বিএনপির ডাকা পদযাত্রা ঘিরে মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির ধাওয়া-পালটাধাওয়া, হামলা ও পালটা হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ১৪টি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত ও বুধবার পুলিশ, কলেজ শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মামলাগুলো করেন। এসব মামলায় বিএনপির সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ৪০ বিএনপি নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঢাকার মিরপুরে বাঙলা কলেজের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মামলায় ১ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৮ জন গ্রেফতার হয়েছে। ফেনীতে বিএনপির দুই হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। পিরোজপুরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির ৩৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বগুড়ায় পুলিশ ও স্থাপনায় হামলা ও বিস্ফোরণের ঘটনায় চারটি মামলায় ২১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জয়পুরহাটে বিএনপির এক হাজার ২৩১ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষ ও কৃষক দল কর্মী সজিব হত্যার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। তবে আসামিদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
কিশোরগঞ্জে বিএনপির ৭০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ সম্পর্কে যুগান্তর প্রতিবেদন, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে ছাত্রলীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে দারুসসালাম থানায় দুটি মামলা হয়েছে। কলেজ শিক্ষার্থী রুবেল হোসেনের মামলায় মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার এজাহারনামীয় ১২০ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অপরদিকে, কলেজের কর্মচারী মহিদুর রহমানের করা মামলায় কলেজে ভাঙচুর ও কলেজের স্টাফদের মারধরের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ১০৯ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ডিএমপির মিরপুর বিভাগের দারুসসালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মফিজুর রহমান পলাশ জানান, দুটি মামলায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর করা মামলায় আটজনকে ও কলেজ কর্মচারীর করা মামলায় ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ফেনী : পদযাত্রায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে মামলা হয়েছে। ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই হায়াত আলী বাদী হয়ে বিএনপির দুই হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলাটি করেন। তবে কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মাফুজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, এজাহারভুক্ত আসামি ৮৮ জন। আর ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার জন অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। মঙ্গলবার শহরের জিরোপয়েন্টে হামলার ঘটনায় ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ও ১০ সাংবাদিকসহ ৫০ জন আহত হন।
পিরোজপুর : পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও আহত করার ঘটনায় জেলা বিএনপির ৩৮০ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সদর থানার উপপরিদর্শক মাকসুদুর রহমানের করা মামলায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন ও সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলুসহ ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার পর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
বগুড়া : পুলিশ ও স্থাপনায় হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং বাস ভাঙচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে সদর থানায় পুলিশ তিনটি ও দুপচাঁচিয়া থানায় বাসচালক একটি মামলা করেছে। এসব মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২১১ নেতাকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর পদযাত্রায় নেতৃত্বদানকারী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক জামায়াত নেতা এবিএম মাজেদুর রহমান জুয়েলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বুধবার বিকালে আদালতে দুজনকে হাজির করে পাঁচ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। দুপচাঁচিয়াতেও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের মধ্যে আরও রয়েছেন-জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, এমআর ইসলাম স্বাধীন, হামিদুল হক চৌধুরী হিরু, কেএম খায়রুল বাশার, সহিদ উন নবী সালাম, খাদেমুল ইসলাম খাদেম, অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলাম, সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন, লাভলী রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, আবু হাসান, নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান, আদিল শাহরিয়ার গোর্কি প্রমুখ।
সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শাহীনুজ্জামান জানান, পুলিশ ও স্থাপনায় হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ১৮৯ জনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদীরা হলেন-বনানী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম, সদর ফাঁড়ির এসআই শহীদুল ইসলাম ও সদর থানার এসআই আবদুল মালেক।
দুপচাঁচিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, সাহারপুকুর বাজার এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকাগামী শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহণের একটি বাসে হামলা চালিয়ে জানালার কাচ ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় বাসের চালক ফেরদাউস মঙ্গলবার রাতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদারসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বুধবার ভোরে আদমদীঘি উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আবু বক্কর, তামিম ও রাজুকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
জয়পুরহাট : রেলগেট এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের করা মামলায় এজাহারনামীয় ২৩১ জন এবং অজ্ঞাত এক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বুধবার সদর থানায় মামলা দুটি করা হয়। এ মামলায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রেলগেট এলাকায় পাথর ও ইট ছুড়ে এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ায় এসআই রুবেল বিএনপির ৮১ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও মারধরের অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেন রাজা মামলা করেন। বিএনপির দেড়শজনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার পর এজাহারভুক্ত আসামি সদর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলীম ও ছাত্রদলের মারজান হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
লক্ষ্মীপুর : ত্রিমুখী সংঘর্ষ-ভাঙচুর ও কৃষক দল নেতা সজিব হোসেন হত্যার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। সজিবের মেজো ভাই সুজন অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন। এছাড়া কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম নুরুল আমিন রাজু তার বাসভবন ও ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেছেন। এছাড়া পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। দুই মামলায় আসামিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
কিশোরগঞ্জ : পুলিশের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা হয়েছে। উপপরিদর্শক ফজলুর রহমান ১৯ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত ৬০-৭০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করেন। এজাহারে জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আবু নাসের সুমন ও জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তারেকুজ্জামান পার্নেলসহ ১৯ জনের নাম রয়েছে। যুগান্তর।