সূরা মুরসালাতে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত ও আখেরাতকে প্রমাণ, সত্যকে অস্বীকারকারীর পরিণতি, বিশ্বাসীদের পুরস্কার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
কিয়ামত ও আখেরাতকে প্রমাণের জন্য অবিশ্বাসীদের উদ্দেশে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন উদাহরণ দিয়েছেন। অবিশ্বাসীরা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূলদের রিসালাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো।
আল্লাহ তায়ালা তাদের বলেছেন, ইতোপূর্বেও আমি রাসূলদের অস্বীকারকারী অনেককে ধ্বংস করেছি। তাদের পরে আরও যারা রাসূলদের অস্বীকার করেছে আমি তাদেরও ধ্বংস করেছি। আমি অপরধীদের প্রতি এমনই করে থাকি। কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের কি দুর্গতিই না হবে।
এরপর আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে সৃষ্টি, সৃষ্টির সময় তার প্রতি নিজের অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কিয়ামত অস্বীকারকারীদের বলেছেন—
তিনি তাদেরকে তুচ্ছ পানি (শুক্র) থেকে সৃষ্টি করেছেন, যা বিশ্ব সৃষ্টিকর্তার সামনে ছিল অতি নগণ্য বিষয়। যেমন সূরা ইয়াসিনের তাফসিরে হজরত বিশর ইবনে জাহহাশ রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, হে আদম সন্তান! তুমি কি আমাকে অপারগ করতে পারবে? অথচ আমি তোমাকে এমন (তুচ্ছ ও নগণ্য) জিনিস দিয়ে সৃষ্টি করেছি!
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এরপর আমি ওটাকে স্থাপন করেছি নিরাপদ আধারে। অর্থাৎ, ওই পানিকে আমি রেহেমে জমা করেছি যা ওই পানির জমা হওয়ার জায়গা। ওটাকে আমি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছি ও নিরাপদে রেখেছি।
অর্থাৎ, ছয় মাস বা নয় মাস। আমি এটাকে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, কত নিপুণ স্রষ্টা আমি। এরপরেও যদি ওই দিনকে (কিয়ামত) বিশ্বাস না করো তাহলে বিশ্বাস রেখো যে কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে বড়ই আফসোস ও দুঃখ করতে হবে। ( তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৭/ ৭৮৬)
সূরা মুরসালাত
وَالۡمُرۡسَلٰتِ عُرۡفًا ۙ ١ فَالۡعٰصِفٰتِ عَصۡفًا ۙ ٢ وَّالنّٰشِرٰتِ نَشۡرًا ۙ ٣ فَالۡفٰرِقٰتِ فَرۡقًا ۙ ٤ فَالۡمُلۡقِیٰتِ ذِکۡرًا ۙ ٥ عُذۡرًا اَوۡ نُذۡرًا ۙ ٦ اِنَّمَا تُوۡعَدُوۡنَ لَوَاقِعٌ ؕ ٧ فَاِذَا النُّجُوۡمُ طُمِسَتۡ ۙ ٨ وَاِذَا السَّمَآءُ فُرِجَتۡ ۙ ٩ وَاِذَا الۡجِبَالُ نُسِفَتۡ ۙ ١۰ وَاِذَا الرُّسُلُ اُقِّتَتۡ ؕ ١١ لِاَیِّ یَوۡمٍ اُجِّلَتۡ ؕ ١٢ لِیَوۡمِ الۡفَصۡلِ ۚ ١٣ وَمَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا یَوۡمُ الۡفَصۡلِ ؕ ١٤ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ١٥ اَلَمۡ نُہۡلِکِ الۡاَوَّلِیۡنَ ؕ ١٦ ثُمَّ نُتۡبِعُہُمُ الۡاٰخِرِیۡنَ ١٧ کَذٰلِکَ نَفۡعَلُ بِالۡمُجۡرِمِیۡنَ ١٨ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ١٩ اَلَمۡ نَخۡلُقۡکُّمۡ مِّنۡ مَّآءٍ مَّہِیۡنٍ ۙ ٢۰ فَجَعَلۡنٰہُ فِیۡ قَرَارٍ مَّکِیۡنٍ ۙ ٢١ اِلٰی قَدَرٍ مَّعۡلُوۡمٍ ۙ ٢٢ فَقَدَرۡنَا ٭ۖ فَنِعۡمَ الۡقٰدِرُوۡنَ ٢٣ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٢٤ اَلَمۡ نَجۡعَلِ الۡاَرۡضَ کِفَاتًا ۙ ٢٥ اَحۡیَآءً وَّاَمۡوَاتًا ۙ ٢٦ وَّجَعَلۡنَا فِیۡہَا رَوَاسِیَ شٰمِخٰتٍ وَّاَسۡقَیۡنٰکُمۡ مَّآءً فُرَاتًا ؕ ٢٧ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٢٨ اِنۡطَلِقُوۡۤا اِلٰی مَا کُنۡتُمۡ بِہٖ تُکَذِّبُوۡنَ ۚ ٢٩ اِنۡطَلِقُوۡۤا اِلٰی ظِلٍّ ذِیۡ ثَلٰثِ شُعَبٍ ۙ ٣۰ لَّا ظَلِیۡلٍ وَّلَا یُغۡنِیۡ مِنَ اللَّہَبِ ؕ ٣١ اِنَّہَا تَرۡمِیۡ بِشَرَرٍ کَالۡقَصۡرِ ۚ ٣٢ کَاَنَّہٗ جِمٰلَتٌ صُفۡرٌ ؕ ٣٣ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٣٤ ہٰذَا یَوۡمُ لَا یَنۡطِقُوۡنَ ۙ ٣٥ وَلَا یُؤۡذَنُ لَہُمۡ فَیَعۡتَذِرُوۡنَ ٣٦ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٣٧ ہٰذَا یَوۡمُ الۡفَصۡلِ ۚ جَمَعۡنٰکُمۡ وَالۡاَوَّلِیۡنَ ٣٨ فَاِنۡ کَانَ لَکُمۡ کَیۡدٌ فَکِیۡدُوۡنِ ٣٩ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٪ ٤۰ اِنَّ الۡمُتَّقِیۡنَ فِیۡ ظِلٰلٍ وَّعُیُوۡنٍ ۙ ٤١ وَّفَوَاکِہَ مِمَّا یَشۡتَہُوۡنَ ؕ ٤٢ کُلُوۡا وَاشۡرَبُوۡا ہَنِیۡٓــًٔۢا بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ٤٣ اِنَّا کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ٤٤ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٤٥ کُلُوۡا وَتَمَتَّعُوۡا قَلِیۡلًا اِنَّکُمۡ مُّجۡرِمُوۡنَ ٤٦ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٤٧ وَاِذَا قِیۡلَ لَہُمُ ارۡکَعُوۡا لَا یَرۡکَعُوۡنَ ٤٨ وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ٤٩ فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَہٗ یُؤۡمِنُوۡنَ ٪ ٥۰
সূরা মুরসালাত অনুবাদ: শপথ একের পর এক প্রেরিত বায়ুর। তারপর প্রচণ্ড বেগে ছুটে চলা ঝড়ো হাওয়ার। এবং শপথ (মেঘমালাকে) ইতস্তত বিক্ষিপ্তকারী বায়ুর। অতঃপর শপথ তাদের (অর্থাৎ সেই ফেরেশতাদের), যারা সত্য ও মিথ্যাকে পৃথক করে দেয়। তারপর অবতীর্ণ করে উপদেশবাণী। যা মানুষের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার কারণ হয় অথবা হয় সতর্ককারী।
যে সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তা অবশ্যই ঘটবে। সুতরাং (তা ঘটবে সেই সময়) যখন নক্ষত্ররাজি নিভিয়ে দেওয়া হবে। এবং যখন আকাশ বিদারণ করা হবে। এবং যখন পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলা হবে। এবং যখন রাসূলগণকে নির্দিষ্ট সময়ে একত্র করা হবে। (কেউ যদি জিজ্ঞেস করে) এসব মূলতবি রাখা হয়েছে কোন দিনের জন্য? (তার জবাব হল) বিচার দিবসের জন্য!
তুমি কি জান বিচার দিবস কী? সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। আমি কি পূর্ববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করিনি? অতঃপর পরবর্তীদেরকেও আমি তাদের অনুগামী করে দেব। আমি অপরাধীদের সাথে এ রকম আচরণই করে থাকি। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করিনি এক হীন পানি দ্বারা? অতঃপর আমি তা এক সুরক্ষিত অবস্থানস্থলে রাখি। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তারপর আমি তাতে পরিমিত রূপ দান করি। সুতরাং আমি কতই না উত্তম রূপদাতা!
সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। আমি কি ভূমিকে বানাইনি ধারণকারী, জীবিতদের এবং মৃতদেরও? এবং আমি তাতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উঁচু-উঁচু পাহাড় এবং আমি তোমাদেরকে সুমিষ্ট পানি দ্বারা সিঞ্চিত করার ব্যবস্থা করেছি।
সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা যা অবিশ্বাস করতে, চলো এখন সেই জিনিসের দিকে। চলো তিন শাখাবিশিষ্ট শামিয়ানার দিকে। যাতে নেই (শীতল) ছায়া এবং যা আগুনের শিখা থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তা অট্টালিকা তুল্য বড়-বড় স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করবে। মনে হবে তা হলুদ বর্ণের উট। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
তা এমন এক দিন, যে দিন লোকে কথা বলতে পারবে না। এবং তাদেরকে কোন অজুহাত প্রদর্শনেরও অনুমতি দেওয়া হবে না। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। এটা ফায়সালার দিন।
আমি একত্র করেছি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে। এখন তোমাদের যদি কোন কৌশল থাকে, তবে সে কৌশল আমার বিরুদ্ধে চালাও। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তারা অবশ্যই ছায়া ও প্রস্রবণের মধ্যে থাকবে। এবং তাদের চাহিদামত ফলমূলের মধ্যে। (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে খাও ও পান কর তোমরা যা-কিছু করতে তার বিনিময়ে। আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করি। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
(হে কাফেরগণ!) অল্প কিছু কাল খাও ও মজা লোট। নিশ্চয়ই তোমরা অপরাধী। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহর সামনে নত হও, তারা নত হয় না। সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে। সুতরাং এরপর আর এমন কী কথা আছে, যার উপর তারা ঈমান আনবে?