২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১০:২২:১২ অপরাহ্ন


শাবান মাস বিশেষ দুই কারণে ফজিলতপূর্ণ
ধর্ম ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৩-২০২২
শাবান মাস বিশেষ দুই কারণে ফজিলতপূর্ণ শাবান মাস বিশেষ দুই কারণে ফজিলতপূর্ণ


‘শাবান’ হিজরি বছরের অষ্টম মাস। এটি নফল ইবাদত-বন্দেগির মাস। এছাড়াও বিশেষ দুইটি কারণে মাসটি প্রসিদ্ধ। শাবান মাসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক আমল করতেন। এ মাসের প্রসিদ্ধ দুইটি ঘটনা ও নবিজীর আমল কী ছিল?

শাবান মাসের বিশেষ ঘটনা

ইসলামের ইতিহাসে হিজরি বছরের অষ্টম মাস শাবান মাসে বিশেষ দুইটি ঘটনা ঘটে, যা ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বিশেষ মর্যাদা ও আকাঙ্ক্ষার বিষয়। তাহলো-

১. কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশে আয়াত নাজিল

ইসলামের ইতিহাসের সেরা ঘটনা ‘কেবলা পরিবর্তন’। এটি ছিল হিজরতের ১৬ মাস পরের এবং বদরের যুদ্ধের মাত্র দুই মাস আগের ঘটনা। আকাঙ্ক্ষিত বরকতময় মূহূর্তটি ছিল- দ্বিতীয় হিজরি সনের শাবান মাস। মদিনা থেকে একটু দূরের একটি মসজিদে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে জোহরের নামাজ আদায় করছিলেন । নবিজী নামাজে থাকাকালীন সময়ে আল্লাহ তাআলা কোরআনের আয়াত নাজিল করে কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশ দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِى السَّمَاءِ، فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا، فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ المَسْجِدِ الحَرَامِ

‘নিশ্চয়ই আমি তোমাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব অবশ্যই আমি তোমাকে সেই কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব, যাকে তুমি পছন্দ করো। এখন তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করো এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকেই মুখ করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৪৪)

এ কারণেই শাবান মাস একদিকে যেমন মুসলিম স্বাতন্ত্র্য ও ইসলামি ঐক্যের মাস, অন্যদিকে তেমনি কাবা শরিফ কেন্দ্রিক মুসলিম জাতীয়তা ও ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হওয়ার মাস।

যে মসজিদটিতে এ ঘটনা ঘটেছিল, সেটি হলো- ‘মসজিদে কিবলাতাইন’। হজ ও ওমরা পালনকারীরা আজও সে মসজিদ জেয়ারত করেন। নামাজ পড়নে। মসজিদটির দুইটি মেহরাব বিপরীতমুখী।

২. দরূদের পড়া নির্দেশে আয়াত নাজিল

রহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠের নির্দেশ দেওয়ার অসাধারণ আয়াতটি এ শাবান মাসেই অবতীর্ণ হয়। নবিজীর প্রতি অগাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা, প্রেম-ভালোবাসা দেখানোর মাসও এটি। এ মাসেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করতেন। আল্লাহ তাআলা এ মাসেই নাজিল করেন-

اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা নবীজির প্রতি পরিপূর্ণ রহমত নাজিল করেন, ফেরেশতারা নবীজির জন্য রহমত কামনা করেন; হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে সালাম পেশ করো।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)

সুতরাং বিশেষ দুইটি ফজিলতপূর্ণ ঘটনার মাস শাবান। এর মধ্যে একটি সর্বোত্তম আমল। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অগাধ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও প্রেম-ভালোবাসা।

এ মাসের নফল ইবাদত নামাজ ও রোজা সুন্নাতের অনুশীলনের অন্যতম মাধ্যম। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা পাওয়ার সেরা মাস। হাদিসে পাকে নবিজী বলেছেন-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, ‘হে ছেলে! যদি সম্ভব হয তবে এভাবে সকাল-সন্ধ্যা অতিবাহিত করো, যেন কারও প্রতি তোমার অন্তরে হিংসা না থাকে; তবে তাই করো। এরপর বলেন, ‘এটাই আমার সুন্নাত আদর্শ- যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত অনুসরণ করল, সে প্রকৃতপক্ষে আমাকে ভালোবাসলো; আর যে আমাকে ভালোবাসলো সে আমার সঙ্গে জান্নাতেই থাকবে।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

শাবান মাসজুড়ে নবিজী পড়তেন-

اَللَّهُمَّ بَارَكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَان

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বারাকলানা ফি শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজানে পৌঁছে দিন।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শাবান মাসজুড়ে নফল ইবাদত-বন্দেগি ও রোজা পালনের পাশাপাশি নবিজীর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রাজশাহীর সময় / এম আর