০৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ০৯:৫১:১৯ পূর্বাহ্ন


মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ ফুলবাড়ী পৌরবাসী কয়েল-মশারিতেও মিলছে না রক্ষা
কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৪-২০২৪
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ ফুলবাড়ী পৌরবাসী  কয়েল-মশারিতেও মিলছে না রক্ষা মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ ফুলবাড়ী পৌরবাসী কয়েল-মশারিতেও মিলছে না রক্ষা


‘আমার ঘরেও জ্বালা বাইরেও জ্বালারে, জ্বালা রাইতে দিনে’ বারী সিদ্দিকীর এই গানটি যেনো বর্তমানে মশার উপদ্রবে বাস্তবতার সাথে মিল খেয়েছে। রাতেও মশা, দিনেও মশা। ঘরেও মশা, আবার ঘরের বাহিরেও মশা। মানুষ কোথাও যে গিয়ে একটু বসবে, তার উপায় নেই। মশার গুনগুন গানের শব্দে ঘুমানো দায়।

মশা মারতে গিয়েও কি এক জ্বালা! কখনো গালে, কখনও কপালে আবার কখনও পায়ে এমনকি কানে নিজের চড় খাচ্ছেন অনেকে। কয়েল-মশারি দিয়েও কিছু হচ্ছে না। যেন মশার দখলে বাস করছে মানুষ! মশা এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। মশার জ্বালায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার প্রথম শ্রেণির পৌরএলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেক মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

এদিকে মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোসহ ড্রেন পরিষ্কার কিংবা জঙ্গল পরিষ্কারে পৌর কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এমনটাই অভিযোগ পৌরবাসীর।  

পৌরসভা ও পৌরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম শ্রেণির এই ফুলবাড়ী পৌরসভা রয়েছে ৯টি ওয়ার্ড ও ২৯টি মহল্লা, ৫ টি বস্তি ও ২টি হাট-বাজার নিয়ে গঠিত। এ পৌরশহরে লোকসংখ্যা প্রায় ৫৬ হাজার। এই পৌর এলাকাটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে মধ্যশহরের ছোট যমুনা নদী।

এক সময় প্রবহমান ছিল খরস্রতা নদীটি। কিন্তু দীর্ঘদিনের দখল ও দূষণে পুরো নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এ নদীতে পড়ছে পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা, ড্রেনেজ ও বাসাবাড়ির ময়লার পানি। ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া নদ থেকে লাখ লাখ মশা বংশ বিস্তার করছে।

পৌরসভার সড়কে পড়ে আছে ময়লার স্তুপ ও পচা পানি। এমনকি ছোট বড় খাল, পুকুর, বাসাবাড়ি, হোটেল ও রেস্তোরাঁ ড্রেনেজ পানিতে ময়লার স্তূপ জমে প্রচুর মশা জন্ম নিচ্ছে। আবার শীতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবেও মশা নিধন হচ্ছে না ফলে বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব। মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোর কোনো উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি।

কথা হয় কলেজ পড়ুয়া আমিনুল ইসলাম ও সাব্বির হোসেনের সঙ্গে তারা বলেন, মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। কোথাও এক মিনিট নিরাপদে বসা যাচ্ছে না। ইলেকট্রিক ব্যাট, অ্যারোসল, কয়েল জ্বালিয়েও মশার অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছি না।

চিকিৎসক শিশির সরকার বলেন, মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। ঘরোয়াভাবে মশা নিধন করা যাচ্ছে না। তা না হলে এডিসসহ অন্যান্য মশা থেকে বাঁচা সম্ভব হবে না। এডিস মশা প্রতিকূল পরিবেশেও ডিম ছাড়তে পারে। ডিমগুলো অনেক দিন টিকে থাকতে পারে। পানির স্পর্শ পেলেই এগুলো থেকে লার্ভা হয়। ওইসব মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করার জন্য পৌরসভার দৃষ্টি কামনা করি।

  উপজেলা পরিষদ রোডস্থ কাটিহারধর কালভার্ট সংলগ্ন বাসিন্দা অনুপ গুপ্ত ও মো. পায়েল বলেন, কাটিহারধর কালভার্টের ওপর নির্মিত স্লিপারের ওপর পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে সেখানে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় তৈরি হয়েছে। বহুবার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও পরিষ্কার করা হয়। আবার সেখানেই ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। ফলে সেখানে দুর্গন্ধ ছড়ানোসহ মশা-মাছি জন্ম নিচ্ছে। যা আমাদেরকে অসহনীয় করে তুলেছে। দুপুরের পর থেকে ঘরে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। তাতেও ঠিকমতো মশা যাচ্ছে না। আগে পৌরসভার পক্ষ থেকে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হতো। কিন্তু কয়েক মাস ধরে এ কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

পৌরবাজারের ব্যবসায়ী খোকন সাহা, জব্বার হোসেন ও হাসিবুল বলেন, মশার উপদ্রব এত বেশি যে দোকানে বসে ব্যবসা করা যায় না। কথা বললে মুখের ভিতর ঢুকে পড়ে। মশা নিধনের জন্য জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ স্কুল শিক্ষক সঞ্জিব কুমার চক্রবর্তী বলেন, মশার কারণে সারাদিন ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। নাকে মুখে মশা কয়েলের গন্ধ সহ্য করতে পারছি না। বাসায় তিনটি ছোট বাচ্চা আছে। এভাবে চলতে থাকলে ছেলে-মেয়েসহ সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ব!

পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, আজকেই এ বিষয়ে মশা মারা কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করা