রবিবারই বেলারুস সীমান্তের চেরনোবিল সংলগ্ন প্রিপয়াত নদীর ধারে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে ইউক্রেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ কি শেষমেশ পরমাণু যুদ্ধের দিকে গড়াতে চলল? মস্কোর আকাশে তেমনই আশঙ্কার কালো মেঘ। কারণ রবিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর দেশের পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধী দলকে (ডেটারেন্স ফোর্সেস) ‘হাই অ্যালার্ট’-এ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমী দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে চরম শত্রুতামূলক আচরণ করছে। এ দিকে এই খবর যখন আশঙ্কার ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিচ্ছে, ঠিক তখনই জানা গেল, বেলারুস সীমান্তে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বসার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে ইউক্রেন। স্বভাবতই পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনার মধ্যে এই খবরে আপাত স্বস্তি বিশ্বে।
রবিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘‘আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানকে রুশ সেনার পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধী বাহিনীকে ‘হাই অ্যালার্ট’-এ রাখার নির্দেশ দিয়েছি।’’ কিন্তু কেন? তার জবাবও দিয়েছেন পুতিন। তাঁর দাবি, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিম দুনিয়া একের পর এক শত্রুতামূলক পদক্ষেপ করে চলেছে। তারই পাল্টা ‘ডেটারেন্স ফোর্সেস’-কে তৈরি থাকার নির্দেশ।
প্রায় একই সময় ঘটেছে আরও একটি উল্লেখজনক ঘটনা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্স্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর। দু’জনের মধ্যে ফোনালাপের পর জানা গিয়েছে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি। সূত্রের খবর, বেলারুশ সীমান্তে চেরনোবিল সংলগ্ন প্রিপয়াত নদীর ধারে কোনও এক জায়গায় বিবদমান দুই দেশ আলোচনায় বসবে বলে আপাতত স্থির হয়েছে।
এ দিকে ইউক্রেনে রবিবারও চলছে রুশ সেনার সঙ্গে ইউক্রেনের সেনার রক্তক্ষয়ী লড়াই। ইউক্রেনের বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে রাশিয়াকে। যা তাদের কাছেও খানিক অপ্রত্যাশিত। কিভের রাস্তায় লড়াই চলছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের পুরো দখল এখনও নিজেদের হাতেই রাখতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেন সেনা। রবিবার দুপুর পর্যন্ত রাস্তায় লড়াইয়ের পর সাময়িক পিছু হঠেছে রুশ সেনা। স্থানীয় গভর্নর বলেছেন, ‘‘খারকিভ সম্পূর্ণ ভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পরমাণু প্রতিরোধী দলকে তৈরি থাকার নির্দেশ কেন, এই প্রশ্ন উঠছে। তা হলে কি অপ্রত্যাশিত ভাবে ইউক্রেনে বাধার মুখে পড়েই পরমাণু-ভাবনার উদয় হল পুতিনের মনে? অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, সম্প্রতি ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন ‘সুইফট’ নেটওয়ার্ক থেকে রাশিয়ার ব্যাঙ্কগুলোকে বাদ দেওয়া শুরু করেছে। ‘সুইফট’ থেকে বাদ যাওয়ার অর্থ হল, রাশিয়ার ব্যাঙ্কের পক্ষে বিদেশি লেনদেন সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ। পাশাপাশি রয়েছে পশ্চিমী দুনিয়ার দেশগুলোর চাপানো ধারাবাহিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। তা হলে যুদ্ধের খরচ উঠবে কী করে? পশ্চিমের দেশগুলোর এমন একতরফা নিষেধাজ্ঞায় ক্রমশ চাপ বাড়ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের উপর, ‘ডেটারেন্স ফোর্সেস’-কে ‘হাই অ্যালার্টে’ পাঠানোর নির্দেশ সে দিকেই ইঙ্গিত করে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একটি অংশ।
রাজশাহীর সময় / এম আর