সুরা তাকওয়ীর কোরআনের ৮১তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ২৯টি, রুকু ১টি। সুরা তাকওয়ীর মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। আরবি ভাষায় তাকওয়ীর অর্থ পেঁচানো বা গোটানো। মাথায় পেঁচিয়ে পাগড়ি বাঁধাকে ‘তাকওয়ীরুল ইমামাহ’ বলা হয়ে থাকে। সুরা তাকওয়ীরের শুরুতে আল্লাহ বলেছেন, কেয়ামতের দিন সূর্যকে গুটিয়ে নেওয়া হবে। অর্থাৎ সূর্য নিস্প্রভ হয়ে যাবে, এর আলোক বিচ্ছুরণ বন্ধ হয়ে যাবে।
সুরাটির প্রথমার্ধে কেয়ামতের দিনের বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। কেয়ামত কীভাবে শুরু হবে এবং কীভাবে শেষ হবে তা খুব অল্প কথায় চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। শেষার্ধে আলোচিত হয়েছে নবিজির (সা.) রিসালত, তার বিরুদ্ধে কাফেরদের অপবাদ, জিবরাইলের (আ.) পরিচয় ইত্যাদি।
সুরা তাকওয়ীরের ১৫-২৯ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
(১৫)
فَلا أُقْسِمُ بِالْخُنَّسِ
ফালা উকছিমু বিলখুন্নাছ।
আমি শপথ করি পশ্চাদপসরণকারী নক্ষত্রের,
(১৬)
الْجَوَارِ الْكُنَّسِ
আল জাওয়ারিল কুন্নাছ।
যা প্রত্যাগমন করে ও অদৃশ্য হয়,
(১৭)
وَاللَّيْلِ إِذَا عَسْعَسَ
ওয়াল্লাইলি ইযা আসআস।
শপথ রাত্রির যখন এর অবসান হয়,
(১৮)
وَالصُّبْحِ إِذَا تَنَفَّسَ
ওয়াসসুবহি ইযা তানাফফাস।
আর ঊষার, যখন এর আবির্ভাব হয়,
(১৯)
إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ
ইন্নাহূ লাকাওলু রাসূলিন কারীম।
নিশ্চয় কোরআন সম্মানিত রাসুলের আনীত বাণী,
(২০)
ذِي قُوَّةٍ عِنْدَ ذِي الْعَرْشِ مَكِينٍ
যী কুওওয়াতিন ইনদা যিলআরশি মাকীন।
যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাশালী,
(২১)
مُطَاعٍ ثَمَّ أَمِينٍ
মুতাইন ছাম্মা আমীন।
যাকে সেখানে মান্য করা হয়, যে বিশ্বাসভাজন।
(২২)
وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُونٍ
ওয়া মা সাহিবুকুম বিমাজনূন।
এবং তোমাদের সাথী পাগল নন।
(২৩)
وَلَقَدْ رَآهُ بِالْأُفُقِ الْمُبِينِ
ওয়া লাকাদ রাআ-হু বিলউফুকিল মুবীন।
তিনি ওই ফেরেশতাকে প্রকাশ্য দিগন্তে দেখেছেন।
(২৪)
وَمَا هُوَ عَلَى الْغَيْبِ بِضَنِينٍ
ওয়ামা হুওয়া আলাল গাইবি বিদানীন।
তিনি অদৃশ্য বিষয় বলতে কৃপণতা করেন না।
(২৫)
وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَجِيمٍ
ওয়ামা হুওয়া বিকাওলি শাইতানির রাজীম।
এটা বিতাড়িত শয়তানের বক্তব্য নয়।
(২৬)
فَأَيْنَ تَذْهَبُونَ
ফাআইনা তাযহাবূন।
অতএব, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?
(২৭)
إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ
ইন হুওয়া ইল্লা যিকরুল লিলআলামীন।
এটা তো কেবল বিশ্বাবাসীদের জন্যে উপদেশ,
(২৮)
لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَسْتَقِيمَ
লিমান শাআ মিনকুম আইঁ ইয়াসতাকীম।
তার জন্যে, যে তোমাদের মধ্যে সোজা চলতে চায়।
(২৮)
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
ওয়ামা তাশাঊনা ইল্লাআইঁ ইয়াশাআল্লাহু রাব্বুল আলামীন।
তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তাআলার সুনিপুন ও অপরূপ সৃষ্টিরাজি আমাদের ঘিরে আছে। এগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের মনে করিয়ে দেয় আল্লাহর অস্তিত্ব, তার বড়ত্ব ও ক্ষমতা। কত মহান স্রষ্টা তিনি!
২. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর নবি ছিলেন এবং তার কাছে বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ থেকেই ওহি আসতো -এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি বা সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
৩. জিবরাইল (আ.) অত্যন্ত মর্যাদাবান, শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত একজন ফেরেশতা। তিনিই আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি নিয়ে নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে আসতেন।
৪. কাফেররা নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উন্মাদ, কবি, তান্ত্রিক ইত্যাদি নানা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করতো। এগুলোতে সত্যের লেষমাত্র ছিল না। তিনি আল্লাহর সম্মানিত নবি ও রাসুল ছিলেন।
৫. কোরআন মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা হেদায়াতের বাণী। কোরআন অনুসরণ করলে মানুষ সরল ও সঠিক পথের সন্ধান পাবে।
৬. বিশ্বজগতের সব কিছুই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাধীন। মানুষ নিজের ইচ্ছায় কিছুই করতে পারে না এমন কি কোনো কাজ করার ইচ্ছাও করতে পারে না যদি আল্লাহ তা না চান। তাই হেদায়াতের পথ গ্রহণ করার জন্যও আল্লাহর ইচ্ছা ও তাওফিক প্রয়োজন।