০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৩০:৫৪ পূর্বাহ্ন


পাবনায় শালিস বৈঠকে যুবককে পিটিয়ে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগ
মোবারক বিশ্বাস, পাবনা :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৪
পাবনায় শালিস বৈঠকে যুবককে পিটিয়ে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগ পাবনায় শালিস বৈঠকে যুবককে পিটিয়ে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার অভিযোগ


স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পরে নিজ বাড়িতে রেখে সংসার করার অভিযোগে সালিশ বৈঠকে আব্দুল আলীম নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।  হত্যাকে, আত্মহত্যা হিসাবে চালিয়ে দিতে, নিহতের মুখে গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে ও মৃত্যু নিবন্ধন জালিয়াতি করে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দাপুনিয়া ইউপি’র ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। হত্যার ২০ মাস পর নিহতের পিতা জিল্লুর রহমান বাদী হয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। যরি নাং-৩১২/২০২৪ ইং।  আদালত মামলাটি গ্রহন করে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে পাবনা সদর থানা পুলিশকে। 

পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের পাঁচুরিয়া গ্রামের মোঃ জিল্লুর রহমানের ছেলে আব্দুল আলীম (২৮) গত প্রায় ৯ বছর পুর্র্বে সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের রুপপুর বাঙ্গাবড়িয়া গ্রামের মোঃ কাশেম বিশ্বাসের মেয়ে মুর্শিদাকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। দাম্পত্য কলহের জের ধরে আলিম গোপনে কাজি অফিসের মাধ্যমে তার স্ত্রী মুর্শিদাকে তালাক প্রদান করেন। তালাকের কাগজ মুর্শিদার বাবার বাড়িতে গেলে, মুর্শিদার আত্মিয় স্বজন স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ আব্দুল আলীমের বাড়িতে উপস্থিত হন। স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কারন ও তালাকের পরে স্ত্রীকে কেন তার বাড়িতে রেখে সংসার করছে এই অভিযোগে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শহিদুল প্রাং শহিদ গত বছরের ৯ মার্চ সন্ধায় নিহত আলিমের বাড়িতে একটি শালিস বৈঠকের আয়োজন করেন। দাপুনিয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ইউপি সদস্য মোঃ শহিদুল প্রাং শহিদ ও ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা মহিদুল মেম্বার এর নেতৃত্বে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিসে স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদ ও মহিদুল ক্ষিপ্ত হয়ে আলীমকে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে আহত করে। আলিমের অবস্থা গুরুত্বর হলে শহিদ মেম্বার ব্যাথানাশক ট্যাবলেটের নাম করে কিটনাশক গ্যাস ট্যাবলেট মুখের মধ্যে ভরে দেয়। পরে আলীমের বাবা-মা আলীমকে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। পথিমধ্যে আলীমের মৃত্যু হয়। সেই সময়ে ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা শহিদের ভয়ে কেউ মামলা বা প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর শহিদ আত্মগোপনে চলে গেলে ঘটনাটি মানুষের মুখে মুখে প্রচার হতে থাকে। নিহতের স্ত্রী মুর্শিদার চাচা মৃত আজহার বিশ্বাসের ছেলে ইউনুস বিশ্বাস, কাশেম বিশ্বাসের ছেলে নাজমুলসহ আত্মিয় স্বজন আলিমকে মারার কথা স্বীকার করেন।

এদিকে নিহত আলিমের ৮ বছরের মেয়ে মোছঃ আমেনা আখি খাতুন বলেন, শহিদ মেম্বার ও মহিদুল মেম্বার আমার আব্বাকে কিল ঘুসি ও লাথি মারে। পরে আমার আব্বাকে চেয়ার দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আমার আব্বা চা দোকানের সামনে গিয়ে পড়ে যায়। তারপর আমার দাদা ও দাদি আব্বাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার আব্বাকে মারার সময়  আমি ও আমার মা বারান্দায় বসে ছিলাম।  

এদিকে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর শহিদ মেম্বার পলাতক থাকলেও দাপুনিয়া ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা মহিদুল মেম্বারের সাথে কথা হয় । তিনি শালিসে উত্তেজনার কথা স্বীকার করলেও মারার বিষয়টি এড়িয়ে যান। 

দাপুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ওমর ফারুক বলেন, আলিম গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন বলে আমি শুনেছি। কেউ আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর শহিদ মেম্বার আত্মগোপনে রয়েছে। মৃত্যু নিবন্ধন জালিয়াতির কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে চেয়ারম্যানের (তার) স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তৎকালিন সচিব মোঃ মিজানুর ও ইউপি সদস্য শহিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক। 

পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, সেই সময়ে তিনি ওসির দায়িত্বে ছিলেন না। তবে মামলাটি তদন্ত করেন এসআই জাহিদ। মেডিকেল রিপোর্টে গ্যাসট্যাবলেট জনিত মৃত্যুর কারন থাকায়, মামলাটিতে কাউকে অভিযুক্ত না করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। 

মৃত্যু সনদ জালিয়াতির বিষয়ে অবগত বা চেয়ারম্যান অভিযোগ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রশাসনের দায়িত্বরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফ আহমেদ জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের কথা জানান। 

এদিকে নিহত আলিমের মা আয়েশা খাতুন অভিযোগ করেন, আমার ছেলের মুখে গ্যাস ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিলে অবস্থা খারাপ হলে আমরা পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। আমি বাড়িতে এসে দেখি আমার ঘরের দরজা জানালা ভাঙ্গা। পরে জানতে পারি শহিদ মেম্বার এবং মহিদুল মেম্বার এসব ভাংচুর করেছে এবং আমার গরু বিক্রির ১লাখ ১৫ হাজার ঘরের শোকেচ থেকে নিয়ে যায়। 

শহিদ মেম্বার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেনের ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিতি থাকায়, সে এতই প্রভাবশালী ছিলো যে, দাপুনিয়া ইউনিয়নে তার অপকর্মের প্রতিবাদ তো দুরের কথা, ভয়ে তখন তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর শহিদ মেম্বার আত্মগোপনে চলে যাবার পর আলিম হত্যার বিচারে স্থানীয়রা আশায় বুক বাধেন। আলিম হত্যার সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দোষিদের কঠিন শাস্তির দাবি করেন। আর যেন কাউকে শালিস-বৈঠকের নামে হত্যা করা না হয় দাবি এলাকাবাসীর।