পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যম বান্ধব বলেই তিনি সংবাদমধ্যমকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। যার ফলে সাংবাদিকরা আজ দেশে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম যখন তিনি ক্ষমতায় আসেন তখন দেশে একটি মাত্র সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ছিল, আর বর্তমানে দেশে ৪৩টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। সংবাদমধ্যমের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উদার মনোভাবের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের উডসাইডের গুলশান ট্যারেসে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব (এবিপিসি)-এর নতুন কমিটির নব-নির্বাচিত কর্মকর্তাদের অভিষেক ও পরিচিতি সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে পাঁচশত সংবাদপত্র প্রকাশ হয়ে থাকে। হাজার হাজার মানুষ সংবাদমাধ্যমে কাজ করছেন। তারা হচ্ছেন জাতির চেতনা, জাতির পথ প্রদর্শক। কখনো কোন কোন সংবাদমাধ্যম দেশের অপপ্রচারে লিপ্ত থাকেন। আপনারা অবশ্যই বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন করবেন। আপনারা যদি বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন করেন তাহলে আপনার জাতির জন্য বড় অবদান রাখবেন এবং জাতি অবশ্যই আপনাদের সম্মান দেবে। আর যদি অপপ্রচারে লিপ্ত থাকেন তাহলে আমরা যে সম্মানটুকু দেব বলে আশা করি সেটা থেকে আপনারা বঞ্ছিত হবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন আরও বলে বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তা আজ বাস্তবায়ন হয়েছে। শহর বন্দর গ্রামে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। আপনার দেশে গেলে তা দেখতে পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের উন্নয়নের করার ইচ্ছা ছিল বলেই তা সম্ভব হয়েছে। কারণ ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব (এবিপিসি)-এর নবনির্বাচিত সভাপতি রাশেদ আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাদিয়া খন্দকার ও এবিপিসি'র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শাহ ফারুক রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব (এবিপিসি)-এর নতুন কমিটির নব-নির্বাচিত কর্মকর্তাদের লাল গোলাপ শুভেচ্ছার মাধ্যমে অভিষিক্ত করা হয়। অভিষিক্তরা হলেন এবিপিসি সভাপতি রাশেদ আহমেদ, সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল কাশেম, সহ-সভাপতি সাংবাদিক তপন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-শাহ ফারুক রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক-আজিমউদ্দিন অভি, প্রচার সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, নির্বাহী সদস্য লাবলু আনসার ও কানু দত্ত। সহ-সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক-জামান তপন এবং নির্বাহী সদস্য রাজুব ভৌমিক ব্যক্তিগত কারনে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি জানানো হয়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সংবাদমাধ্যমকে ভালবাসতেন। তিনি নিজেও অনেক ক্ষেত্রে নানাভাবে সংবাদপত্র ও সংবাদপত্রের মালিকদের সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেই নিজের স্ত্রী-সন্তানের খবর নেওয়ার আগেই সাংবাদিকদের খবর নিতে কে কেমন আছেন।
নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটের কন্সাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ কনসুলেটের এসে যোগদান করেছি। এখনও সব সাংবাদিকদের সাথে পরিচয় হবার সুযোগ হয়নি। আপনাদের কনসুলেট সংক্রান্ত কোন কাজ থাকলে সরাসরি অফিসে আসবেন, আমাদের কর্মাকান্ড দেখবেন। আমি এবং আমার দপ্তরের সবাই আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবো।
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল কাশেম শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, সাংবাদিকতাকে সারা বিশ্বে ‘ফোর্থ স্টেট’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। সংবাদপত্র হল রাষ্ট্রের দর্পণ। আর সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক। সাংবাদিকতাকে বলা হয় নির্মাণ বা ধ্বংসের গদ্য। সাংবাদিকতা জাতির চিন্তা-চেতনার শৈলী ও সুপ্ত মনমানসিকতা সৃষ্টিতে বা বিনাশে কতটুকু ভূমিকা পালন করে, তা কোনো বুদ্ধিমান, সচেতন ও বিবেকসম্পন্ন মানুষের কাছে অস্পষ্ট নয়। মানবতার অতন্দ্র প্রহরী সৎ সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির শেষ ভরসা। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা জাতির জাগ্রত বিবেক এবং পাঠকরাই হচ্ছেন তার প্রাণশক্তি। তাই, সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ নিজেদের সামান্য স্বার্থে এই মহৎ পেশাকে ভুলন্ঠিত না করে আপসহীন সাংবাদিকতার পাশাপাশি দেশ ও প্রবাসের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে লেখালেখি করে জনগণের হৃদয়ে স্থান লাভ করুন।
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান নির্বাহী সদস্য লাবলু আনসার নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ভবনের জন্য জমি ক্রয়ের দাবি জানিয়ে বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ভবনের জন্য জমি ক্রয় করে তার আঙ্গিনায় একটি স্থায়ী শহিদ মিনার তৈরির বন্দোবস্ত করা হলে প্রবাসীরা বছরের একটি মাত্র দিন একুশে ফেব্রুয়ারিতে স্বাচ্ছন্দে দেশীয় আমেজে প্রভাতফেরি করতে পারবেন। আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহন করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের অভিষেক অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সভাপতি রাশেদ আহমেদ, সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল কাশেম, নির্বাহী সদস্য লাবলু আনসার, জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেন, ওয়াশিংটন ডিসি'র বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূতের পক্ষে প্রেস মিনিস্টার এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন, নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসুলেটের কন্সাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী ও কন্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, চ্যানেল আই'র পরিচালক জহির উদ্দিন মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, এবিপিসি'র নির্বাচন কমিশনার পপি চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, পেনসিলভানিয়া মেলবোর্ণের বাংলাদেশি মেয়র মাহবুবুল আলম তৈয়ব, কাউন্সিলম্যান মোশারফ হোসেন, কবি ফকির ইলিয়াস, যুক্তরাষ্ট্রস্থ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়া, জেবিবিএ'এ সাধারন সম্পাদক কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ফাহাদ সোলায়মান ও জেবিবিএ নেতা মাহবুবুর রহমান টুকু প্রমুখ।
সভার শুরুতেই মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে নিহত শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনসহ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কন্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় ও শহীদ হাসান, শাহ মাহবুব, তনিমা হাদী ও সবিতা দাস। এছাড়াও স্থানীয় শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।
রাজশাহীর সময় /এএইচ