০৬ মে ২০২৪, সোমবার, ১১:২৮:০৯ পূর্বাহ্ন


বিবস্ত্র অবস্থায় নীচে পড়েছিলেন স্বপ্নদীপ
সুমাইয়া তাবাস্সুম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৮-২০২৩
বিবস্ত্র অবস্থায় নীচে পড়েছিলেন স্বপ্নদীপ বিবস্ত্র অবস্থায় নীচে পড়েছিলেন স্বপ্নদীপ


তিনতলার বারান্দার নীচেটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। প্রথম বর্ষের তরুণ ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর রক্তাক্ত দেহটা পড়ে রয়েছে। সারা শরীরে একটা সুতো নেই। সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় ছেলেটার দেহ উদ্ধার রতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অধ্যাপক, সহপাঠীরা। কেপিসি হাসপাতাল থেকে স্বপ্নদীপের দেহটা এখন এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভীষিকাময় সেই রাতের ঘটনার পুনর্নিমাণের চেষ্টা করছেন লালবাজারের তদন্তকারী অফিসাররা।

নানা জনে নানা কথা বলছে, কিন্তু বুকফাটা কান্না নিয়ে অধ্যাপকরা বারে বারেই বলে চলেছেন, “একটা ছেলে পড়ে মরে গেল। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।”বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কীভাবে তিনতলার বারান্দা থেকে পড়ে গেলেন স্বপ্নদীপ, তার সঠিক উত্তর নেই কারও কাছে। কেউ বলছেন ঝাঁপ দিয়েছেন স্বপ্নদীপ, কেউ বা বলছেন ভয়ঙ্কর র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন তিনি। তবে বুধবার রাতে এমন কিছু অস্বাভাবিক ঘটেছিল তা মেনে নিচ্ছেন সকলেই। যাদবপুরের শিক্ষক সমিতি জুটা র তরফে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “গভীর দুঃখ ও লজ্জার সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানাচ্ছি, যে গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেলের এ২ (A2) ব্লকে একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রকে ওই ব্লকের নীচে উলঙ্গ এবং অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে সে মারা যায়। জানা গেছে, ঘটনার কিছু আগে সে তার মাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা সকলে শোকস্তব্ধ। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা আমাদের গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।”জুটার দাবি, এই ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাদবপুর শিক্ষক সমিতির  তরফে বলা হয়েছে, অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। নুতন ছাত্রদের আলাদা হোস্টেলে রাখতে হবে ইউজিসি নিয়ম মেনে। অবিলম্বে প্রাক্তন ছাত্র যারা হোস্টেলে বেআইনি ভাবে থাকছে, তাদের হোস্টেল থেকে বের করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরও পড়ুন: ‘খুব চাপে আছি, তোমরা এসো’, বুধবার রাতেই স্বপ্নদীপের শেষ ফোন বাবাকেস্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে নানা তথ্য উঠে আসছে। যাদবপুরের (Jadavpur University Student Death) কয়েকজন পড়ুয়াকে থানায় ডেকে জেরা করেছে পুলিশ। সেই ছাত্রদের নাকি দাবি, স্বপ্নদীপকে সমকামী বলে হেনস্থা করা হচ্ছিল। যদিও এই দাবি কতটা সত্যি, তা পুলিশের তরফেও জানানো হয়নি এখনও। জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতে নাকি অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন স্বপ্নদীপ। বারান্দায় প্রস্রাবও করে দেন তিনি। সিনিয়র দাদারা তাঁকে সামলাতে গেলে বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেন। তবে এই দাবি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। কেন বিবস্ত্র ছিলেন স্বপ্নদীপ? বাংলা পড়তে ভাল লাগছে বলে কিছুদিন আগেই মাকে জানিয়েছিলেন । যে ছাত্র নিজের ইচ্ছেয় ভালবেসে বাংলা পড়তে এসেছিলেন, তিনি কেন অযথা ঝাঁপ দেবেন, তার কোনও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা কারও কাছে নেই।যাদবপুরের বাংলা বিভাগেরই এক অধ্যাপক আব্দুল কাফি বলেছেন, “আমরা মর্মাহত। বুক ফেটে যাচ্ছে। সারা রাত ঘটনাস্থলে ছিলাম। হাসপাতাল থেকে ফিরছি। আর কিছু ভাবতে পারছি না। একটা ছেলে পড়ে মরে গেল, এর চেয়ে দুঃজনক আর কিছু হয় না। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক, সত্যিটা সামনে আসুক, এটাই চাই।” অধ্যাপক আরও বলেন, “কেউই শখ করে ঝাঁপ দেয় না। কাজেই সেদিন কী ঘটেছিল তার সবটা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হোক। তদন্ত প্রক্রিয়া যতটা দূর যেতে পারে যাক। শুধু আমরা চাই, সত্যিটা সামনে আসুক।”বুধবার রাতে মাকে ফোন করে স্বপ্নদীপ বলেছিলেন, “মা খুব ভয় করছে ” মাকে খুব তাড়াতাড়ি তাঁর কাছে যেতে বলেছিলেন। আত্মহত্যার কোনও আভাস সেদিন ছেলের কথায় পাননি মা। শুধু ছেলের কাঁপা গলাই বলে দিচ্ছিল প্রচণ্ড ভয় আর আতঙ্কে আছে সে। কিন্তু এই ভয় কেন? জুনিয়রদের উপর সিনিয়রদের র‍্যাগিং কি মাত্রা ছাড়িয়েছে? সবার চোখের আড়ালে কোন বিভীষিকার শিকার হচ্ছেন নবাগত পড়ুয়ারা? যাদবপুর থেকে পাশ করে যাওয়া কয়েকজন ছাত্র বলছেন, “কলেজ থেকে পাশআউট অনেক ছাত্র হোস্টেলে থেকে যান। বা রাতের দিকে হোস্টেলে এসে তাণ্ডব চালান। পাশআউট যাঁরা চাকরি পাননি, হোস্টেলে থেকে গেছেন তাঁরাই এমন নানা অভব্য আচরণ করেন। হোস্টেল দখল করে দাদাগিরি চালান।” স্বপ্নদীপও কি এমন কিছুরই শিকার হয়েছিলেন? সত্যিটা হয়ত তদন্তের পরেই সামনে আসবে।