সিলেটের লাক্কাতুরায় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে হার দেখতে হলো বাংলাদেশকে। ওয়ানডেতে টানা তিন ম্যাচ জয়ের পরে ২০ ওভারের ক্রিকেটে থমকে গেলেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। কিন্তু এই ম্যাচে জয় পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল তাদের। বলা চলে, সেটি হেলায় হারিয়েছেন টাইগ্রেসরা।
একের পর এক ক্যাচ ছেড়ে আয়ারল্যান্ড যে সহজ রাস্তাটি বের করে দিয়েছিল, সে পথে হাঁটতে পারেননি জ্যোতিরা। শুরুতে শতরানের জুটিও আলো দেখাতে পারেনি স্বাগতিকদের। ওয়ানডের পরে টি-টোয়েন্টিতেও রেকর্ড গড়ে নিজেদের পক্ষে ফল আনতে পুরোপুরি ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।
সিরিজ শুরুর আগে চা-বাগানে ব্যতিক্রমী ট্রফি উম্মোচন করেছেন দুই দলের অধিনায়ক। সে ঘটনা ভক্তদের চোখে দারুণ প্রশান্তি এনে দিয়েছিল। উচ্ছ্বাসে ভেসেছিলেন আইরিশ অধিনায়ক গ্যাবি হলিস লুইস। সেই উচ্ছ্বাসের ধারা ম্যাচেও স্পষ্ট ছিল। ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে নিজেকে খুঁজে ফিরছেন গ্যাবি। সেখানে ব্যর্থ হলেও টি-টোয়েন্টির প্রথম ম্যাচেই নিজেকে মেলে ধরেছেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই অধিনায়কের ব্যাট যে তলোয়ার হয়ে ওঠে, সেটি আরো একবার প্রমাণ করলেন। সেই জায়গায় মোটা দাগে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক জ্যোতি। দুই ওপেনারের শক্ত ভিতের ওপরে কেউ গাঁধুনি তুলতে পারেননি। কেবল সেই ভিত আক্ষেপের দলিল হিসেবে থেকেছে ম্যাচ শেষে।
আয়ারল্যান্ডের দেওয়া ১৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি করে ১০৩ রান। এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এরপরের ৬৭ রান তুলতে হিমশিম খেয়েছেন জ্যোতিরা। লক্ষ্য থেকে ১২ রান দূরে থামতে হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। এর আগে কখনো এত রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে দেখেনি বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪৫ রান তাড়া করে জিতেছিল টাইগ্রেসরা। তাতে ১৭০ রান করতে পারলে নতুন রেকর্ড হতো তাদের। কিন্তু সেটি আর হয়নি। অবশ্য কিছুদিন আগেই মিরপুরে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্যে নেমেও জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে কিছুটা আত্মত্মবিশ্বাস ছিল এই ম্যাচেও।
দুই ওপেনার দিলারা আক্তার ও সোবহানা মোস্তারি শতরানের জুটি গড়ে সেই কাজটি সহজই করে দিয়েছিলেন। বিন্তু সোবহানা ও পরে দিলারা আউট হলে লক্ষন পার করার আগেই থামতে হয়েছে বাংলাদেশের। দলীয় ১০৩ রানে সোবহানা আউট হওয়ার পরে ১০৯ রানে আউট হন জ্যোতি। বাংলাদেশের অধিনায়ক ৫ বলে মাত্র ৪ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। ওয়ানডেতে জ্বলে ওঠা শারমিন আক্তার সুপ্তা চেষ্টা চালালেও তাজ নেহার, স্বর্ণা আক্তার, রিতু মনি, জান্নাতুল ফেরদৌসদের আসা-যাওয়ার মিছিলে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বোলার ওরলা প্লেন্ডারপাস্ট ও আর্লিন কেলি নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট।
এই ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বড় সংগ্রহ তোলার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন অধিনায়ক গ্যাবি লুইস। তিনি লিয়া পলের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে গড়েছেন শতরানের জুটি। মাত্র ৬৪ বলে ১০৭ রানে তোলেন তারা। এরপরে গ্যাবি আউট হলে রান ১৬৯ হয়। নাহলে সেটি আরো বেশি হতে পারত। গ্যাবি ৪২ বলে করেছেন ৬০ রান। আর লিয়া ৪৫ বলে ৭৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে কেউ বল হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি। তবে আইরিশ অধিনায়ককে ফারিহা তৃষ্ণা থামাতে না পারলে হারের ব্যবধান আরো বড় হতে পারত। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ আগামীকাল বেলা ২টায়। সেই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন জ্যোতি। আর এই ধারা ধরে রেখে সিরিজ জয়ের কথা ভাবছেন গ্যাবি।
প্রথম টি-টোয়েন্টি
আয়ারল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬৯/৫
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৭/৭
ফল: আয়ারল্যান্ড ১২ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: লিয়া পল