রক্তে লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তাল্পতা বা অ্যানেমিয়া দেখা দেয়। পুরুষদের মধ্যেও এই রোগ দেখা দিলেও রক্তাল্পতার ঝুঁকি মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এমনকী উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার সমস্যা। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা দেয়।
মূলত দেহে আয়রনের ঘাটতি থাকলে এই রোগ দেখা দেয়। মহিলাদের দেহে প্রতি লিটার রক্তে ১২০ গ্রামের কম হিমোগ্লোবিনের মাত্রা থাকলেই, এটি অ্যানেমিয়া।
মহিলাদের দেহে রক্তাল্পতার উপসর্গ: হিমোগ্লোবিন রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে অক্সিজেন বহন করে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমলে দেহে অক্সিজেনের ঘাটতিও তৈরি হবে। এর জেরে আপনি একটু কাজ করেই হাঁপিয়ে যাবেন। যে কোনও কাজ করতে গেলে আপনার ক্লান্তি বোধ হবে। রক্তাল্পতার সমস্যায় ভুগলে সারাদিন জুড়ে ক্লান্তি থাকে। মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। তার সঙ্গে বিষণ্ণতা বাড়ে। আয়রনের ঘাটতির কারণে অনেক মহিলাই মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
অনেকেই মহিলাই সারাবছর চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। মুঠো-মুঠো চুল পড়তে শুরু করলে প্রসাধনী পরিবর্তনের বদলে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন। দেহে আয়রনের ঘাটতি থাকলে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে। এছাড়া মুখ-চোখ শুকনো দেখায়। রক্তাল্পতার প্রভাবে ত্বক ফ্যাকাশে দেখায়। অনেক সময় হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। এই ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিত্সকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
যে কোনও রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় হলে, সহজেই সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। আর যদি প্রথম থেকে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখেন, তাহলে সহজেই এড়ানো যায় রক্তাল্পতার ঝুঁকি। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে খাবারের উপর জোর দিন। এমন বেশ কয়েকটি খাবার রয়েছে, যা খেয়ে আপনি রক্তাল্পতার ঝুঁকি এড়াতে পারবেন।
যে সব খাবার কমাবে রক্তাল্পতার ঝুঁকি: যে সব ফল ও সবজির মধ্যে ভিটামিন সি রয়েছে, সেগুলো রোজ খান। লেবু জাতীয় ফল, কিউই, আপেল, পেয়ারায় ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এগুলো আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। একইভাবে, টমেটো, ব্রকোলি, বাধাকপি, ফুলকপি খান। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে পালং শাক ও বিটরুট স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া ড্রাই ফ্রুটস রাখুন ডায়েটে। আমন্ড, কাজু, কিশমিশ, খেজুর খান। রক্তাল্পতা থেকে সেরে উঠতে রেট মিট খেতে পারেন। কিন্তু সীমিত পরিমাণে। এছাড়া মুরগির মাংস, মুরগির মেটে, মাছ, ডিম ইত্যাদি খেলে সহজেই রক্তাল্পতার ঝুঁকি কমানো যায়।