী চিকিৎসক হাবিবুর রহমান হাবু। তার বাবা আবুল কালামও পেশায় একজন পল্লী চিকিৎসক। তিনিও ভবানীপুরের নিজ বাড়িতে খুলেছেন একটি ডাক্তার চেম্বার। এছাড়া তার বড়ভাই সাহাজুর রহমান সাজু পার্শ্ববর্তী চাঁদের (চুলকানীর হাট) বাজারে ডিজিটাল ফার্মেসী নামে আরেকটি ঔষুধের দোকান খুলেছে।
তারা নিজেদেরকে পল্লী চিকিৎসক বলে দাবী করলেও এসব ঔষুধের দোকানে বসে নিজেরাই লিখছেন প্রেসক্রিপশন, করছেন প্রসূতি, শিশুসহ সকল প্রকার রোগীর চিকিৎসাও। এছাড়া বিক্রয় নিষিদ্ধ সরকারী ঔষুধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধও দেদারছে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এসব ফার্মেসীতে। আবার এসব ফার্মেসীর কোনটিরই লাইসেন্স নেই বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্রে জানা গেছে। পাবনা শহরের একেবারেই সন্নিকটে হলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারী নেই বললেই চলে, এ যেন ‘আলোর নিচেই অন্ধকার’।
চাঁদের বাজারের (চুলকানীর হাটের) ডিজিটাল ফার্মেসীর মালিক সাহাজুর রহমান সাজুর বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু, অবৈধভাবে গর্ভপাত করানোসহ নানা অভিযোগও আছে। জানা যায়, গত ১৫ জুন ২০২২ খ্রি: তারিখে সাজেদুরের ভুল চিকিৎসায় ওই এলাকার মোহাম্মাদের স্ত্রী ইজ্জাতুন খাতুন মারা যান। ওই বৃদ্ধাকে চিকিৎসা দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরেন তিনি। ইজ্জাতুন খাতুনের নাতি সন্টু জানান, ‘আমার দাদীর অবস্থা খুব বেশি খারাপ না হওয়ায় আমরা ডাক্তার সাজেদুরের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়’। এর আগেও এসব নামধারী ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় ওই এলাকায় একাধিক মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি ভবানীপুরের ৭ মাসের এক প্রসূতি মায়ের গর্ভপাত করানোর সময় মারাত্বক জাটিলতা দেখা দিলে পরবর্তীতে পাবনার একটি ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করানো হয়।
এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কখনও অভিযোগ করতে সাহস করে নি। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয় বলে এলাকাবাসী জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে বলেন, ‘বাপ বেটা মিলে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার নামে নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কারও প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই’। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে বিক্রয় নিষিদ্ধ সরকারী ঔষুধ সংগ্রহ এবং বিক্রি করে আসছে বলেও অভিযোগ করেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এছাড়াও নিজেরাই প্রেসক্রিপশন লেখা, সকল প্রকার রোগীর চিকিৎসাসহ মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধও বিক্রি করছেন বলে জানান তারা। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এতসব অনিয়ম করলেও এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে কখনও কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন।
এসব ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পল্লী চিকিৎসক সাহাজুর রহমান সাজু প্রেসক্রিপশন লেখার কথা স্বীকার করে বলেন, রোগীর প্রয়োজনেই আমরা প্রেসক্রিপশন লিখি ও সকল প্রকার রোগীর চিকিৎসা করে থাকি। আর চিকিৎসা করতে গেলে তো ভুল-ত্রুটি হতেই পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এসময় তার ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করেন সাহাজুর। এছাড়া তাদের কোন ফার্মেসীতে সরকারী কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ বিক্রি করা হয় না বলে তিনি দাবী করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাবনা ঔষুধ ব্যবসায়ী সমিতির একজন পরিচালক জানান, ‘ফার্মেসীর লাইসেন্স নিয়ে কেউ প্রেসক্রিপশন লিখা কিংবা চিকিৎসা করতে পারবে না। এছাড়া কোন পল্লী চিকিৎসক নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না’। চরাঞ্চলের ফার্মেসীগুলোতে সরকারী ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ বিক্রির অভিযোগ নতুন নয় দাবী করে বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জানা যায়, চরাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ অসচেতন ও সহজ সরল। এছাড়া চরাঞ্চল হওয়ায় প্রশাসনেরও তেমন তৎপরতা নেই বললেই চলে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা সেবার নামে দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য চালিয়ে আসছে পল্লী চিকিৎসক আবুল কালাম ও তার ছেলেরা। কিন্তু এসব অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।