৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের কোনো দলীয় প্রার্থী থাকবে না। দল থেকে কাউকেই নৌকা প্রতীক দেয়া হবে না। এমনকি কোন পদধারী নেতাকর্মী,এমপি, মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন দলীয় পরিচয়ে, প্রার্থী হতে পারবেনা। নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যেই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নিয়েছেন । এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামীলীগের কর্মকাণ্ড এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে উপজেলা ব্যাপী। ফলে আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য বাঘা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরিবেশ, গ্রহণযোগ্যতা ও সুষ্ঠতা নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে ভীতি সঞ্চার করছে।
জানা যায়, আগামী ৮ মে সারাদেশের ১৪৮টি উপজেলায় প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫৫ টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা। গত মঙ্গলবার ( ২৩ জুন ) নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল ঘোষণার পরেই কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন নেতা পরদিন (বুধবার) স্থানীয় সাংসদ সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নিকট প্রার্থী নির্ধারণ করতে ঢাকার পথে রওয়ানা দেন। পরে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল )সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির ফেসবুক ওয়ালে ভাসতে থাকে, আসন্ন বাঘা উপজেলা নির্বাচনে, বাঘা উপজেলা আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজশাহী জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জনাব মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান রিন্টু ভাই এর জন্য দোয়া রইল। কেউ কেউ আবার রোকনুজ্জামান রিন্টুকে প্রার্থী হিসেবে সিলেকশন করাই স্থানীয় সাংসদ শাহরিয়ার আলম কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগের মাঝে শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, আওয়ামী লীগের প্রায় ৪০/৫০ জন নেতৃবৃন্দের সম্মতিক্রমে রোকনুজ্জামান রিন্টুকে প্রার্থী হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে । তবে যেহেতু দল থেকে নির্দেশনা আছে, দলীয় কোন প্রার্থী দেওয়া যাবে না, তাই বিষয়টি এভাবে বলা যাবেনা বা প্রকাশ করা যাবে না।
এ ঘটনায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। কারন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় কোন প্রার্থী থাকবে না আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন নির্দেশনার পরেও নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগ ঢাকায় বসে প্রার্থী নির্ধারণ করেছেন ।
যাকে প্রার্থী হিসাবে নির্ধারণ করেছেন, তিনি পোস্টার ফেস্টুনে আছেন কিন্তু জনতার মাঝে নেই। ভোট করতে হলে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হয়, জনতার কাতারে থাকতে হয়। তাদের সুখে দুখে পাশে থাকতে হয়। এমন সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ হয়েছি।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ উপজেলায় স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি। তার নির্দেশনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। এ উপজেলায় আগেও কেউ কেউ বিতর্কিত কিছু কর্মকাণ্ড ঘটান। হাই কমান্ড তাদেরকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখেন। আর সে কারণেই দলের নির্দেশনা থাকলেও সেটা অমান্য করে তারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থি নির্ধারণ করেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৯ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১২ মে। আর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৩ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১৬ থেকে ১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৯ মে। ২০ মে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। আগামী ৫ জুন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।